মণিপুরের কাংলা দুর্গের বাইরে নিরাপত্তারক্ষীরা। ছবি: এক্স।
মণিপুরে অশান্তির আগুন ধিকিধিকি জ্বলছেই। গত দুই সপ্তাহে সন্দেহভাজন জঙ্গিদের হাতে খুন হয়েছেন চার জন কাঠমিস্ত্রি, দু’জন পুলিশ কমান্ডো এবং এক জন গ্রাম-রক্ষা স্বেচ্ছাসেবক। তার পরেই আগামী বৃহস্পতিবার রাজধানী ইম্ফলের কেন্দ্রস্থলে ঐতিহাসিক কাংলা ফোর্টের ভিতরে জনসভার ডাক দিয়েছে একটি গ্রাম প্রতিরক্ষা গোষ্ঠী। অশান্তির আশঙ্কায় তার ২৪ ঘণ্টা আগেই একদা মণিপুর সাম্রাজ্যের ক্ষমতার কেন্দ্রবিন্দু কাংলা ফোর্টের চারপাশ ঘিরে ফেললেন রাজ্য এবং কেন্দ্রীয় নিরাপত্তা বাহিনীর শয়ে শয়ে জওয়ান।
‘আরাম্বাই টেঙ্গোল’ নামে ওই গ্রাম প্রতিরক্ষা গোষ্ঠীর তরফে সমস্ত বিধায়কদের আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে বৃহস্পতিবারের জনসভায়। সূত্রের খবর, মণিপুরের জাতি সংঘর্ষ নিয়ে সেখানে নিজেদের অবস্থান স্পষ্ট করবেন নেতা-নেত্রীরা। কঠোর নিরাপত্তা সত্ত্বেও আজ বুধবার থেকেই ফোর্টে জমায়েত শুরু করেছেন ‘আরাম্বাই টেঙ্গোল’-এর সদস্যরা।
সোমবার রাতে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের তিন সদস্যের একটি বিশেষ দল ইম্ফলে এসে ‘আরাম্বাই টেঙ্গোল’-এর সদস্যদের সঙ্গে দেখা করে। মঙ্গলবার ফের বৈঠকে বসে তারা। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের উত্তর-পূর্ব বিষয়ক উপদেষ্টা এ কে মিশ্রের নেতৃত্বে দলটি রাজ্যসভার সাংসদ লিশেম্বা সানাজাওবার বাড়িতে বৈঠকে বসেছিল।
এ সবের মধ্যেই নাগা উপজাতির নেতা-সহ রাজ্যের মোট ৩৫ জন বিধায়ক কেন্দ্রের কাছে দাবি জানিয়েছেন, বিদ্রোহী ২৫টি কুকি গোষ্ঠীর সঙ্গে ‘সাসপেনশন অফ অপারেশন’ চুক্তি বাতিল করতে হবে। অন্যথায় জনগণের সঙ্গে আলোচনা করে ‘যথাযথ ব্যবস্থা’ নেবেন তাঁরা। এই ‘যথাযথ ব্যবস্থা’ আদতে প্রচ্ছন্ন হুমকি বলেই মনে করছে রাজনৈতিক মহল। এমনকি, এর জেরে রাজ্যের বিজেপি সরকারও পড়ে যেতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
সোমবার একটি রেজোলিউশনে বিধায়করা জানিয়েছেন, কেন্দ্র, রাজ্য এবং ২৫টি কুকি গোষ্ঠীর মধ্যে ত্রিপাক্ষিক ‘সাসপেনশন অফ অপারেশন’ চুক্তি বাতিল করা হলে নিরাপত্তা বাহিনী পুরোদমে কুকি বিদ্রোহীদের বিরুদ্ধে অভিযান শুরু করতে পারবে।
‘সাসপেনশন অফ অপারেশন’ চুক্তি অনুযায়ী বিদ্রোহীদের নির্দিষ্ট কিছু ক্যাম্পে রাখা হয়েছে। অভিযোগ, ২০২৩ সালের মে মাসে কুকি ও মেইতেইদের মধ্যে জাতি সংঘর্ষ শুরু হওয়ার পর বেশ কিছু ক্যাম্পে বিদ্রোহীদের পূর্ণ উপস্থিতি লক্ষ্য করা যায়নি। গত সপ্তাহতেই মণিপুরের নিরাপত্তা উপদেষ্টা কুলদীপ সিংহ জানিয়েছিলেন, মায়ানমারের বিদ্রোহীরা সীমান্তবর্তী মোরেহ শহরে নিরাপত্তা বাহিনীর উপর হামলা চালাতে পারে। যদিও এর কোনও প্রমাণ পাওয়া যায়নি। তবে, কুলদীপ নিরাপত্তা বাহিনীর উপর আক্রমণের ঘটনায় কুকি বিদ্রোহীদের জড়িত থাকার বিষয়টি স্বীকার করে নিয়েছেন।