Russia Ukraine War

Russia Ukraine War: কূটনীতির পথে পুতিন থামবেন কি, উঠছে প্রশ্ন

কত দিন এই যুদ্ধ চলবে তা অনিশ্চিত। কূটনৈতিক বিশেষজ্ঞদের মতে, কূটনৈতিক পথে সমস্যা সমাধানের একাধিক চ্যালেঞ্জ এই মুহূর্তে।

Advertisement

অগ্নি রায়

নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ১৪ জুলাই ২০২২ ০৬:১৬
Share:

ফাইল চিত্র।

গত কয়েক মাসে অন্তত আধ ডজন আন্তর্জাতিক সম্মেলনে ভারত ‘আলোচনা এবং কূটনীতি’র পথে ইউক্রেনের সঙ্কটমোচনের কথা বলেছে। বলেছে রাষ্ট্রপুঞ্জের নিরাপত্তা পরিষদেও। চলতি যুদ্ধ সম্পর্কে প্রধানমন্ত্রী এবং বিদেশমন্ত্রী ভারতের যে অবস্থানকে নির্দিষ্ট করেছেন, তা হল, ‘ভারত চায় অবিলম্বে হিংসা বন্ধ হোক। আলোচনা এবং কূটনীতির মাধ্যমেই সমস্যার সমাধান হতে পারে।’ সম্প্রতি জি-২০ বিদেশমন্ত্রী সম্মেলনের পর চিনও একই সুরে কূটনৈতিক সমাধানের পক্ষে সওয়াল করেছে।

Advertisement

ভারতের এই অবস্থানের পরিপ্রেক্ষিতে কূটনৈতিক শিবির মনে করছে, মুখে বললেও আলোচনা এবং কূটনীতি চালানোর মতো কোনও পরিস্থিতিই নেই রাশিয়া-ইউক্রেন-এর মধ্যে। আরও তলিয়ে বিশ্লেষণ করলে দেখা যাচ্ছে, চিন এবং ভারত ইউক্রেনের দাবির সঙ্গে নৈতিক ভাবে সহমত হলেও, ভ্লাদিমির পুতিনকে আলোচনায় বসানোর জন্য প্রয়োজনীয় চাপ তৈরি করতে অপারগ। আর সেই চাপ ছাড়া পুতিনেরও টেবলে বসে কথা বলার কোনও কারণ এখনও নেই। আর চাপ তৈরি দুরস্থান, বরং চিন এবং ভারতের সঙ্গে বাণিজ্য বাড়িয়ে পশ্চিমের নিষেধাজ্ঞাকে বুড়ো আঙুল দেখাচ্ছে মস্কো।

কত দিন এই যুদ্ধ চলবে তা অনিশ্চিত। কূটনৈতিক বিশেষজ্ঞদের মতে, কূটনৈতিক পথে সমস্যা সমাধানের একাধিক চ্যালেঞ্জ এই মুহূর্তে। প্রথমত, পুতিন শেষ পর্যন্ত কী করবেন তা কেউ জানে না। এ ক্ষেত্রে যুদ্ধজয়ের সংজ্ঞা তাঁর কাছে কী, সেটাও স্পষ্ট নয়। তিনি যে নির্মম ঢংয়ে আক্রমণ চালাচ্ছেন এবং জাতীয় গৌরবকে এতটাই সামনে নিয়ে এসেছেন যে, অত্যন্ত চড়া দাম না পেলে তা থেকে পিছু হটবেন না। দ্বিতীয়ত, কূটনীতিকরা মনে করছেন, প্রশ্নটা সেই হাঁস আগে না ডিম আগের মধ্যেই ঘুরপাক খাচ্ছে। কূটনৈতিক সংলাপের জন্য প্রয়োজন হিংসা বন্ধ হওয়া। পশ্চিম বিশ্বের পক্ষ থেকে ইউক্রেনকে অস্ত্র ও সামরিক সাহায্য বন্ধ করা। কিন্তু তাতে বিপদ বাড়তে পারে। রাশিয়া নিজেকে গুছিয়ে নিয়ে যে আরও ভয়াবহ ভাবে প্রত্যাঘাত করবে না তার নিশ্চয়তা কে দেবে? কথা হল বেড়ালের গলায় ঘণ্টাটা বাঁধবে কে এবং কত মূল্যে?

Advertisement

তৃতীয়ত, এটা তিক্ত সত্য যে পুতিনের আলোচনায় বসার জন্য, কোনও গাজর তাঁর সামনে ঝোলানো যায়নি। পশ্চিম বিশ্ব তথা গোটা পৃথিবীতেই যুদ্ধের পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া পড়তে শুরু করেছে জ্বালানি এবং খাদ্য সঙ্কটের মধ্যে দিয়ে, যা কিনা এক হিসাবে পুতিনের হাতই শক্ত করছে। তিনি অপেক্ষা করছেন জ্বালানি সঙ্কট আরও বাড়ার, যাতে খেলাটা পুরোপুরি তাঁর হাতে আসে।

এখানেই এসে যাচ্ছে চিন এবং ভারতের প্রসঙ্গ। ইউক্রেন প্রশ্নে এই দুটি দেশই কিন্তু কূটনীতির আশ্রয় নেওয়ার কথা বলছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, কূটনীতির আশ্রয় নেওয়ার জন্য সব চেয়ে বড় বাধা আপাতত ভারত এবং চিনই। বিদেশনীতিতে একটি সাধারণ প্রবচন হল, বিবাদমান পক্ষের মধ্যে কূটনৈতিক সমাধানের রাস্তায় হাঁটার জন্য প্রয়োজন প্রবল আস্থা তৈরি করা এবং এক বা একাধিক মধ্যস্থতাকারীর। কিন্তু পুতিনের ক্ষেত্রে এই আস্থার পরিবেশ কতটা তৈরি করা যাবে তা কেউ জানে না। তা হলে প্রশ্ন হল, আর্থিক নিষেধাজ্ঞার এই পশ্চিমি কৌশল ব্যর্থ হলে কূটনীতির কোন শর্ত সামনে রাখা যাবে, যে কূটনীতির মধ্যে চাপ দেওয়ার ক্ষমতাও সংযুক্ত থাকবে?

এ ক্ষেত্রে ভারত এবং চিনের সঙ্গে রাশিয়া যত দিন সফল ভাবে বাণিজ্য করে যাবে (যা যুদ্ধের সময় বহুগুণ বেড়েছে) তাদের আমেরিকার নিষেধাজ্ঞার তোয়াক্কা করার প্রয়োজন পড়বে না, আলোচনার টেবলে বসারও নয়। ফলে প্রকৃত পক্ষে এই কথাটা মাথায় না রেখে শুধুমাত্র কূটনৈতিক সমাধানের কথা আওড়ালে কাজের কাজ হবে না। চিন এবং ভারত (যাদের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক রাশিয়ার কাছে গুরুত্বপূর্ণ) যৌথ ভাবে রাশিয়ার উপর চাপ তৈরি না করলে, আলোচনার কথা বলা তাই অবান্তর বলেই মনেকরা হচ্ছে।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement