অধীর-সুস্মিতাদের নিশানায় বিজেপি
Manipur Violence

‘ইন্ডিয়া’র সফরের দিনে নির্যাতিতাদের টাকা রাজ্যপালের

দু’দিনের সফরে মণিপুরে আসা সম্মিলিত বিরোধী দলগুলির জোট ‘ইন্ডিয়া’র ২১ জন সাংসদ এ দিন প্রথমে চূড়াচাঁদপুরে যান। কুকিদের দু’টি ত্রাণ শিবির ঘুরে দেখে তাঁরা মইরাংয়ে মেইতেইদের দু’টি শিবির ঘুরে দেখেন।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

গুয়াহাটি শেষ আপডেট: ৩০ জুলাই ২০২৩ ০৮:২৩
Share:

মণিপুরের অশান্ত পরিস্থিতি। —ফাইল চিত্র।

বিরোধী জোট ‘ইন্ডিয়া’র প্রতিনিধি দলের মণিপুর সফর ও কাংপোকপির ভাইরাল ভিডিয়োর তদন্তভার সিবিআই হাতে নেওয়ার দিনেই শনিবার কুকি শরণার্থী শিবিরে হাজির হয়ে ভাইরাল ভিডিয়োর দুই মহিলার হাতে ১০ লক্ষ টাকা করে চেক তুলে দিলেন রাজ্যপাল অনুসূয়া উইকে।

Advertisement

সিবিআই শনিবার সরকারি ভাবে ওই ভাইরাল ভিডিয়োর তদন্ত হাতে নিয়েছে। ইতিমধ্যে মণিপুরের সংঘর্ষ সংক্রান্ত ৬টি মামলা তাদের হাতে রয়েছে। বিরোধী সাংসদেরাও আজ চূড়াচাঁদপুর সফর করেন। কিন্তু তার আগেই রাজ্য সরকারের প্রধান হিসেবে দ্বিতীয় বার চূড়াচাঁদপুর সফর করে, কোনও আগাম ঘোষণা বা ক্ষতিপূরণের তকমা না দিয়েই নির্যাতিতাদের হাতে ওই চেক তুলে দেন অনুসূয়া। সেই সঙ্গে তিনি যুযুধান দুই পক্ষকেই আলোচনায় বসে মিলেমিশে থাকা, শান্তি ও সম্প্রীতি ফেরানোর অনুরোধ করে বলেন, ‘‘দুই বোনের প্রতি সহমর্মিতা দেখাতেই তাঁদের সঙ্গে ব্যক্তিগত ভাবে দেখা করতে এসেছিলাম। জানি, অবরোধের জেরে শিবিরে সামগ্রী পৌঁছতে সমস্যা হচ্ছে। তাই আমার সঙ্গে কপ্টারে যতটা পেরেছি ওষুধ, মশারি, ত্রিপল, বাচ্চাদের বিস্কুট ইত্যাদি এনেছি।’’

এ দিকে দু’দিনের সফরে মণিপুরে আসা সম্মিলিত বিরোধী দলগুলির জোট ‘ইন্ডিয়া’র ২১ জন সাংসদ এ দিন প্রথমে চূড়াচাঁদপুরে যান। কুকিদের দু’টি ত্রাণ শিবির ঘুরে দেখে তাঁরা মইরাংয়ে মেইতেইদের দু’টি শিবির ঘুরে দেখেন। কথা বলেন শিবিরবাসীদের সঙ্গেও। জেনে নেন তাঁদের সমস্যা ও অভিজ্ঞতার কথা। দলে আছেন সুস্মিতা দেব, গৌরব গগৈ, অধীর রঞ্জন চৌধুরী, এ এ রহিম, কানিমোঝি, সন্দোশ কুমার পি প্রমুখ।

Advertisement

গৌরব পরে বলেন, ‘‘আজ আমাদের বদলে সর্বদলীয় প্রতিনিধিদলের নেতৃত্ব দিয়ে প্রধানমন্ত্রীর মণিপুরে আসা উচিত ছিল। আমরা সানন্দে সেই দলের অংশ হতাম। কিন্তু প্রধানমন্ত্রী ও তাঁর এনডিএ শরিকরা যখন নিখোঁজ, তখন ইন্ডিয়া জোট মণিপুরের মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছে।’’ আরজেডি সাংসদ মনোজ ঝা বলেন, প্রধানমন্ত্রীকে বলতে চাই, আমরা সেই চেষ্টা করছি, যা তাঁর ও তাঁর দলের করা উচিত ছিল।’’

সুস্মিতা বলেন, মণিপুরের বিপর্যয়ের জন্য দায়ী বিজেপির ডবল ইঞ্জিন সরকার। সেখানকার ঘটনা বিজেপি ও প্রধানমন্ত্রীর মুখোশ খুলে দিয়েছে। অধীর চৌধুরী ও গৌরব গগৈ বলেন, আমরা যতগুলি সম্ভব ত্রাণ শিবির ঘুরে দেখার চেষ্টা করব। ক্ষতিগ্রস্তরা সরকারের তরফে ঠিক মতো সাহায্য, আশ্রয় ও নিরাপত্তা পাচ্ছেন কি না, পুনর্বাসনের ব্যবস্থা হচ্ছে কি না, তা আমরা দেখতে চাই। তাঁদের বক্তব্য, মণিপুর সমস্যার কথা, জাতিগত সংঘর্ষের কথা এখন আন্তর্জাতিক মঞ্চে আলোচিত হচ্ছে। তাই মণিপুর সরকার যে ভাবে একে নিছক আইন-শৃঙ্খলার সমস্যা বলে আড়াল করা বা লঘু করার চেষ্টা করছে, তা ঠিক নয়। সরকারের কাছে দৃঢ়, মানবিক ও সময়োপযোগী পদক্ষেপ করার অনুরোধ জানাচ্ছে ইন্ডিয়া জোট।

কুকিদের যৌথ মঞ্চ আইটিএলএফ এ দিন ইন্ডিয়া জোটের কাছে স্মারকপত্র দিয়ে দাবি করে, সংঘর্ষে নিহতদের মধ্যে ১১৯ জন, অর্থাৎ দুই-তৃতীয়াংশই কুকি। রাজ্য থেকে কুকিদের মুছে ফেলতে চাইছে ক্ষমতাশালী মেইতেইরা। তাদের ৭ হাজার বাড়ি ও ৩৫৯টি গির্জা পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। বাস্তুচ্যুত হয়েছেন ৪০ হাজারের বেশি কুকি। রাজ্যে বিভিন্ন অস্ত্রাগার থেকে অবাধে লুঠ হওয়া সরকারি অস্ত্র কুকিদের বিরুদ্ধে ব্যবহৃত হচ্ছে। কিন্তু রাষ্ট্রপতি শাসন জারি না হওয়ায় সেনাবাহিনী স্বাধীন ভাবে কাজ করতে পারছে না। তারা জানায়, এত রক্তপাত,আতঙ্ক ও স্থায়ী অবিশ্বাসের পরে আর কখনও এক সঙ্গে থাকা সম্ভব নয়। তাই শান্তি ফেরাতে হলে রাজনৈতিক ভাবে আমাদের আলাদা করতেই হবে। অবিলম্বে জারি করতে হবে রাষ্ট্রপতি শাসন।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement