শুরু হয়ে গেল ১৫ থেকে ১৮ বছর বয়সিদের কোভ্যাক্সিন দেওয়ার কর্মসূচি। সোমবার আমদাবাদে। ছবি— রয়টার্স।
প্রতিষেধক নেওয়ার প্রশ্নে বড়দের সঙ্গে দৌড়ে পিছিয়ে থাকতে চাইছে না ছোটরাও। উল্টে বড়দের এবং সমবয়সিদের উদ্দেশে তাদের বার্তা, যারা নাওনি, নিয়ে নাও। এতে করোনা হলেও ক্ষতি কম হবে।
পরিবারের বাকিদের মতো কবে টিকা নিতে পারবে সেই দিনটির ইপেক্ষায় ছিল বছর ষোলোর সাই কুমার। আজ প্রথম দিনই তাই বাবা-মাকে সঙ্গে নিয়ে টিকা নিতে রামমনোহর লোহিয়া হাসপাতালে ছুটে এসেছিল সাই।
বিজেপির দিল্লিতে ডাকা চাক্কা জ্যাম অভিযানকে পাত্তা না দিয়ে প্রায় পনেরো কিলোমিটার দূরের বৈশালী থেকে টিকা নিতে এসেছে একাদশের বিজ্ঞান বিভাগের ওই ছাত্র। তখনও টিকা নেওয়া হয়নি। লাইনে অপেক্ষারত সাই বেশ টেনশনে। দিল্লির শীতের সকালেও মাঝে মাঝেই উদ্বেগের চোটে মুখের ঘাম মুছে নিচ্ছিল সাই। বলল, ‘‘অনেকের শুনেছি টিকা নেওয়ার পরে শরীর খারাপ হয়। তাই একটু উদ্বেগে আছি।’’ বাবা-মা, দিদির টিকা নেওয়া হয়ে গিয়েছে আগেই। কিন্তু তা সত্ত্বেও দ্বিতীয় ঢেউয়ের শিকার হয়েছিলেন বাবা। সাইয়ের মতে, ‘‘টিকা নেওয়া ছিল বলে বেশি গুরুতর কিছু হয়নি। তাই আমি একেবারে প্রথম দিনেই টিকা নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম। টিকা নেওয়া থাকলে অন্তত করোনা বেশি প্রভাব ফেলতে পারবে না।’’
টিকা প্রসঙ্গে একই বার্তা দশম শ্রেণির দীপিকা নায়েকের। দিল্লির পাহাড়গঞ্জে যৌথ পরিবারে কনিষ্ঠ সদস্য সে। বাড়ির বয়স্কদের সকলের টিকা নেওয়া হয়ে গিয়েছে। একমাত্র বাকি ছিল সে। নিয়মিত কুইজ় অনুষ্ঠানে যোগ দেওয়া দীপিকা সময় পেলেই খবর শোনে। তাঁর কথায়, ‘‘খবরে শুনেছি টিকা নেওয়া থাকলে করোনায় হাসপাতালে যাওয়া বা মৃত্যুর সম্ভাবনা কম। সেই কারণেই আজ প্রথম দিনেই টিকা নিতে এসেছি। তা ছাড়া ওমিক্রনের কারণে তৃতীয় ঢেউ আসার আগে টিকা নিয়ে নিজেকে সুরক্ষিত রাখাই ভাল।’’
ছোটদের ক্ষেত্রে কেবল কোভ্যাক্সিন প্রতিষেধককে বেছে নিয়েছে কেন্দ্র। দীপিকা শুনেছে কোভ্যাক্সিনকে নিয়ে অনেক বিতর্ক রয়েছে। তাঁর কথায়, ‘‘বড়দের টিকা নেওয়ার প্রশ্নে বিকল্প রয়েছে। আমাদের থাকলে ভাল হত।’’ অবশ্য এমন কোনও বিকল্প প্রতিষেধক বাজারে আসার আশু সম্ভাবনা দেখছে না স্বাস্থ্য মন্ত্রক।
ব্যক্তিগত ভাবে টিকা নেওয়ার পাশাপাশি মোতিবাগের সিনিয়র সেকেন্ডারি স্কুলের নবম শ্রেণির ছাত্রদের টিকাকরণে নিয়ে এসেছিলেন স্কুল কর্তৃপক্ষ। শ্রেণিতে মোট ২৭ জন ছাত্র। স্কুলের ছাত্র অনুরাগ টিকা পাবে বলে বেশ উত্তেজিত। তাঁর কথায়, ‘‘কবে থেকে নেব বলে অপেক্ষায় ছিলাম। অবশেষে আমাদের পালা এসেছে।’’
অনুরাগ, সাই কিংবা দীপিকার বক্তব্য, তাদের অনেক বন্ধুই টিকা নিতে আগ্রহী নন। পরিচিত অনেক প্রাপ্তবয়স্ক টিকা নেননি বলেও দেখেছে তারা। তাদের মতে, অনেক ক্ষেত্রে সঠিক তথ্যের অভাবে মানুষের মধ্যে ভুল ধারণা তৈরি হয়। সেই কারণে অনেকে নিচ্ছেন না। ছোটদের দেখে অন্তত বড়দের টিকা নিতে এগিয়ে আসা উচিত বলেই মত তিন জনের। লোহিয়া হাসপাতালের টিকাকরণের দায়িত্বে থাকা নার্সিং স্টাফ রীতু মলহোত্র জানান, ‘‘ফি দিন দুশো জনের টিকাদানের যে লক্ষ্য রাখা হয়েছে তা প্রথম দিনে অনায়াসে পেরিয়ে যাব। আগামী দিনগুলিরও স্লট প্রায় ভর্তি। ছোটদের মধ্যে অনেকে প্রথমে একটু উদ্বিগ্ন ছিল। প্রয়োজনে কাউন্সেলিং করা হয়েছে। আজ দুপুর পর্যন্ত টিকা নেওয়ার পরে কারও অসুস্থ হওয়ার কোনও তথ্য নেই।’’
ছোটদের প্রথম দিনের উৎসাহ দেখে খুশি স্বাস্থ্য কর্তারা। রাতে স্বাস্থ্য মন্ত্রক জানিয়েছে, প্রথম দিনেই টিকা নিয়েছে প্রায় ৪১ লক্ষের বেশি কিশোর-কিশোরী।