বেঙ্গালুরুর ১০০ একর এলাকা জুড়ে রাচেনাহাল্লি লেক। ঠিক মহাত্মা গাঁধী ইনস্টিটিউট অব রুরাল এনার্জি অ্যান্ড ডেভেলপমেন্টের পাশেই। এক সময়ে এই বিশালাকার হ্রদ আবর্জনার স্তূপ হয়ে উঠেছিল। আশেপাশের বাড়ি-অফিসের যাবতীয় আবর্জনা ফেলা হত এই হ্রদে। তাছাড়াও, আগাছা ও জঙ্গলে ভরে গিয়েছিল লেক ও তার সন্নিহিত এলাকা।
লেকের পাশে মহাত্মা গাঁধী ইনস্টিটিউট অব রুরাল এনার্জি অ্যান্ড ডেভেলপমেন্টের অফিসেই কাজ করতেন শোভা আনন্দ রেড্ডি। লেকের এই দুর্দশা তাঁকে বিচলিত করে। হ্রদের সংস্কারে হাত লাগান তিনি। তাঁর পাঁচ বছরের চেষ্টাতেই লেকের চেহারায় আমূল বদল। সুন্দর গাছপালা দিয়ে ঘেরা ঝকঝকে স্থানে পরিণত হয়েছে রাচেনাহাল্লি লেক ও তার আশপাশ।
আগে যেখানে পাশ দিয়ে যাওয়ার সময় নাকে রুমাল চাপা দিতে হতো, এখন এখানে রোজ ৮০০ মানুষ হাঁটতে আসেন। সপ্তাহান্তে সেই সংখ্যা হাজার ছাড়িয়ে যায়।
শোভা আনন্এদ রেড্ডির এই অভিযান শুরু হয়েছিল ২০১৪ সালের ১৮ সেপ্টেম্বর। ওই দিন 'বিশ্ব বাঁশ দিবস'। মহাত্মা গাঁধী ইনস্টিটিউট অব রুরাল এনার্জি অ্যান্ড ডেভেলপমেন্টে কাজ করার সময় প্রথমে ওই দিনে বাঁশের চারা লাগানোর নির্দেশ আসে তাঁর কাছে। কোথায় চারা লাগাবেন, তার জায়গা খুঁজতে গিয়েই এই লেকের কথা মাথায় আসে তাঁর।
কিন্তু লেকের অবস্থা এতটাই বেহাল ছিল যে, কোথা থেকে যে শুরু করবেন বুঝতেই পারেননি শোভা আনন্দ। সেই সঙ্গে এই কাজে সাহায্য করার জন্য লোকজনও পাননি। অতএব একলা চলো রে। একদিন নিজেই সকাল সকাল লেকের পাশ থেকে আবর্জনা সরাতে শুরু করে দেন শোভা। জঙ্গল সাফ করতে শুরু করে দেন।
প্রথমে তাঁকে দেখে বেশ কিছু লোক অনুপ্রাণিত হন এবং তাঁরাও তাঁর সঙ্গে লেক সাফাইয়ে হাত লাগান। কিন্তু এত বড় হ্রদ ওই সামান্য় কয়েকজন মানুষের পক্ষে পরিষ্কার করা সম্ভব হচ্ছিল না। যেটুকু পরিষ্কার করা হত, পরদিন সেখানেও আবর্জনা ফেলে দিয়ে যেতেন এলাকার মানুষ।
উপায়ান্তর না দেখে শোভা স্থানীয় স্কুলের পড়ুয়া এবং সাধারণ মানুষকে জড়ো করে এই বিষয়ে সচেতন করতে শুরু করেন। ফল পাওয়া যায় দ্রুত। প্রচুর তরুণ-তরুণীরা তাঁর সঙ্গে হাতে হাত লাগিয়ে কাজ করতে শুরু করেন। কিন্তু তাতেও যে খুব সুবিধে হচ্ছিল, এমন নয়।
শোভা রেড্ডি তাই বেঙ্গালুরুর সমস্ত সরকারি অফিসে যোগাযোগ শুরু করেন। প্রথমে নিরাশই হতে হয়েছিল তাঁকে। কিন্তু পরে তাঁর জেদেরই জয় হয়। অফিস থেকে লেকের সৌন্দর্যায়ণের জন্য অনুদান সংগ্রহ করতে সমর্থ হন তিনি। গ্রামের কয়েকজন তরুণ-তরুণীকে নিয়ে জলমিত্র ট্রাস্ট গঠন করেন শোভা।
এবং সেই জলমিত্র ট্রাস্টের সদস্যদের সাহায্যে মাত্র পাঁচ বছরে ভোল বদলে যায় ওই লেকের। এর মধ্যে মহাত্মা গাঁধী ইনস্টিটিউট অব রুরাল এনার্জি অ্যান্ড ডেভেলপমেন্টের চাকরি থেকেও ইস্তফা দেন শোভা। পরিবেশ রক্ষাই এখন তাঁর জীবনের ব্রত।
যে জলমিত্র ট্রাস্ট শুরু হয়েছিল মাত্র আট জন সদস্য নিয়ে, তার সদস্য সংখ্যা এই মুহূর্তে ৮০০। কী ভাবে পরিবেশ রক্ষা করতে হবে, নিজে হাতে তার পাঠ সদস্যদের দেন শোভা আনন্দ রেড্ডি।