মিলন মিশ্র। এ ভাবেই ৪০ কিমি যাতায়াত করেন তিনি।
সঙ্গী বলতে একটি লাঠি। আর একটি সাইকেল। আর এ ভাবেই প্রতিবন্ধকতাকে হারিয়ে রোজ ৪০ কিলোমিটার সাইকেল চালিয়ে বাচ্চাদের পড়াতে যান তিনি। গরিব, অসহায় কচিকাঁচাদের অনুপ্রেরণার সেই মানুষটির নাম মিলন মিশ্র।
উত্তরপ্রদেশের সীতাপুরের ব্রহ্মওয়ালি গ্রামের বাসিন্দা মিলন। একটি পা অকেজো। কিন্তু সেই প্রতিবন্ধকতা তাঁকে হার মানাতে পারেনি। এক সাক্ষাৎকারে মিলন বলেছেন, “বাড়ি থেকে স্কুল ছ’কিমি দূরে ছিল। অকেজো পা নিয়ে অত দূর যাওয়া খুবই কষ্টসাধ্য ছিল। কিন্তু কখনওই কারও মুখাপেক্ষী হতে চাইনি। তাই শারীরিক প্রতিবন্ধকতা আমার কাছে কখনওই বাধা হয়ে দাঁড়াতে পারেনি।”
স্কুলের বেতন দেওয়ার মতোও টাকা ছিল না নিম্নবিত্ত পরিবার থেকে উঠে আসা মিলনের। কিন্তু নিজেকে উচ্চশিক্ষিত করার লড়াই থামাতে চাননি। একই সঙ্গে গ্রাম এবং তার আশপাশের এলাকায় অসহায়, গরিব ছাত্রদের বিনামূল্যে পড়ানোর সিদ্ধান্ত নেন।
লাঠিতে ভর করে ৪০ কিলোমিটার সাইকেল চালিয়ে নিত্যদিন গরিব ছেলেমেয়েদের পড়াতে যান মিলন। তাঁর কথায়, “অর্থের অভাব যে ভাবে আমার পড়শোনায় প্রতিবন্ধকতা হয়ে দাঁড়িয়েছিল আর কেউ সেই প্রতিবন্ধকতার মুখে পড়ুক, চাইনি।” সরকার তাঁকে অনেক সুবিধা দিতে চেয়েছিল। কিন্তু তা নিতে চাননি তিনি। তাঁকে ট্রাইসাইকেল দিতে চাওয়া হয়েছিল, সেই প্রস্তাবও ফিরিয়েছেন। তাঁর কথায়, “আমি কারও মুখাপেক্ষী হতে চাই না। সে কারণে বাবার সাইকেল নিয়েই যাতায়াত করি।”
মিলনের এক ছাত্রী রোশনী দেবী বলেন, “আমি পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত মিলন স্যরের কাছেই পড়তাম। যদি ওঁর ক্লাসে না যেতাম তা হলে হয়তো স্কুল থেকেই আমার নাম কেটে দেওয়া হত।” তিনি আরও বলেন, “মিলন স্যর শুধু শিক্ষা বিতরণ করেন, এমন নয়। তিনি তাঁর পড়ুয়াদের কাছে অনুপ্রেরণা।”