দীপিকা সিংহ রাজাওয়াত- চেনা লাগছে নামটা? কালো ফ্রেমের চশমা, গায়ে কালো কোট, সঙ্গে সাদা ওড়না। চোখে মুখে ফুটে উঠছে এক অদ্ভুত দৃঢ়তা। জম্মু-কাশ্মীর হাইকোর্টের আইনজীবী। বরাবরই স্রোতের বিপরীতে হাঁটা এই তেজস্বিনীকে চেনেন আপনি?
১৭ জানুয়ারি ২০১৮ জম্মু-কাশ্মীরের কাঠুয়াতে ঘটে যায় এক নির্মম পাশবিক ঘটনা। চার দিন মন্দিরে আটকে রেখে মাদক খাইয়ে আচ্ছন্ন করে গণধর্ষণ করে মাথা থেঁতলে খুন করা হয় বকরাওয়াল সম্প্রদায়ের আট বছরের এক ছোট্ট মেয়েকে।
দেশজুড়ে শুরু হয় প্রবল আলোড়ন। মন্দিরের তত্ত্বাবধায়ক সাধ্বী রাম, তিন পুলিশ কর্মী-সহ মত আট জন অভিযুক্ত হয়। অভিযুক্তদের সমর্থনে বিক্ষোভ দেখায় 'হিন্দু একতা মঞ্চ' নামে এক সংগঠন।মন্দিরের তত্ত্বাবধায়ক অভিযুক্তদের সমর্থনে বিক্ষোভ দেখায়।
ঠিক সেই সময়ে নিজের বিপদের তোয়াক্কা না করে শিশুটির হয়ে মামলা লড়ার গুরুদায়িত্ব নিজের কাঁধে তুলে নেন দীপিকা। গণ্ডগোলের সুত্রপাত ঠিক তার পরেই। দেশজুড়ে বাড়তে থাকে সাম্প্রদায়িক রাজনীতির চাপানউতোর।
কিন্তু জম্মু-কাশ্মীর হাইকোর্টের বার অ্যাসোসিয়েশনের বিরোধিতা, ক্রমাগত ধর্ষণের হুমকি, তাঁর নয় বছরের মেয়েকে প্রাণে মারার শাসানি, দেশদ্রোহী তকমা-কিছুই দমাতে পারেনি তাকে।
এই মানুষটির নৈতিক জয় হয় গত ৩ জুন,২০১৯। শাস্তি পায় কাঠুয়া কাণ্ডে অভিযুক্তরা।
তাঁর এই অসামান্য সাহসিকতার জন্য ১১জুন ২০১৮ ‘ইন্ডিয়ান মার্চেন্ট চেম্বার’-এর মহিলা শাখা তাঁকে ‘উম্যান অফ দ্য ইয়ার’ শিরোপায় ভূষিত করে।
১৯৮০ সালে জম্মু-কাশ্মীরের কারিহানা গ্রামে এক কাশ্মীরী পণ্ডিত পরিবারে জন্ম এই বিশিষ্ট আইনজীবীর।
যোধপুরের ‘ন্যাশনাল ল ইউনিভার্সিটি’ থেকে আইনে স্নাতক হয়ে বর্তমানে জম্মু-কাশ্মীরের আদালতে আইনজীবী হিসেবে কর্মরত।
তাঁর ন’বছরের ছোট্ট মেয়ে ‘অষ্টমী। কাঠুয়া ধর্ষণ কাণ্ডের পর বাচ্চাটিকে নিয়েও নানান ধরনের হুমকির সম্মুখীন হন দীপিকা।
মানবাধিকার এবং শিশুকল্যাণের জন্য কাজ করা এনজিও ‘ভয়েস অব রাইট’-এর ও চেয়ারপার্সন তিনি।
বেশিরভাগেরই জানা নেই কাঠুয়া কাণ্ডে তিনিই প্রথম ‘রিট পিটিশন’ দায়ের করেন। এই কারণেই তাঁর জম্মু- কাশ্মীর বার অ্যাসোসিয়েশনের সদস্যপদও বাতিল হয়ে যায়।
‘লাডলি অ্যাওয়ার্ড ,‘চরখা অ্যাওয়ার্ড’ ইত্যাদি নানান পুরস্কার রয়েছে তাঁর ঝুলিতে।
নির্ভয়া, আলিগড়, কাঠুয়া থেকে বাংলার কামদুনি –একের পর এক নৃশংসতা যখন ঘটে চলে তখন দীপিকারাই জ্বালিয়ে রাখেন আশার দীপশিখা।