ওমিক্রন নিয়ে সতর্ক কেন্দ্র। নির্দেশ পরীক্ষা বাড়ানোর। প্রতীকী চিত্র
ভারতে এখনও মেলেনি করোনার নয়া রূপ ওমিক্রন। কেন্দ্রের তরফে এ কথা জানানো হলেও করোনার বিধিনিষেধের মেয়াদ ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত বাড়ানো হল। কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের তরফে ঘোষণা করা হয়েছে, ২৫ নভেম্বর যে নির্দেশিকা জারি করেছিল, তা কঠোর ভাবে মেনে চলতে বলা হয়েছে। দক্ষিণ আফ্রিকা থেকে কমপক্ষে ১২টি দেশে ঢুকেছে ওমিক্রন। কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যমন্ত্রী মনসুখ মাণ্ডবীয় বলেন, ‘‘আমাদের দেশে এখনও পর্যন্ত একটিও ওমিক্রন সংক্রমণ ধরা পড়েনি। আমরা সব রকম সম্ভাব্য সতর্কতা অবলম্বন করছি।’’
আন্তর্জাতিক সংবাদ সংস্থা সূত্রে খবর, দক্ষিণ আফ্রিকা ঘোষণা করার পরে সর্বপ্রথম করোনার এই রূপটি বেলজিয়ামের এক পর্যটকের শরীরে মেলে। তার পরে একে একে ব্রিটেন, জার্মানি, ইটালি, নেদারল্যান্ডস, চেক প্রজাতন্ত্রের মতো দেশে তা ছড়িয়েছে। এই সব দেশে যাঁরা দক্ষিণ আফ্রিকা থেকে ফিরেছিলেন, তাঁদের শরীরেই ওই নয়া রূপটি ধরা পড়েছে। মোদী সরকারের দাবি, আপাতত এই তালিকায় নেই ভারত। তবে কোনও ভাবেই যাতে ঢিলেঢালা মনোভাব না হয়, তার জন্য বিধিনিষেধের মেয়াদ বাড়ানো হল বলেই জানানো হয়েছে কেন্দ্রের তরফে।
বস্তুত, ওমিক্রনের সংক্রমণ ঠেকাতে সম্প্রতি রাজ্য এবং কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলগুলিকে অতি সতর্ক হতে নির্দেশ দিয়েছিল কেন্দ্র। যার প্রথম পদক্ষেপ হিসেবে অবিলম্বে করোনা পরীক্ষা বাড়াতে বলা হয়েছিল। পাশাপাশি যে এলাকাগুলিতে সাম্প্রতিক কালে করোনা সংক্রমণ ধরা পড়েছে, সেই সব এলাকাতেও নজরদারি বাড়ানোর নির্দেশ দিয়েছে কেন্দ্র। রবিবার কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য সচিব রাজেশ ভূষণ এ বিষয়ে চিঠি দেন রাজ্য এবং কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলগুলির মুখ্যসচিবদের। ওই চিঠিতে বিশেষ ভাবে জোর দেওয়া হয়েছে বিদেশ থেকে এ দেশের বিমানবন্দরে নামা যাত্রীদের উপর। কেন্দ্রের নির্দেশিকায় বলা হয়েছে, কোন কোন দেশ থেকে বিপদ আসতে পারে তার একটা তালিকা ইতিমধ্যেই তৈরি করেছে তারা। রাজ্য প্রশাসন যেন ওই তালিকা মাথায় রেখে কড়া ব্যবস্থা নেয়। এমনকি বিদেশে থেকে আসা বিমানযাত্রীরা ভারতে নামার আগে আর কোন কোন দেশে গিয়েছিলেন, তারও নথি পরীক্ষা করতে বলা হয়েছে প্রশাসনকে।
সোমবারই ভারতে আসা আন্তর্জাতিক বিমানযাত্রীদের জন্য সংশোধিত নির্দেশিকা জারি করে কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যমন্ত্রক। ১ ডিসেম্বর রাত ১২টা থেকে এই নির্দেশিকা কার্যকর হবে বলে জানানো হয়। ওই নির্দেশিকা অনুযায়ী, ওমিক্রন সংক্রমণের নিরিখে ‘ঝুঁকিতে থাকা দেশগুলি’ থেকে আসা যাত্রীদের বিমানবন্দরে নামার সঙ্গে সঙ্গে বাধ্যতামূলক কোভিড পরীক্ষা করাতে হবে। এই পরীক্ষায় কারও পজিটিভ ধরা পড়লে, তাঁকে নিভৃতবাসে যেতে হবে। নমুনায় জিনের সজ্জারীতিও পরীক্ষা করে দেখা হবে। বিমান ওঠার ৭২ ঘণ্টা আগে কোভিড পরীক্ষা করালেও, ভারতে নামার পর ফের পরীক্ষা করা হবে। একই সঙ্গে ডবলা হয়েছিল, যে যাত্রীদের পরীক্ষার ফল নেগেটিভ হবে, তাঁদেরও সাত দিন নিভৃতবাসে থাকতে হবে। আট দিনের মাথায় তাঁদের ফের কোভিড পরীক্ষা করানো হবে। ঝুঁকির বাইরের দেশগুলি থেকে বিমানে আসা যাত্রীদের পাঁচ শতাংশকে টেস্ট করানো হবে।
করোনাভাইরাসের নতুন ‘বি.১.১.৫২৯’ প্রজাতিকে উদ্বেগজনক বা ‘ভেরিয়েন্ট অব কনসার্ন’ হিসেবে চিহ্নিত করে সেটিকে ‘ওমিক্রন’ নাম দেয় বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (হু)।হু জানিয়েছে, নয়া রূপের ভাবগতিক বুঝতে আরও কয়েক সপ্তাহ সময় লাগবে। তবে বিবৃতিতে তারা জানিয়েছিল, এই রূপটির বিপজ্জনক মিউটেশন ঘটেছে। বস্তুত, সেই কারণেই চিহ্নিত হওয়ার প্রায় সঙ্গে সঙ্গে ঝুঁকির সর্বোচ্চ ধাপে রাখা হয় করোনার এই নয়া রূপকে।
হু কোভিডের নয়া রূপকে ‘উদ্বেগজনক’ বললেও বিশেষজ্ঞদের একাংশ বলছেন, ওমিক্রন নিয়ে কোনও সিদ্ধান্ত নেওয়ার মতো যথেষ্ট তথ্য প্রকাশ্যে আসেনি। গবেষণা চলছে। ফলে অযথা আতঙ্কিত হওয়ার কারণ নেই। তবে সচেতনতা জরুরি।