Taras Shevchenko

যাদবপুর যোগে ইউক্রেন-গাথা বঙ্গকন‍্যার

‘যে দিন উক্রাইন হতে নির্গত/ বিষাক্ত যত শত্রু শোণিত/ হবে নীল সাগরে বিসর্জিত …তার আগে আমি জানি না/ মানি না, ঈশ্বর তত দিন’!

ঋজু বসু

শেষ আপডেট: ১৪ মার্চ ২০২৫ ০৯:৪৪
Share:
রুশ হামলার পরে ইউক্রেনের গ্রামের একটি পাঠাগারে ঝুলছে তারাস শেভচেঙ্কোর ছবি।

রুশ হামলার পরে ইউক্রেনের গ্রামের একটি পাঠাগারে ঝুলছে তারাস শেভচেঙ্কোর ছবি। ছবি: সংগৃহীত।

ইউক্রেনের মহা চারণকবি (কবজ়ার) তারাস শেভচেঙ্কোর কিছু কবিতা বা তাঁর বিখ‍্যাত বইয়ের পকেট সংস্করণ নিয়ে এখনও যুদ্ধে যাচ্ছেন সৈনিকেরা। তাঁর কিছু কবিতা পড়ে মনে হয়, কালই তা লিখেছেন উনিশ শতকের কবি।

‘যে দিন উক্রাইন হতে নির্গত/ বিষাক্ত যত শত্রু শোণিত/ হবে নীল সাগরে বিসর্জিত …তার আগে আমি জানি না/ মানি না, ঈশ্বর তত দিন’!

শেভচেঙ্কোর সব চেয়ে বিখ‍্যাত কবিতা ‘ইচ্ছাপত্র’ (জাপোভিত বা দ‍্য টেস্টামেন্ট)-এর পংক্তি ক’টা পড়তে পড়তে চমৎকৃত হয়েছিলেন যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয় প্রকাশনার অধিকর্তা, ইংরেজির মাস্টারমশাই অভিজিৎ গুপ্ত। তিনি বলছিলেন, “শেভচেঙ্কো মারা গিয়েছেন ১৮৬১-তে। কিন্তু কবিতাগুলো এত প্রাসঙ্গিক! আর আমরা এত দিন পোল‍্যান্ড ছাড়া পূর্ব ইউরোপের সাহিত‍্য ভাষান্তরের কাজ ততটা পারিনি।”

তিন দশকের বেশি ইউক্রেনবাসী, বঙ্গকন‍্যা মৃদুলা ঘোষ ন‍্যাশনাল ইউনিভার্সিটি অব কিভ-মোহিলা অ‍্যাকাডেমির আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ‍্যাপিকা। যুদ্ধধ্বস্ত কিভে ড্রোন হানার সঙ্কেতে আকছার মাটির নীচের আশ্রয়ে বিনিদ্র রাত কাটাতে হয়। সেখানেই
যাদবপুরের জন‍্য কবিতা তর্জমার কাজ করেছেন মৃদুলা। গত ৯ মার্চ শেভচেঙ্কোর ২১১ বছরের জন্মদিনে বইটি প্রকাশ করেন যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয় প্রকাশনা কর্তৃপক্ষ।

শেভচেঙ্কোর ১৫০ বছরের জন্মদিনে কিভে বক্তৃতা দিয়েছিলেন সুনীতিকুমার চট্টোপাধ‍্যায়। সুনীতিকুমারের ব‍্যবহৃত উক্রাইন বা উক্রাইনা শব্দটিই তাঁর বইয়ে রেখেছেন মৃদুলা। ভূমিদাসের পুত্র থেকে মহাকবি হয়ে ওঠা শেভচেঙ্কোর রোমাঞ্চকর জীবন নিয়ে নাটক লেখেন মন্মথ রায়। অরুণ সোম, বাংলাদেশের গোলাম কুদ্দুস প্রমুখের হাতেও ভাষান্তরিত শেভচেঙ্কো। মৃদুলা রুশ, উক্রাইনি, বালগেরিয়ান-সহ পুব ইউরোপের নানা ভাষা জানেন। মূল উক্রাইনি থেকে তর্জমার জন্যই শেভচেঙ্কো নিয়ে তাঁর প্রস্তাব মনে ধরে যাদবপুরের প্রকাশনার। বইটিতে ইউক্রেনের প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি ভিক্তর এ ইয়ুশচেঙ্কোর বার্তা, ‘শেভচেঙ্কোর কবিতা ইউক্রেনের আত্মার দলিল।’ ইউক্রেনের রুশ উপনিবেশ-বিরোধী লড়াইয়ের সময়ে এ কাজের জন‍্য আপ্লুত তিনি।

জন্মসূত্রে রুশ ভূস্বামীর ভূমিদাস শেভচেঙ্কো। ৪৭ বছরের ছোট্ট জীবন। অনেকটা সময় রুশ জ়ারের হাতে বন্দি। ছবি আঁকায় তাঁর প্রতিভার জন‍্য শিল্পী, সাহিত‍্যিক বন্ধুরা শেভচেঙ্কোর দাসত্ব মুক্তির টাকা জোগাড় করেন। বিভিন্ন সাম্রাজ্যবাদী শাসকের অধীন ইউক্রেনের শোষণের বিরুদ্ধে কবিতা লিখে শাসকের বিরাগভাজন হন শেভচেঙ্কো। বন্দিদশায় কবিতা লিখে বুটের ফাঁকে লুকিয়ে রাখতেন। জ়ারের আমলে নিষিদ্ধ স্বর ছিলেন শেভচেঙ্কো। আবার, ভূমিদাসের সন্তান বলে সোভিয়েট জমানায় রুশরা তাঁকে আত্মসাৎ করতে চান, মনে করেন মৃদুলা। এখন ইউক্রেনের ‘জাতীয় কবি’ ছেয়ে আছেন দেশের জনপ্রিয় সংস্কৃতিতেও।

লিভিভ শহরে শেভচেঙ্কোর মূর্তির সামনে মৃদুলা ঘোষ ও তাঁর ভাইঝি।

লিভিভ শহরে শেভচেঙ্কোর মূর্তির সামনে মৃদুলা ঘোষ ও তাঁর ভাইঝি। ছবি: সংগৃহীত।

রুশ-ইউক্রেন যুদ্ধ অনেকে রুশ উপনিবেশের সাংস্কৃতিক আগ্রাসন হিসাবেও দেখেন। উক্রাইনি ভাষায় বহু বার নিষেধাজ্ঞা চাপান রুশেরা। মৃদুলা বলছিলেন, “শেভচেঙ্কো স্পষ্টতই উক্রাইনি আত্মমর্যাদার প্রতীক।” শেভচেঙ্কোর প্রাসঙ্গিকতা নিয়ে একটি দীর্ঘ প্রবন্ধ এবং প্রতিটি কবিতার প্রেক্ষাপট রয়েছে বইটিতে। সঙ্গে শেভচেঙ্কোর আঁকা কিছু ছবি। ইউক্রেন সরকারের সঙ্গে গাঁটছড়ায়, মৃদুলার তর্জমায় ইউক্রেনের অন্য কবিদের নিয়েও কিছু কাজ করতে পারেন যাদবপুরের প্রকাশনা কর্তৃপক্ষ।

বন্দি শেভচেঙ্কোর দেশে ফেরার আকুতি, ভূমিদাস ভাই-বোনেদের জন‍্য মমতা, বন্দিদশায় বার বার ভেঙে যাওয়া প্রেমের সম্পর্ক— সবই উঠে এসেছে এ বইয়ের সঙ্কলিত কবিতায়। যা ব‍্যক্তিগত হয়েও আদ‍্যন্ত রাজনৈতিক।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন

এটি একটি প্রিমিয়াম খবর…

  • প্রতিদিন ২০০’রও বেশি এমন প্রিমিয়াম খবর

  • সঙ্গে আনন্দবাজার পত্রিকার ই -পেপার পড়ার সুযোগ

  • সময়মতো পড়ুন, ‘সেভ আর্টিকল-এ ক্লিক করে

সাবস্ক্রাইব করুন