স্কুলের পরীক্ষায় ফেল করে আত্মীয়-স্বজনের গঞ্জনার শিকার হয়েছিলেন। পাড়া-প্রতিবেশীরাও কথা শোনাতে ছাড়েননি তাঁকে। পরে সেই মেয়েই ইউপিএসসি পরীক্ষায় সফল হয়ে সেই সমস্ত গঞ্জনার জবাব দিয়েছিলেন।
প্রথম চেষ্টাতেই আইএএস হয়ে ওঠেন ২২ বছরের ওই মেয়ে। সারা দিন পাড়ায় ঘুরে বেড়ানোর জন্য এক সময় বদনাম ছিল। আইএএস হয়ে পাড়া-প্রতিবেশীদের তাক লাগিয়ে দেন তিনিই।
অঞ্জু শর্মা। ২৬ বছরেরও বেশি সময় ধরে আইএএস হয়ে দেশের সেবা করে চলেছেন তিনি। এই মুহূর্তে গুজরাতের হায়ার অ্যান্ড টেকনিক্যাল এডুকেশনের মুখ্যসচিব তিনি।
কর্মক্ষেত্রে প্রচুর পুরস্কারও পেয়েছেন অঞ্জু। ২০১১ সালে প্রধানমন্ত্রী পুরস্কার, রাষ্ট্রীয় স্বাস্থ্য বিমা যোজনার উপর কাজ করে পুরস্কার পেয়েছেন। ঝুলিতে রয়েছে আরও অনেক পুরস্কার।
এখনও পর্যন্ত দু’টি বইও লিখেছেন। ‘আই অব দ্য স্টর্ম- ডিসকভার ইওর ট্রু সেল্ফ’ এবং ‘কর্পোরেট মঙ্ক-এ জার্নি ফ্রম ওয়েল্থ টু উইজডম’
এক সময়ে ফাঁকিবাজ বলে পরিচিত সেই মেয়ে কী ভাবে প্রথম চেষ্টাতেই কঠিন পরীক্ষায় সফল হলেন?
রাজস্থানের জয়পুরে জন্ম তাঁর। পড়াশোনা তিনি ভালবাসতেন। কিন্তু কখনও খুব বেশি ক্ষণ পড়তে পারতেন না। মূলত পরীক্ষার আগের দিনই সিলেবাস শেষ করতে উঠেপড়ে নামতেন।
কিন্তু এই সূত্র এত দিন কাজে লাগালেও দ্বাদশ শ্রেণির বড় সিলেবাসের ক্ষেত্রে তা আর কাজে লাগাতে পারেননি।
সেটা ছিল টেস্ট পরীক্ষা। দ্বাদশ শ্রেণির বোর্ডের পরীক্ষার আগে পড়ুয়াদের প্রস্তুতি খতিয়ে দেখার জন্যই এই পরীক্ষা নেওয়া হয় স্কুলে।
পরদিন ছিল রসায়ন বিদ্যার পরীক্ষা। নিজের সূত্র ধরেই পরীক্ষার আগের দিন বই নিয়ে বসেন তিনি। কিন্তু সিলেবাস এতটাই বড় ছিল যে তাঁর পক্ষে এক রাতে শেষ করা অসম্ভব হয়ে দাঁড়ায়।
মা-বাবার সঙ্গে রাতের খাবার খাওয়ার পর থেকেই তিনি ভয় পেতে শুরু করেন। পরীক্ষায় যে উত্তীর্ণ হতে পারবেন না তা একপ্রকার নিশ্চিত হয়ে গিয়েছিলেন।
অঞ্জু উত্তীর্ণ হতে পারেননি। সেই প্রথম তাঁর সূত্র কাজে লাগেনি। লজ্জায় মা-বাবাকে মুখ দেখাতে পারছিলেন না।
আত্মীয়েরা অনেকেই দু-চার কথা শুনিয়ে দেন তাঁকে। প্রতিবেশীরাও ব্যঙ্গ করতে থাকেন। বাড়ির বাইরে পা রাখাই বন্ধ হয়ে গিয়েছিল তাঁর।
তবে মা-বাবা অঞ্জুকে এতটুকু বকেননি। তাঁর উপর চাপ সৃষ্টি করার চেয়ে তাঁকে সান্তনা দিয়ে বোর্ডের পরীক্ষার আরও ভাল প্রস্তুতি নিতে মনোবল বাড়িয়ে দেন।
তার পর থেকে নিজের পড়াশোনার সূত্রটিও বদলে নেন তিনি। সিলেবাস আগে থেকেই সম্পূর্ণ করে রাখতেন। আর পরীক্ষার আগের দিন সন্ধ্যা থেকে নিজেকে চাপমুক্ত রাখতেন। বই ছুঁতেন না।
এই সূত্রেই ফাঁকিবাজ অঞ্জু হয়ে দ্বাদশের পরীক্ষায় ভাল ফল করেন। এই সূত্রেই রাজস্থান বিশ্বিদ্যালয় থেকে বিজ্ঞানে স্নাতক (বিএসসি) হন তিনি। তারপর এমবিএ করেন। বিএসসি এবং এমবিএ— দু’টি পরীক্ষাতেই স্বর্ণপদক পান।
এমবিএ করার পর ইউপিএসসি-র জন্য প্রস্তুতি নিতে শুরু করেন তিনি। তবে কখনও বইয়ে মুখ গুঁজে পড়ে থাকতেন না তিনি।
সময়ের অনেক আগে সিলেবাস শেষ করে বরং খোশমেজাজে ঘুরে বেড়াতেন। ১৯৯১ সালের তাঁর ইউপিএসসি পরীক্ষার ফল জেনে তাই চমকে যান প্রতিবেশীরা। আইএএস হয়ে গিয়েছেন সেই ফাঁকিবাজ অঞ্জু!