দিব্যা পাহুজা। —ফাইল চিত্র।
কলকাতা থেকে গ্রেফতার গুরুগ্রামের মডেল দিব্যা পাহুজার খুনের অভিযোগে পলাতক তরুণ। অভিযুক্তের নাম বলরাজ গিল। বৃহস্পতিবার কলকাতা বিমানবন্দর থেকে তাঁকে গ্রেফতার করা হয়েছে। পুলিশ সূত্রে খবর, বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় বিমানে অন্যত্র পালানোর চেষ্টা করছিলেন বলরাজ। বিমানে ওঠার আগে তাঁকে হাতেনাতে ধরে পুলিশ।
পুলিশ সূত্রে খবর, দিব্যাকে খুনের পর দেহ লোপাটের অভিযোগ উঠে এসেছে বলরাজের বিরুদ্ধে। বলরাজের সঙ্গে রবি বাঙ্গা নামেও এক অভিযুক্তের নাম প্রকাশ্যে এসেছে। পুলিশ জানিয়েছে, দিব্যার দেহ লোপাট করতে বলরাজকে সাহায্য করেছিলেন রবি। দেহ লোপাট করার পর বলরাজ এবং রবি দু’জনেই গা ঢাকা দিয়েছিলেন। বলরাজকে গ্রেফতার করা হলেও রবি এখনও পলাতক বলে জানায় পুলিশ। তাঁকে গ্রেফতার করার জন্য পুলিশ তদন্ত চালাচ্ছে।
মডেলের দেহ এখনও উদ্ধার করতে পারেনি পুলিশ। দিব্যার মৃত্যু নিয়ে ক্রমশ দানা বাঁধছে রহস্য। দিব্যার দেহই নয়, হদিস মিলছে না তাঁর মোবাইল ফোনেরও। দিব্যাকে খুনের পর যে গাড়ি করে তাঁর দেহ নিয়ে যাওয়া হয়েছিল, সেই গাড়িটির হদিস মিলেছে পঞ্জাবের পটিয়ালার একটি বাসডিপো থেকে। যে রাস্তা দিয়ে গাড়ি করে দিব্যার দেহ নিয়ে যাওয়া হয়েছে, পুলিশ সেই সব রাস্তার সিসিটিভি ফুটেজ খতিয়ে দেখছে। পুলিশের অনুমান, ঘর্ঘরা নদীতে দিব্যার দেহ ভাসিয়ে দেওয়া হয়েছে।
গত মঙ্গলবার রাতে গুরুগ্রামের একটি হোটেলে খুন হন দিব্যা। তার পর তাঁর দেহ লোপাট করার অভিযোগ উঠেছে হোটেলমালিক অভিজিৎ সিংহ এবং তাঁর কয়েক জন সঙ্গীর বিরুদ্ধে। পুলিশ সূত্রে খবর, সেই হোটেলের মালিক অভিজিৎ সিংহের সঙ্গে নাকি লিভ ইন সম্পর্কে ছিলেন দিব্যা। জেরায় অভিজিৎ তাদের কাছে দাবি করেছেন, দিব্যার মোবাইলে তাঁর অনেক অশ্লীল ছবি ছিল। সেই ছবি দেখিয়ে বার বার অভিজিৎকে হুমকি দিতেন দিব্যা। তাঁর কাছে মোবাইলের পাসওয়ার্ডও চেয়েছিলেন অভিজিৎ। কিন্তু সেই পাসওয়ার্ড না দেওয়ায় দিব্যাকে গুলি করে খুন করেছেন তিনি। অভিজিতের এই দাবির সত্যতা কতটা, তা খতিয়ে দেখছে পুলিশ।
অভিজিৎ পুলিশের কাছে আরও দাবি করেছেন যে, দিব্যার দেহ লোপাটের জন্য দুই সঙ্গীকে ১০ লক্ষ টাকা দিয়েছিলেন। কিন্তু কোথায় সেই দেহ লোপাট করা হয়েছে, সেই তথ্য এখনও বার করতে পারেনি পুলিশ। এই ঘটনায় অভিজিৎ ছাড়াও তাঁর হোটেলের দুই কর্মী ওম প্রকাশ এবং হেমরাজকেও গ্রেফতার করা হয়েছে। এ ছাড়াও এই খুনের ঘটনায় জড়িত সন্দেহে মেঘা নামে এক তরুণীকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। তাদের দাবি, দিব্যাকে খুন করার কাজে এই তরুণী সহযোগিতা করেছিলেন। দিল্লির মিতরাও গ্রামে থাকেন তিনি।
শুধু তাই-ই নয়, মেঘার সঙ্গে অভিজিৎ সম্পর্কে রয়েছেন বলেও জানতে পেরেছে পুলিশ। হরিয়ানা পুলিশ সূত্রে খবর, সাত বছর জেলে থাকার পর ২০২৩ সালের জুন মাসে জামিনে মুক্তি পেয়েছিলেন দিব্যা। জেলে থাকাকালীন তাঁর সঙ্গে পরিচয় হয় গ্যাংস্টার বিন্দর গুর্জরের। সেই গ্যাংস্টারের সূত্র ধরেই অভিজিতের সঙ্গে আলাপ হয়েছিল দিব্যার। গত তিন মাস ধরে তাঁরা লিভ ইন সম্পর্কে ছিলেন। পুলিশ সূত্রে খবর, লিভ ইন সম্পর্কে থাকার সময় অভিজিতের অশ্লীল ভিডিয়ো এবং ছবি তুলে রেখেছিলেন দিব্যা। অভিযুক্ত অভিজিতের দাবি, সেই ছবি এবং ভিডিয়ো দেখিয়ে তাঁকে হুমকি দিতেন দিব্যা। হুমকি দিয়ে প্রায়ই অভিজিতের কাছ থেকে টাকা আদায় করতেন দিব্যা। এ বার বিপুল পরিমাণ টাকা দাবি করেছিলেন দিব্যা। ২ জানুয়ারি দিব্যাকে নিজের হোটেলে নিয়ে গিয়েছিলেন অভিজিৎ। সেখানে সেই ছবি এবং ভিডিয়ো নিয়ে দু’জনের মধ্যে বচসা হয়। দিব্যাকে ওই ভিডিয়ো এবং ছবি মুছে ফেলতে বলেছিলেন অভিজিৎ। দিব্যার মোবাইলের পাসওয়ার্ডও চেয়েছিলেন অভিজিৎ। কিন্তু পাসওয়ার্ড না দেওয়ায় এবং ছবি, ভিডিয়ো মুছতে অস্বীকার করায়, দিব্যাকে গুলি করে খুন করেন বলে জেরায় পুলিশের কাছে স্বীকার করেছেন অভিজিৎ।