National news

মা বারণ করলেও শোনেন না, নিয়মিত শহর ঝাড়ু দেন এই তরুণী ইঞ্জিনিয়ার

কিন্তু ইঞ্জিনিয়ারিং পড়ার সময় আচমকা ঝাড়ু কেন হাতে তুলে নিলেন তেজস্বী?

Advertisement
নিজস্ব প্রতিবেদন
শেষ আপডেট: ১১ অগস্ট ২০১৯ ১৩:২১
Share:
০১ ১৩

ইঞ্জিনিয়ার মেয়ে শেষে কি না ঝাড়ু হাতে রাস্তায় রাস্তায় ঘুরবেন! কিছুতেই রাজি ছিলেন না মা। এক রকম মায়ের অবাধ্য হয়েই ঝাড়ু হাতে রাস্তায় বেরিয়ে পড়েন তেজস্বী। লোকের ঠাট্টার জবাব দিয়ে আজ তিনিই গোটা শহরের প্রিয়পাত্রী। কিন্তু ইঞ্জিনিয়ারিং পড়ার সময় আচমকা ঝাড়ু কেন হাতে তুলে নিলেন তেজস্বী?

০২ ১৩

পুরো নাম তেজস্বী পোরাপাতি। অন্ধ্রপ্রদেশের প্রকাসাম জেলার ওঙ্গোলে থাকেন তেজস্বী। তেজস্বী যখন ঝাড়ু হাতে শহরের রাস্তায় নামার সিদ্ধান্ত নেন, তখন তাঁর বি টেক শেষ বর্ষের পড়াশোনা চলছে।

Advertisement
০৩ ১৩

সংবাদপত্র পড়ার সময় এক দিন তিনি দেখতে পান, তাঁর জন্মস্থান ওঙ্গোলই নাকি অন্ধ্রপ্রদেশের তৃতীয় আবর্জনাময় অঞ্চল। বিষয়টা একেবারেই মেনে নিতে পারেননি তেজস্বী। অন্যদের মতো প্রশাসনকে দোষারোপ করার বদলে নিজেই ঝাড়ু হাতে রাস্তায় নামার সিদ্ধান্ত নেন।

০৪ ১৩

কিন্তু বাড়িতে জানানো মাত্রই যেন মায়ের মাথায় বাজ পড়ে। সামনেই ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের পরীক্ষা। মেধাবী মেয়ে শেষে কি না রাস্তায় ঝাড়ু দেবে! লোকে শুনলে বলবে কী! তার উপর মেয়ের ভবিষ্যৎ! এ সব নিয়েই চিন্তা ভর করে তেজস্বীর মায়ের মাথায়। তবে তেজস্বীর বাবা তাঁর পাশে দাঁড়ান।

০৫ ১৩

বাবার পরামর্শেই তেজস্বী প্রথমে নিজের বন্ধুদের প্রস্তাব দেন শহরের আবর্জনা পরিষ্কারের। ৭০ শতাংশই নেতিবাচক উত্তর দেন। তাঁদের অনেকে তেজস্বীকে নিয়ে ঠাট্টা করতে শুরু করেন। তবে ৩০ শতাংশ ইতিবাচক উত্তরই তেজস্বীর উৎসাহ বাড়িয়ে তোলে। তেজস্বী তখন চাকরি করতেন না। ফলে বাবা প্রাথমিক জিনিসপত্র কেনার খরচ দেন।

০৬ ১৩

১৫ অক্টোবর, ২০১৫ আব্দুল কালাম আজাদের জন্মদিনে তেজস্বী তাঁর প্রথম স্বপ্নের উড়ান নেন। প্রথমে তাঁরা ১০ জন মিলে ওঙ্গোলের একটি পার্কে যান। সেখানেই শুরু হয় সাফাই কাজ।

০৭ ১৩

নোংরা পরিষ্কার, দেওয়ালে লাগানো পোস্টার তুলে ঝকঝকে বানিয়ে ফেলেন পার্কটাকে। কিন্তু মানুষের মন তো! পরিষ্কার জায়গা দেখলেই কেমন ফাঁকা ফাঁকা লাগে বোধহয়। ক’দিনের মধ্যে ফের নোংরা হয়ে যায় পার্ক।

০৮ ১৩

তেজস্বীও দমবার পাত্রী নন। দলবল নিয়ে তিনিও ফের হাজির পার্কে। প্রথমে আশপাশের যে সমস্ত মানুষজন তাঁর কাণ্ড দেখে হাসাহাসি করতেন, এখন তাঁরাই রোজ পার্কে ঘুরতে যান এবং তেজস্বীর উদ্যোগের প্রশংসা করেন।

০৯ ১৩

এখানেই থেমে থাকেননি তেজস্বীরা। প্রতি সপ্তাহে কোনও নতুন পার্ক, কোনও রাস্তা বা পাবলিক প্লেস বেছে নেন তাঁরা। ঝাড়ু-মোছা, ডাস্টবিন নিয়ে হাজির হয়ে সেটাকেও চলাফেরার যোগ্য করে তোলেন। জায়গাগুলো একবার পরিষ্কার করেই থেমে যান না তাঁরা। মাঝে মাঝেই সে সমস্ত জায়গায় গিয়ে তদারকি করেন এবং প্রয়োজনে ফের তা পরিষ্কার করেন।

১০ ১৩

এই ভাবে ওঙ্গোলের ১২৫টা জায়গা পরিষ্কার করে ফেলেছেন তেজস্বীরা। তেজস্বীর দলের নাম ‘ভূমি ফাউন্ডেশন’। তেজস্বীরা শুরু করেছিলেন মাত্র ১০ জন মিলে, এখন তাঁর দলের সদস্য সংখ্যা সাড়ে তিন হাজার ছাড়িয়েছে।

১১ ১৩

পড়াশোনা শেষ করে তেজস্বী এখন সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার। বাড়ি থেকে ৩৬০ কিলোমিটার দূরে তাঁর অফিস। তাই কর্মস্থলের কাছেই ঘর ভাড়া নিয়ে থাকেন তেজস্বী। তা বলে পরিষ্কার করার কাজ বন্ধ রাখেননি। প্রতি সপ্তাহে শুক্রবার করে বাড়ি ফিরে ভূমি ফাউন্ডেশনের সঙ্গে বৈঠক করেন। পরের দু’দিন ফের ঝাড়ু হাতে নেমে পড়েন রাস্তায়।

১২ ১৩

এই বিশাল কর্মকাণ্ডের খরচ চলে কী করে? এখনও পর্যন্ত কোনও সরকারি সাহায্য পান না তেজস্বীরা। কাজ চলে নিজেদের পকেটের টাকাতেই। তেজস্বী নিজেই মাইনের ৭০ শতাংশ দান করেন ভূমি ফাউন্ডেশনকে। তবে চলতি বছর সরকারকে সাহায্যের আবেদন জানানো হবে বলেও সিদ্ধান্ত নিয়েছে ফাউন্ডেশন।

১৩ ১৩

সম্প্রতি অন্ধ্রপ্রদেশ সরকার ওঙ্গোলকে পোস্টার-মুক্ত শহর ঘোষণা করেছে। চন্দ্রবাবু নায়ড়ুর হাত থেকে তেজস্বী স্বচ্ছ অন্ধ্র অ্যাওয়ার্ড পেয়েছেন।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
Follow us on:
আরও গ্যালারি
Advertisement