Manipur Clash

মণিপুর-বিক্ষোভে মোদীকে নিশানা করায় ‘আহত’ হন মুখ্যমন্ত্রী, ইস্তফার সিদ্ধান্ত সে কারণেই

মণিপুরের মুখ্যমন্ত্রী এন বীরেন সিংহ বলেন, “আমি খুবই কষ্ট পেয়েছিলাম। নিজেই নিজেকে প্রশ্ন করলাম যে, আমি কি কিছু ভুল করেছি? কিন্তু আমার যা করার ছিল, আমি করেছি।”

Advertisement

আনন্দবাজার অনলাইন ডেস্ক

ইম্ফল শেষ আপডেট: ০২ জুলাই ২০২৩ ০৮:৪৯
Share:

মণিপুরের মুখ্যমন্ত্রী এন বীরেন সিংহ। —ফাইল চিত্র।

মণিপুরের মুখ্যমন্ত্রী হিসাবে ইস্তফা দিতে গিয়েও শেষ মুহূর্তে কেন সিদ্ধান্ত বদল করেছিলেন, তার কারণ জানিয়েছিলেন বীরেন সিংহ। কেন ইস্তফা দিতে চেয়েছিলেন, তার কারণও এ বার প্রকাশ্যে আনলেন তিনি। শনিবার সর্বভারতীয় সংবাদমাধ্যম ‘এনডিটিভি’কে দেওয়া একটি সাক্ষাৎকারে মণিপুরের মুখ্যমন্ত্রী জানিয়েছেন, সে রাজ্যের জাতিহিংসায় যে ভাবে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকে নিশানা করা হচ্ছে, তাতে আঘাত পেয়েছিলেন তিনি। ভেবেছিলেন, তাঁর সঙ্গে কেউ নেই। কিন্তু পরে সমর্থকদের ‘ভালবাসা’তেই তিনি সিদ্ধান্ত বদল করেন বলে জানিয়েছেন বীরেন।

Advertisement

বীরেনের কথায়, “রাজ্যে এক সঙ্কটজনক পরিস্থিতিতে কেউ কেউ আমাদের নেতাদের কুশপুতুল দাহ করছিল। আমার কুশপুতুল দাহ করা হলে কিছু যায় আসে না। কিন্তু ওরা প্রধানমন্ত্রী মোদীর কুশপুতুলও দাহ করছিল। উনি কী করেছেন? বিজেপি অফিসও পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে।” রাজ্যের কিছু বাসিন্দার আচরণেও তিনি আঘাত পেয়েছেন বলে জানিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। মণিপুরে অবৈধ অনুপ্রবেশ করার জন্য কুকি সম্প্রদায়ের মানুষেরা তাঁকে ‘অপমান’ করছে বলে মনে করছেন বীরেন। এই প্রসঙ্গে তিনি বলেন, “আমি খুবই কষ্ট পেয়েছিলাম। নিজেই নিজেকে প্রশ্ন করলাম যে, আমি কি কিছু ভুল করেছি? আমার যা করার ছিল, আমি করেছি।” এই প্রসঙ্গেই তাঁর সংযোজন, “আমি অবৈধ অনুপ্রবেশ আর চোরাচালান বন্ধ করেছি বলে কুকি সম্প্রদায়ের ভাইয়েরা আমায় অপমান করছে।”

পদত্যাগ করার সিদ্ধান্ত বদলের নেপথ্যে সমর্থকদের ভালবাসা রয়েছে বলে জানিয়েছেন বীরেন। এই প্রসঙ্গে তিনি বলেন, “আমি ভেবেছিলাম সবাই আমাকে ছেড়ে চলে গিয়েছে। কিন্তু বাড়ির বাইরে বেরিয়ে দেখি বহু মানুষ আমার জন্য দাঁড়িয়ে আছেন। আমায় এতটা ভালবাসার জন্য আমি ঈশ্বর এবং আমার সমর্থকদের ধন্যবাদ জানাতে চাই। এই ভালবাসার কারণেই আমি সিদ্ধান্ত বদল করেছি।”

Advertisement

শুক্রবার বীরেনের ইস্তফা দেওয়াকে কেন্দ্র করে নাটকীয় পরিস্থিতি তৈরি হয়। দুপুর ২টো ২০ মিনিটে ২০ জন দলীয় বিধায়ককে নিয়ে রাজভবনের উদ্দেশে রওনা দিয়েছিলেন মণিপুরের বিজেপি শাসিত সরকারের মুখ্যমন্ত্রী বীরেন। কিন্তু ইম্ফলে নিজের বাসভবন থেকে বেরিয়ে তিনি দেখেন, সমর্থকেরা তাঁর বাড়ি ঘিরে রেখে দিয়েছেন। সমর্থকদের দাবি ছিল, ইস্তফা দেওয়ার সিদ্ধান্ত বদলাতে হবে বীরেনকে। এর পর নিজের বাসভবনে ফিরে যান মুখ্যমন্ত্রী। বাইরে বেরিয়ে আসতে দেখা যায় মণিপুরের পূর্তমন্ত্রীকে। তিনি ইস্তফাপত্রটি হাতে নিয়ে সমবেত জনতার সামনে পাঠ করতে শুরু করেন। সেই সময়ই কিছু মহিলা সমর্থক মন্ত্রীর হাত থেকে ইস্তফাপত্রটি ছিনিয়ে নিয়ে ছিঁড়ে ফেলে দেন। অশোক স্তম্ভের সিলমোহর দেওয়া সেই ছেঁড়া ইস্তফাপত্রের ছবি সমাজমাধ্যমে ভাইরাল হয়। যদিও এই ছবির সত্যতা যাচাই করেনি আনন্দবাজার অনলাইন।

ইস্তফা-রঙ্গের ইতি অবশ্য এখানেই হয়নি। মণিপুর সরকারের অন্যতম মুখপাত্র সাপাম রঞ্জন সিংহ জানান, সমর্থকদের চাপের মুখে কিছু মন্ত্রী মুখ্যমন্ত্রীর ইস্তফার সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনা করার আর্জি জানান। তার পর ওই মন্ত্রীরা মুখ্যমন্ত্রীর বাসভবনের বাইরে বেরিয়ে জানান, মুখ্যমন্ত্রী আপাতত কাজ চালিয়ে যেতে রাজি হয়েছেন।

প্রসঙ্গত, মণিপুরে দেড় মাসেরও বেশি সময় ধরে চলা ধারাবাহিক হিংসায় নিহতের স‌ংখ্যা দেড়শো ছুঁতে চলছে। ঘরছাড়া প্রায় ৫০ হাজার মানুষ! গত শনিবার কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ মণিপুর পরিস্থিতি নিয়ে সর্বদল বৈঠক করলেও তার পরেও হিংসার একাধিক ঘটনা ঘটেছে। গত ৩ মে মণিপুরের জনজাতি ছাত্র সংগঠন ‘অল ট্রাইবাল স্টুডেন্টস ইউনিয়ন অফ মণিপুর’ (এটিএসইউএম)-এর বিক্ষোভ-মিছিল ঘিরে উত্তর-পূর্বের ওই রাজ্যে অশান্তির সূত্রপাত। মণিপুর হাই কোর্ট মেইতেইদের তফসিলি জনজাতির মর্যাদা দেওয়ার বিষয়টি রাজ্য সরকারকে বিবেচনা করার নির্দেশ দিয়েছিল। এর পরেই জনজাতি সংগঠনগুলি তার বিরোধিতায় পথে নামে। আর সেই ঘটনা থেকেই সংঘাতের সূচনা হয় সেখানে।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement