অশান্ত মণিপুরে টহল সশস্ত্র বাহিনীর। —ফাইল চিত্র।
মণিপুরের সাম্প্রতিক অশান্তির আবহেই সে রাজ্য সশস্ত্র বাহিনীকে আপাতত বহাল রাখারই সিদ্ধান্ত নিল কেন্দ্রীয় সরকার। গত ৩ মে উত্তর-পূর্বের এই রাজ্যে হিংসাত্মক ঘটনার খবর প্রকাশ্যে আসার পরই সেখানে সশস্ত্র বাহিনী মোতায়েন করা হয়েছিল। এর আগে সূত্র মারফত জানা গিয়েছিল, ১০ জুন পর্যন্ত মণিপুরে সশস্ত্র বাহিনী মোতায়েন থাকবে। কিন্তু বর্তমান পরিস্থিতিতে গোটা জুন মাসেই মণিপুরে কেন্দ্রীয় সশস্ত্র বাহিনীর উপস্থিতি বজায় রাখতে চাইছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক।
এখন মণিপুরে মোট ১১৪ কোম্পানি কেন্দ্রীয় সশস্ত্র বাহিনী রয়েছে। তার মধ্যে ৫২ কোম্পানি সিআরপিএফ, দশ কোম্পানি র্যাপিড অ্যাকশন ফোর্স, ৪৩ কোম্পানি বিএসএফ, চার কোম্পানি আইটিবিপি এবং পাঁচ কোম্পানি এসএসবি মোতায়েন করে রাখা হয়েছে। চলতি সপ্তাহেই মণিপুরে আরও ৩০ কোম্পানি আধা সেনা মোতায়েন করে কেন্দ্রীয় সরকার। এই প্রসঙ্গে সশস্ত্র বাহিনীর এক উচ্চপদস্থ আধিকারিক একটি সংবাদমাধ্যমকে জানিয়েছেন, কয়েক মাস মণিপুরে থাকতে হতে পারে, এমনটা ধরে নিয়েই তাঁরা যাবতীয় প্রস্তুতি চালাচ্ছেন। বাহিনীকে পরিচালনা করার জন্য ডেপুটি কম্যান্ডান্ট পদমর্যাদার ২০ জন আধিকারিককে মণিপুরে রাখা হয়েছে।
গত ৩ মে জনজাতি ছাত্র সংগঠন ‘অল ট্রাইবাল স্টুডেন্টস ইউনিয়ন অফ মণিপুর’ (এটিএসইউএম)-এর কর্মসূচি ঘিরে অশান্তির সূত্রপাত হয়েছিল উত্তর-পূর্বাঞ্চলের ওই রাজ্যে। মণিপুর হাই কোর্ট মেইতেইদের তফসিলি জনজাতির মর্যাদা দেওয়ার বিষয়টি নিয়ে রাজ্য সরকারকে বিবেচনা করার নির্দেশ দিয়েছিল। এর পরেই জনজাতি সংগঠনগুলি তার বিরোধিতায় পথে নামে। আর সেই ঘটনা থেকেই সংঘাতের সূচনা হয় সেখানে। আদি বাসিন্দা মেইতেই জনগোষ্ঠীর সঙ্গে কুকি, জ়ো-সহ কয়েকটি তফসিলি জনজাতি সম্প্রদায়ের সংঘর্ষ ঠেকাতে গত ৬ মে বিজেপি শাসিত মণিপুরের আইনশৃঙ্খলা রক্ষার দায়িত্ব কাঁধে তুলে নিয়েছিল মোদী সরকার। নামানো হয় সেনা এবং অসম রাইফেলস বাহিনীকে। সামগ্রিক নিরাপত্তা ব্যবস্থা তদারকের ভার দেওয়া হয় সিআরপিএফের প্রাক্তন প্রধান কুলদীপ সিংহকে। তাঁর অধীনে এডিজিপি (ইন্টেলিজেন্স) আশুতোষ সিংহকে সমগ্র নিরাপত্তা ব্যবস্থার অপারেশনাল কমান্ডার-এর দায়িত্ব দেওয়া হয়। কিন্তু ১ মাস কেটে গেলেও হিংসা থামেনি। মণিপুর-হিংসায় এখনও পর্যন্ত প্রায় ১০০ জনের মৃত্যু হয়েছে। গুরুতর আহতের সংখ্যা প্রায় ৫০০। গোষ্ঠীহিংসার জেরে ঘরছাড়া হয়েছেন ২৫ হাজারেরও বেশি মানুষ!