আইএএস- শব্দটিই যেন সম্ভ্রম আদায় করে নেয়। দেশের জনগণের প্রতি গুরুদায়িত্ব পালনের অঙ্গীকার নেওয়া কম কথা নয়। আইএএস হয়ে ওঠা যে সহজ বিষয় নয়, তা বলার প্রয়োজন পড়ে না। খুব কম চাকরিপ্রার্থীই আইএএস হওয়ার দৌড়ে নামেন।
কিন্তু খুঁজলে এমন কয়েক জনের সন্ধান মিলবে, যাঁদের কাছে আইএএস হয়ে ওঠা যেন সত্যিই জলভাত। তাঁদেরই একজন হলেন রেণু রাজ।
গলায় স্টেথোস্কোপ ঝুলিয়ে রেণু এই চিকিৎসক, তো পরক্ষণেই আইএএস! উঁচু দরের কঠিন চাকরিও যেন তাঁর কাছে জলভাতের মতোই সহজ। হাজার হাজার চাকরিপ্রার্থীর অনুপ্রেরণা রেণু।
কেরলের কোট্টায়ামে জন্ম রেণুর। প্রথম চেষ্টাতেই ইউপিএসসি-তে শুধু সফলই হননি, সারা দেশে দ্বিতীয় হয়েছিলেন।
১০ মাসের এই আইএএস অফিসার ইতিমধ্যেই দুর্নীতির বিরোধিতা করে দেশের নজরে চলে এসেছেন।
কোট্টায়ামের সেন্ট টেরেজা’স হায়ার সেকেন্ডারি স্কুল থেকে পড়াশোনা রেণুর। মেধাবী রেণু তার পর কোট্টায়ামেরই একটি সরকারি মেডিক্যাল কলেজ থেকে ডাক্তারি পাশ করেন।
রেণুর বাড়িতে চিকিৎসকের সংখ্যাটি বেশিই। রেণুর বোনও একজন চিকিৎসক। রেণুর স্বামীও চিকিৎসক এবং সর্বোপরি রেণু নিজেও একজন চিকিৎসক।
তবে রেণুর বাবা একজন অবসরপ্রাপ্ত সরকারি কর্মচারী। তাঁর ইচ্ছাতেই দুই মেয়ে ডাক্তারি পাশ করেছিলেন।
কোট্টায়ামেরই চিকিৎসক ছিলেন রেণু। কোট্টায়ামের একটি নামজাদা হাসাপাতালের সার্জন ছিলেন তিনি।
চিকিৎসার পেশায় অর্থের অভাব ছিল না তাঁর। কিন্তু তাও যেন এই কাজটি সে ভাবে উপভোগ করতে পারছিলেন না রেণু।
মানুষের সেবায় নিজের কর্মজীবন উৎসর্গের ইচ্ছা জাগছিল তাঁর মনে। শুধুমাত্র চিকিৎসক হয়ে সেই ইচ্ছা যেন পূরণ হচ্ছিল না।
রেণুর বার বারই মনে হত, এ ভাবে তিনি নিজেকে পুরোপুরি মেলে ধরতে পারছেন না। এতে বড়জোর ৫০ থেকে ১০০ মানুষের সেবা করতে পারবেন তিনি। রেণু এমন কিছু হতে চাইছিলেন, যাতে তাঁর একটি সিদ্ধান্ত অন্তত হাজার মানুষের উপকারে লাগবে।
তখনই তাঁর আইএএস অফিসার হওয়ার কথা মাথায় আসে। যেমন বলা তেমন কাজ। ওই দিন থেকে ইউপিএসসি পরীক্ষার জন্য প্রস্তুতি নিতে শুরু করেন তিনি।
এক হাতে স্টেথোস্কোপ আর অন্য হাতে আইএএস-এর প্রস্তুতির বই। ২০১৩ সাল থেকে এ ভাবেই দিনগুলি কাটছিল তাঁর।
তবে একজন চিকিৎসক হিসাবে নিজের দায়িত্ব পালনের পর আইএএস-এর জন্য প্রস্তুতি নেওয়া সহজ ছিল না। পড়ার জন্য হাতে খুব বেশি সময় তিনি পেতেন না।
প্রথম দিকে মাত্র তিন থেকে ছয় ঘণ্টা পড়তে পারতেন তিনি। সাত মাস এ রকম কাটার পর মানসিক ভাবে ভেঙে পড়েছিলেন রেণু। তিনি আসলে বুঝতে পারছিলেন, ইউপিএসসি-র মতো কঠিন পরীক্ষায় পাশ করতে গেলে এত অল্প পড়াশোনায় হবে না।
এক সময় ডাক্তারিই ছেড়ে দিলেন তিনি। পুরো সময়টাই পড়াশোনা শুরু করলেন। মা-বাবা তাঁর ডাক্তারি ছাড়ার সিদ্ধান্তে একেবারেই খুশি ছিলেন না। তবে মেয়ের মেধার উপর ভরসাও ছিল তাঁদের।
২০১৪ সালে ইউপিএসসি পরীক্ষায় বসেন তিনি। প্রথম চেষ্টাতেই বাজিমাত। সারা দেশে দ্বিতীয় হন রেনু।
কেরলের মুন্নারে দেবীকুলামের সাব-কালেক্টর হয়ে কাজে যোগ দেন তিনি। কাজ শুরু করার ১০ মাসের মধ্যেই দুর্নীতির বিরুদ্ধে সরব হতে শুরু করেছিলেন রেণু।
এত অল্প সময়ে আইএএস-এর দায়িত্ব বুঝে উঠতেই কেটে যায় অনেকের। মানুষের সেবায় রেণু আসলে একটি দিনও নষ্ট করতে চাইছিলেন না।
পরিশ্রম এবং কাজের প্রতি নিষ্ঠা থেকে আজ মুন্নারের জনপ্রিয় মুখ হয়ে উঠেছেন রেণু। ছুটির দিনেও মানুষের জন্য কাজ করে চলেছেন তিনি। পাশাপাশি আইএএস-এর স্বপ্ন দেখা লক্ষ লক্ষ চাকরিপ্রার্থীর অনুপ্রেরণাও তিনি।