আদানি বিতর্কের পর শেয়ার বাজারের সুরক্ষা মাপতে কমিটি তৈরি করল সুুপ্রিম কোর্ট। ফাইল চিত্র।
আমেরিকার গবেষণা সংস্থা হিন্ডেনবার্গের রিপোর্টের পরেই আদানি গোষ্ঠীর শেয়ারে ধস নামে। হিন্ডেনবার্গ গৌতম আদানির মালিকানাধীন শিল্পগোষ্ঠীর বিরুদ্ধে শেয়ারে কারচুপির অভিযোগ তোলে। বহু বিনিয়োগকারী আদানির শেয়ার থেকে টাকা তুলে নিতে শুরু করেন। এই নিয়ে দু’টি মামলা দায়ের হয় সুপ্রিম কোর্টে। বিনিয়োগকারীদের আস্থার বিষয়টি খতিয়ে দেখার জন্য বৃহস্পতিবার একটি কমিটি গঠন করে শীর্ষ আদালত। শেয়ার বাজারে ‘অনিয়মের’ অভিযোগটি খতিয়ে দেখার নির্দেশ দেওয়া হয় সেবিকে।
শেয়ার বাজারে নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা খতিয়ে দেখা এবং প্রয়োজনীয় সংস্কার সাধনের উদ্দেশ্যে সুপ্রিম কোর্ট বিশেষজ্ঞ কমিটি তৈরি করেছে। অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি এএম সাপ্রের নেতৃত্বে ওমপ্রকাশ ভট্ট, বিচারপতি জেপি দেবদত্ত, কেভি কামাথ, নন্দন নিলেকানি এবং সোমাশেখর সুন্দারেশনের কমিটি শেয়ার বাজারের নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা খতিয়ে দেখবেন। বাজারে তৈরি হওয়া অনিশ্চয়তা থেকে ভারতীয় বিনিয়োগকারীদের স্বার্থ রক্ষা করা দরকার বলে মনে করেছে আদালত। আদালতের পর্যবেক্ষণ ছিল, বিপজ্জনক পরিস্থিতি থেকে বাঁচাতে নিয়ন্ত্রক কাঠামোর যথাযথ মূল্যায়ন এবং বিনিয়োগকারীদের স্বার্থে নিয়ন্ত্রণ প্রক্রিয়া জোরদার করা প্রয়োজন। তাই এ বিষয়ে অভিজ্ঞদের কমিটির সদস্য করে দেশের বিনিয়োগকারীদের ভরসা জোগাতে চাইছে শীর্ষ আদালত।
তদন্ত কমিটির অন্যতম সদস্য ওমপ্রসাদ ২০০৬ থেকে ২০১১ সাল পর্যন্ত স্টেট ব্যাঙ্কের চেয়ারম্যান ছিলেন। ব্যাঙ্কিং ব্যবস্থার সঙ্গে যুক্ত অনেকে বলে থাকেন, এ সময় একাধিক প্রতিকূলতার মুখে পড়েছিল রাষ্ট্রায়ত্ত এই ব্যাঙ্কটি। কড়া হাতে তার মোকাবিলা করার কৃতিত্ব তাঁরা ওমপ্রসাদকেই দিয়ে থাকেন। সর্বভারতীয় ব্যাঙ্ক সংগঠনের প্রাক্তন সভাপতি ওমপ্রকাশ বর্তমানে একাধিক বহুজাতিক সংস্থার ডিরেক্টর এবং পরামর্শদাতা হিসাবে কাজ করেন। কমিটির আর এক সদস্য নিলেকানি দেশের শিল্পমহলে পরিচিত এক নাম। তথ্যপ্রযুক্তি সংস্থা ইনফোসিসের সহ-প্রতিষ্ঠাতা নিলেকানিকে অনেকেই আধার কার্ডের অন্যতম জনক বলে থাকেন। দেশে নাগরিকদের যাবতীয় তথ্য নথিবদ্ধ করে আধার কার্ড তৈরির দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল যে সংস্থাকে, সেই ইউআইডিএআই-এর চেয়ারম্যান হিসাবেও ২০১৪ সাল পর্যন্ত কাজ করেছেন তিনি। কমিটির অন্যতম সদস্য বিচারপতি দেবদত্ত দীর্ঘ দিন শেয়ার এবং বিনিয়োগ সংক্রান্ত ট্রাইব্যুনালের প্রধান হিসাবে কাজ করেছেন। কমিটির প্রধান অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি সাপ্রে গৌহাটি হাই কোর্ট এবং মণিপুর হাই কোর্টের প্রধান বিচারপতি ছিলেন। ২০১৯ সালে তিনি সুপ্রিম কোর্টের অন্যতম বিচারপতি হিসাবে অবসরগ্রহণ করেন। কাবেরী জলবণ্টন মামলা-সহ একাধিক গুরুত্বপূর্ণ মামলার রায়ের সঙ্গে জড়িয়ে আছে সাপ্রের নাম।
সুপ্রিম কোর্টের তৈরি করে দেওয়া কমিটির অন্যতম সদস্য কামাথও তাঁর কর্মজীবনে একাধিক ব্যাঙ্ক এবং আর্থিক প্রতিষ্ঠানের শীর্ষপদে ছিলেন। ব্রিকস গোষ্ঠীভুক্ত দেশগুলির জন্য তৈরি হওয়া নিউ ডেভেলপমেন্ট ব্যাঙ্ক ছাড়াও ইনফোসিস এবং বেসরকারি ব্যাঙ্ক আইসিআইসিআই ব্যাঙ্কের চেয়ারম্যান হিসাবেও কাজ করেছেন কামাথ। ন্যাশনাল স্টক এক্সচেঞ্জ এবং এশিয়ান ডেভেলপমেন্ট ব্যাঙ্কের পরিচালকমণ্ডলীর গুরুত্বপূর্ণ সদস্য হিসাবে দীর্ঘ দিন কাজ করার অভিজ্ঞতা রয়েছে তাঁর। কমিটির আর এক সদস্য সুন্দারেশন শেয়ার বাজার বিশেষজ্ঞ। সাংবাদিক হিসাবে কর্মজীবন শুরু করলেও পরে বিভিন্ন বহুজাতিক সংস্থার শেয়ার সংক্রান্ত পরামর্শদাতা হিসাবে কাজ করেছেন তিনি।