মহম্মদ জাভেদ। —নিজস্ব চিত্র
পরনে জলপাই উর্দি। সবুজ সোয়েটারে বুকের বাঁ পাশে জ্বলজ্বল করছে লেখাটা— ‘ইন্ডিয়ান আর্মি’। জামিয়া মিলিয়া ইসলামিয়ার ‘মসজিদ-ফটক’ আগলে থাকা এই মহম্মদ জাভেদকেই রবিবার পাকিস্তান চলে যেতে বলেছে দিল্লি পুলিশের এক কনস্টেবল্! টানা কুড়ি বছর সেনাবাহিনীতে কাজের পরে অবসর নিয়ে এখন কেন্দ্রীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের রক্ষী জাভেদের ওই দিন বাড়তি পাওনা কয়েক ঘা লাঠিও!
বিশ্ববিদ্যালয়ের ঠিক সামনের মসজিদের ইমাম কারি মহম্মদ সুলেমান কাসমির অভিযোগ, ধ্বস্তাধ্বস্তির সময়ে পুলিশ রেয়াত করেনি তাঁকেও। অথচ ওই উত্তপ্ত সময়ে টানা এক ঘণ্টা পুলিশ এবং পড়ুয়ার কাছেই শান্তি বজায় রাখার আবেদন জানিয়েছিলেন তিনি।
পুলিশের দাবি, আগে তাঁদের উপরে চড়াও হয়েছিলেন প্রতিবাদীরা। বাস পোড়ানো হয়েছিল। উড়ে আসছিল ইট। সেই কারণে লাঠি চালাতে বাধ্য হয়েছিলেন তাঁরা। কিন্তু পড়ুয়া থেকে শুরু করে আশপাশের দোকানি— অনেকেরই ক্ষোভ, তাঁদের সংখ্যালঘু ঠাউরেই এমন ভাবে লাঠি চালিয়েছে পুলিশ। অনেকের কটাক্ষ, ‘‘যে দেশের প্রধানমন্ত্রীই পোশাক দেখে বিক্ষোভকারী চেনার কথা বলেন, সেখানে পুলিশ যে সাহস পাবে, তাতে আর আশ্চর্য কী?’’
“... পোশাক দেখেই চেনা যাচ্ছে!”
(নাগরিকত্ব আইন বিরোধী বিক্ষোভ প্রসঙ্গে রবিবার প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর মন্তব্য)
একই কথা ঘুরপাক খাচ্ছে রাজনীতির বৃত্তেও। সিপিএম নেতা সীতারাম ইয়েচুরির কটাক্ষ, ‘‘অসমে প্রতিবাদীদের পোশাক কী ছিল, মিস্টার প্রধানমন্ত্রী?’’ আরজেডি সাংসদ মনোজ ঝা বলেছেন, ‘‘মোদীর মন্তব্য পুলিশকে এত নির্মম হতে উৎসাহ দিয়েছে।’’ এসপি সাংসদ জাভেদ আলি খান বলেন, ‘‘পুলিশের উপরে হামলা তো হয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে তিন কিলোমিটার দূরে। তা হলে পড়ুয়াদের উপরে লাঠি পড়ল কী করে?’’
সোমবার বিক্ষোভের নানা রূপ। দিল্লিতে ঠান্ডার মধ্যে শার্ট খুলে প্রতিবাদ জামিয়ার পড়ুয়া শাহজাদের। (ডান দিকে) গুয়াহাটিতে বিক্ষোভ। ছবি: সোশ্যাল মিডিয়া এবং পিটিআই।
জাভেদ বলেন, জলপাই পোশাকে জীবন কাটানোর পরে পাকিস্তান যাওয়ার ‘উপদেশ’ যে তাঁকে কেউ দিতে পারেন, ভাবতেই পারেননি। ভাবেননি পুলিশের লাঠি ছুঁতে পারবে তাঁকে। তাঁর ইঙ্গিত, যে ভাবে পুলিশ ঢুকেই সিসিটিভি-ক্যামেরা ভেঙেছে, ঘিরে ধরে মেরেছে পড়ুয়াদের, ‘উপর মহলের সম্মতি’ ছাড়া তা করা শক্ত। এই কেন্দ্রীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের রক্ষী হিসেবে তাঁর সহকর্মী মুকরিম খান এবং ভগীরথ সিংহও বলছিলেন, কী ভাবে হাতে গোনা ‘প্রাক্তন সেনা’ রক্ষীদের উপরে রবিবার সন্ধ্যেয় চড়াও হয়েছে পুলিশ। জখম জাভেদ-সহ দু’জন। ক্যাম্পাসে প্রশ্ন, যে সরকার উগ্র দেশপ্রেমের গান গাইতে কথায় কথায় সেনাবাহিনীর প্রতি সম্মানের কথা বলে, তার পুলিশ প্রাক্তন সেনাদের উপরে লাঠি চালায় কী ভাবে? কী ভাবে বলে পাকিস্তানে চলে যেতে?
আরও পড়ুন: জনজাতিদের আশ্বস্ত করতে অমিত-বার্তা
রবিবার ‘পুলিশি তাণ্ডব’ ঠিক ক’টায় শুরু হয়েছিল, তা নিয়ে নানা মত আছে। কেউ বলছেন সাড়ে ছ’টা, কেউ আটটা। পুলিশ বলছে, শুধু কাঁদানে গ্যাস চলেছে। অথচ সফদরজং হাসপাতাল জানিয়েছে, ভর্তি হয়েছেন দুই গুলিবিদ্ধ প্রতিবাদকারী।
দিনের শেষে সব পড়ুয়াকে শান্ত থাকার আবেদন জানিয়েছেন মানব সম্পদ মন্ত্রী রমেশ পোখরিয়াল নিশঙ্ক। বিরোধী দলগুলির রাজনৈতিক চক্রান্তে পা না-দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন খোদ স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ। আর জেএনইউ প্রাক্তনী, অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামন বলেছেন, এই আন্দোলনে মাওবাদী, জিহাদিদের ভূমিকা খতিয়ে দেখতে হবে। জামিয়া মিলিয়ার ছাত্রীরা অবশ্য সবাই এ দিনই হস্টেল ছেড়ে চলে গিয়েছেন।
ক্যাম্পাসে আস্থা ফিরবে?