লাদাখে সংঘর্ষের পরে অরুণাচলপ্রদেশের সীমান্তের ও পারে চিনা সেনার সমাবেশ আগের থেকে অনেক বেড়েছে বলে দাবি করেছে ভারতীয় সেনা। নিয়ন্ত্রণরেখার ও পারে চিনা সেনা যে সামরিক ঘাঁটি বাড়িয়ে চলেছে, তার প্রমাণ মিলেছে সেনাবাহিনীর ড্রোন এবং রেডারে। চিনা আগ্রাসন রুখতে তৎপর হয়েছে ভারতীয় সেনাবাহিনীও। যার অন্যতম দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে এক মহিলা সেনা অফিসারকে। তিনি সারিয়া আব্বাসি।
নিয়ন্ত্রণরেখা পেরিয়ে ঢুকে আসা চিনা চালকহীন সশস্ত্র বিমান, কপ্টারকে ধূলিসাৎ করতে এ পারে সেই ‘এল-৭০’ বিমানবিধ্বংসী বন্দুক নিয়ে কড়া পাহারা দিয়ে চলেছেন সারিয়া। সুইডিশ বফর্স কোম্পানির কাছ থেকে ১৯৬০-এর দশকে ‘এল-৭০’ বিমানবিধ্বংসী বন্দুক প্রথম কেনা হয়েছিল। এখনও সক্রিয় ১১৮০টি ‘এল-৭০’। নতুন অবতারের ‘এল-৭০’ যে কোনও ড্রোন, হেলিকপ্টার, বিমানকে দ্রুত লক্ষ্য করে আঘাত হানতে সক্ষম।
তাঁর পুরো নাম সারিয়া আব্বাসি। আদতে উত্তরপ্রদেশের গোরক্ষপুরে জন্ম সারিয়ার। গোরক্ষপুরের রামজানকী নগরের বাসিন্দা সারিয়ার পরিবারে অনেকেই সেনাবাহিনীতে কর্মরত ছিলেন। ছোট থেকে সেনাবাহিনীতে কাজ করা আত্মীয়দের বীরত্বের কথা শুনেই বড় হওয়া তাঁর। এখন নিজে সেই বীরগাথার শরিক।
সারিয়ার মা-বাবা অবশ্য সে অর্থে কেউই সেনাবাহিনীর সঙ্গে যুক্ত নন। তাঁর বাবা তেহসিন আব্বাসি আকাশবাণী গোরক্ষপুরের প্রোগ্রাম হেড। মা রেহানা ভাটহাট এলাকার জুনিয়র হাইস্কুলের শিক্ষিকা। ছোট ভাই তামসিল আহমেদ দিল্লিতে স্নাতকস্তরে পড়াশোনা করছেন। সারিয়া নিজেও অত্যন্ত মেধাবী। গোরক্ষপুরের জিএন ন্যাশনাল অ্যাকাডেমি স্কুল থেকে পাশ করার পর আইএমএস গাজিয়াবাদ থেকে জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে বি-টেক করেছেন।
বি-টেক পাশ করার পরই দেশ-বিদেশের নানা সংস্থা থেকে চাকরির সুযোগ এসেছিল। কিন্তু একঘেয়ে সেই অফিস জীবন সারিয়ার বরাবরই অপছন্দের ছিল। বরং ছোট থেকে তাঁর স্বপ্ন জুড়ে শুধু ছিল জলপাই পোশাক এবং তার বুকে লাগানো মেডেলের সারি। সেই স্বপ্নের পথে হেঁটেছেন তিনি। চাকরি ছেড়ে নিজের স্বপ্নকে সফল করেছেন।
তাঁর কাঁধেই এখন চিন সীমান্তের আকাশ রক্ষার ভার। অরুণাচলপ্রদেশের চিন সীমান্তে ভারতীয় সেনা অফিসার হিসাবে নিযুক্ত করা হয়েছে তাঁকে। গত চার বছর তিনি সেনাবাহিনীতে কর্মরত।
২০১৫ সালে কম্বাইন্ড ডিফেন্স সার্ভিসেস-এর ফর্ম জমা দিয়েছিলেন। প্রথম বার সাফল্য পাননি। পরের বছর ফের ওই পরীক্ষায় বসেন। মেয়েদের জন্য মাত্র ১২টি আসন ছিল। কম আসন থাকায় মেয়ের সাফল্য নিয়ে সে ভাবে নিশ্চিতও হতে পারেননি তাই মা-বাবা। কিন্তু সবাইকে অবাক করে দ্বিতীয়বারের চেষ্টাতে সফল হন সারিয়া।
২০১৭ সালের ৯ সেপ্টেম্বর মায়ের জন্মদিনের দিন লেফটেন্যান্ট পদে যোগ দেন তিনি। লেফটেন্যান্ট সারিয়া এখন ক্যাপ্টেন সারিয়া। অরুণাচলপ্রদেশের সীমান্তে কড়া প্রহরায় চিনের আগ্রাসনের সামনে বুক চিতিয়ে দাঁড়িয়ে রয়েছেন।
অতি-গুরুত্বপূর্ণ তাওয়াং সেক্টরে মোতায়েন আর্মি এয়ার ডিফেন্স রেজিমেন্টের বর্তমান ট্রুপ কম্যান্ডার তিনি। সারিয়ার ইউনিট দেশের অন্যতম প্রথম এএডি রেজিমেন্ট, যাদের হাতে তুলে দেওয়া হয়েছে আধুনিক অবতারে ফেরা কিংবদন্তী এল-৭০ বিমানবিধ্বংসী বন্দুক।
২৮ বছরের সারিয়ার মতে, মেয়েদের জন্য ভারতীয় সেনার ফিল্ড পোস্টিংয়ে সুযোগ খুবই কম কিন্তু যাঁরা চ্যালেঞ্জ নিতে পছন্দ করেন, তাঁদের জন্য এর কোনও বিকল্প নেই। নিজের সাফল্যের জন্য মা-বাবার কঠোর পরিশ্রম এবং আত্মত্যাগকেই দায়ী করেন তিনি।