মণিপুর হিংসার একটি ছবি। —ফাইল চিত্র।
অশান্তি যেন থামতেই চাইছে না মণিপুরে। রবিবার সারা রাজ্যে ‘একতা দিবস’ পালিত হয়। ২০০১ সালের ১৮ জুন মণিপুরে হওয়া একটি হিংসাত্মক ঘটনায় নিহতদের শ্রদ্ধা জানাতেই প্রতি বছর এই দিবস পালিত হয়ে আসছে। কিন্তু রবিবার রাতেও রাজ্যের নানা প্রান্তে হিংসা ছড়িয়ে পড়ার খবর এসেছে। অজ্ঞাতপরিচয় দুষ্কৃতীদের গুলিতে জখম হয়েছেন এক সেনাকর্মী। তাঁকে স্থানীয় একটি সেনা হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়েছে। এ ছা়ড়াও নতুন করে অশান্তির খবর এসেছে ইম্ফল পশ্চিম এবং কাংপোকপি জেলা থেকে।
শনিবার এবং রবিবার রাতে সব চেয়ে বেশি হিংসার খবর এসেছে ইম্ফল পশ্চিম জেলার চিংমাং গ্রাম থেকে। এই গ্রামে টহল দেওয়ার সময়েই এক দল দুষ্কৃতীর গুলিতে জখম হন ওই সেনাকর্মী। তাঁকে লেইমাখং-এর সেনা হাসপাতালে ভর্তি করানো হলে চিকিৎসকরা জানান, তাঁর শারীরিক পরিস্থিতি স্থিতিশীল। ওই গ্রামেই অন্তত তিনটি বাড়িতে আগুন ধরিয়ে দিয়েছে দুষ্কৃতীরা। সংবাদ সংস্থা পিটিআই সূত্রে খবর, সেই অগ্নিসংযোগের ঘটনা রুখতে গিয়েই গুলিতে জখম হন ওই সেনাকর্মী। আগুন নেভানোর কাজে নামে সেনা। সেনার তরফে একটি বিবৃতি দিয়ে এই খবরের সত্যতা স্বীকার করে নেওয়া হয়। জানানো হয়, ওই গ্রামের পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পেরেছে সেনা।
শনিবার এবং রবিবার রাতে কাংপোকপি জেলার একটি অঞ্চলে দু’টি সরকারি প্রতিষ্ঠানে আগুন জ্বালিয়ে দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে কুকি জঙ্গিদের বিরুদ্ধে। আবার মণিপুর প্রশাসন সূত্রে খবর, কুকি অধ্যুষিত হেংজাং গ্রামেও রবিবার মধ্যরাতে আগুন ধরিয়ে দেয় অজ্ঞাতপরিচয় দুষ্কৃতীরা। মণিপুরে প্রায় দেড় মাস ধরে চলা হিংসায় এখনও পর্যন্ত ১০০ জনেরও বেশি মানুষ প্রাণ হারিয়েছেন।
উল্লেখ্য, গত ৩ মে মণিপুরের জনজাতি ছাত্র সংগঠন ‘অল ট্রাইবাল স্টুডেন্টস ইউনিয়ন অফ মণিপুর’ (এটিএসইউএম)-এর কর্মসূচি ঘিরে উত্তর-পূর্বের এই রাজ্যে অশান্তির সূত্রপাত। মণিপুর হাই কোর্ট মেইতেইদের তফসিলি জনজাতির মর্যাদা দেওয়ার বিষয়টি নিয়ে রাজ্য সরকারকে বিবেচনা করার নির্দেশ দিয়েছিল। এর পরেই জনজাতি সংগঠনগুলি তার বিরোধিতায় পথে নামে। আর সেই ঘটনা থেকেই সংঘাতের সূচনা হয় সেখানে। মণিপুরের আদি বাসিন্দা হিন্দু ধর্মাবলম্বী মেইতেই জনগোষ্ঠীর সঙ্গে কুকি, জ়ো-সহ কয়েকটি তফসিলি জনজাতি সম্প্রদায়ের (যাদের অধিকাংশই খ্রিস্টান) সংঘর্ষ ঠেকাতে গত ৬ মে মণিপুরের আইনশৃঙ্খলা রক্ষার দায়িত্ব কাঁধে তুলে নিয়েছিল নরেন্দ্র মোদী সরকার। নামানো হয় সেনা এবং অসম রাইফেলস বাহিনীকে। কিন্তু তাতে কোনও ফল মেলেনি বলে অভিযোগ। হিংসার কারণে বহু মানুষের মৃত্যু হয়েছে। মণিপুরের অনেক বাসিন্দা ঘরছাড়া। কেউ সরকারি ত্রাণ শিবিরে আশ্রয় নিয়েছেন, কেউ রাজ্য ছেড়ে পালিয়ে গিয়েছেন। তবে মণিপুরের পরিস্থিতি সময়ের সঙ্গে আরও জটিল হয়ে চলেছে।