ভাইরাল হয়েছে এই ভিডিয়ো।
প্রকাশ্যে শৌচ করতে বসায় গণপিটুনিতে মৃত্যু হয়েছে বছর চব্বিশের এক দলিত যুবকের। ১২ ফেব্রুয়ারি, চেন্নাইয়ের দক্ষিণে ভিল্লুপুরম শহরের ঘটনা। ভাইরাল হওয়া মারধরের ভিডিয়ো ফুটেজের ভিত্তিতে তিন মহিলা-সহ সাত জনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ।
পুলিশ ও পারিবারিক সূত্রে জানা গিয়েছে, ভিল্লুপুরমের কাছে একটি পেট্রল পাম্পে কাজ করতেন আর শক্তিভেল নামে ওই যুবক। তিনি একটু দূরের করাল গ্রামের বাসিন্দা। বুধবার কাজে যাওয়ার পথে প্রকৃতির ডাকে সাড়া দিতে একটি জমির ধারেই বসে পড়েছিলেন। সেই জমিটি এক ‘উচ্চবর্গীয়ের’। ঘটনাক্রমে, সে দিন শক্তিভেলের সঙ্গে তাঁর আধার কার্ড ছিল। শক্তিভেলের দিদি, ২৬ বছর বয়সি আর থেইভানাইয়ের অভিযোগ, আধারে জাতি পরিচয় দেখেই শক্তিভেলকে পেটাতে শুরু করে ‘উঁচু জাতের’ বেশ কয়েক জন মহিলা-পুরুষ। তবে এই মহিলাদের পাল্টা দাবি, শক্তিভেল নগ্ন হয়ে তাদের দিকে অশালীন ইঙ্গিত করছিলেন। তাই তাঁকে মারধর করা হয়।
থেইভানাই জানিয়েছেন, ঘটনার দিন, গত বুধবার ভোরে রাতের ডিউটি সেরে বাড়ি ফিরেছিলেন শক্তিভেল। কিছু ক্ষণ পরে তাঁর এক সহকর্মী ফোন করে শক্তিভেলকে আধার কার্ড ও ছবি নিয়ে পেট্রল পাম্পে আসতে বলেন। তাই সে দিন পরিচয়পত্র শক্তিভেলের সঙ্গে ছিল। রাস্তায় তাঁর মোটরবাইকের তেল শেষ হয়ে যায়। মোটরবাইক ঠেলতে ঠেলতে হাঁটছিলেন তিনি। হঠাৎ পেট ব্যথা করায় সেখানেই বসে পড়েন। তারপরেই তাঁর উপর চড়াও হয় স্থানীয়েরা। শক্তিভেলের ফোন থেকেই এক জন তাঁর দিদিকে জানায় যে, শক্তিভেলকে তারা বেঁধে রেখেছে।
খবর পেয়ে ছ’মাসের সন্তানকে নিয়েই এক আত্মীয়ের মোটরবাইকে করে পৌঁছন থেইভানাই। দেখেন নাক-মুখ দিয়ে রক্ত বেরোচ্ছে ভাইয়ের। তখনও ২০-২৫ জন তাঁকে মেরেই চলেছে। আটকানোর চেষ্টা করলে থেইভানাইকেও লাথি মারা হয়। হাত থেকে পড়ে যায় শিশুটি। থেইভানাই বলেন, ‘‘ওই রক্তাক্ত অবস্থাতেই ভাই ইশারা করে সরে যেতে বলছিল।’’
মারধর শুরুর প্রায় ঘণ্টা দু’য়েক পরে পুলিশ পৌঁছয়। অভিযোগ, শক্তিভেলকে হাসপাতালে পাঠানোর ব্যবস্থা করা তো দূর, থেইভানাই-শক্তিভেলকে বাড়ি ফিরে যেতে বলে তারা। খবর পেয়ে করাল গ্রামের আরও কয়েক জন ঘটনাস্থলে পৌঁছন। তাঁদের সাহায্যে ভাইকে নিয়ে মোটরবাইকে চেপে বাড়ি ফেরেন থেইভানাই। ভেবেছিলেন, টাকা নিয়ে হাসপাতালে যাবেন তাঁরা। বাড়িতে ফিরে মোটরবাইক থেকে শক্তিভেলকে নামাতে গেলে তিনি মাটিতে পড়ে যান। থেইভানাইয়ের কথায়, ‘‘তখনও বুঝতে পারিনি, ভাই আর নেই।’’ হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসকেরা মৃত ঘোষণা করেন। ঘটনার ভিডিয়ো ভাইরাল হওয়ার পরে পুলিশ তিন মহিলা-সহ ৭ জনকে গ্রেফতার করছে।