Ladakh

ধুতি-পঞ্জাবিতে ২১ কিলোমিটার দৌড় লাদাখে

বিপ্লব বর্তমানে নিমতা থানার অধীন সিভিক হেডকোয়ার্টারে কর্মরত। ছুটি নিলে ‘নো ওয়ার্ক নো পে’ নীতি মেনে চলতে হয়। তবে অফিসের সকলের সহযোগিতায় এই সমস্যাগুলো কাটিয়ে ফেলা সম্ভব হয় বলে জানান বিপ্লব।

Advertisement

স্বর্ণাভ দেব

কলকাতা শেষ আপডেট: ১৬ সেপ্টেম্বর ২০২৩ ০৭:০১
Share:

লাদাখ ম্যারাথনে দৌড়ের শেষে বিপ্লব দাস। —নিজস্ব চিত্র।

শাড়ি পরে ব্রিটেনের ম্যারাথন দৌড়ে তাক লাগিয়ে দিয়েছিলেন মধুস্মিতা জেনা। তাঁর থেকেই অনুপ্রাণিত হয়ে এ বার বিরাটির বিপ্লব দাস লাদাখে দৌড়লেন ধুতি-পঞ্জাবি পরে। সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে প্রায় তিন হাজার মিটার উচ্চতার এই প্রতিযোগিতা ভারত তো বটেই বিশ্বেরও অন্যতম কঠিন ম্যারাথন। এত উঁচুতে প্রায় ২১ কিলোমিটারের হাফ ম্যারাথনে বাংলার সংস্কৃতি তুলে ধরাই ছিল তাঁর মূল উদ্দেশ্য। প্রায় তিন ঘণ্টায় ‘ফিনিশিং পয়েন্টে’
পৌঁছেছেন বিপ্লব।

Advertisement

তাঁর কথায়, “এই ম্যারাথনে বিশ্বের নানা দেশ থেকে বহু মানুষ অংশ নেন। আমার উদ্দেশ্য ছিল দুর্গাপুজোর আগে সকলের কাছে বাঙালি সংস্কৃতি তুলে ধরা।” বিপ্লবের পঞ্জাবিতেও ছিল আগমনির বার্তা।

প্রবল ঠান্ডায়, অক্সিজেনের স্বল্পতায় সমস্যা হয়নি? বিপ্লব বলেন, “নির্ধারিত সময়ে শেষ করতে পারব কি না, তা নিয়ে চিন্তা ছিল। উদ্বেগ আরও বেড়েছিল ম্যারাথনের তিন দিন আগে অনুশীলনে এক মহিলা মারা যাওয়ার খবর পেয়ে। তবে প্রতিকূল পরিস্থিতিতে মানিয়ে নেওয়ার জন্য সাত দিন আগে লাদাখ পৌঁছেছিলাম। এই ক’দিন টানা অনুশীলন করেছি। প্রবল ঠান্ডায় ট্রেকিংয়ের অভিজ্ঞাতাও সাহায্য করেছে আবহাওয়ার সঙ্গে মানিয়ে নিতে। তবে এই সমস্ত সমস্যার চেয়েও বড় বিষয় ছিল এত দিনের ছুটির বন্দোবস্ত করা। ছুটি যাও পেলাম, যাওয়া-আসা-থাকা-খাওয়ার অর্থ জোগাড় তো আরও কঠিন ছিল।”

Advertisement

প্রসঙ্গত, বিপ্লব বর্তমানে নিমতা থানার অধীন সিভিক হেডকোয়ার্টারে কর্মরত। ছুটি নিলে ‘নো ওয়ার্ক নো পে’ নীতি মেনে চলতে হয়। তবে অফিসের সকলের সহযোগিতায় এই সমস্যাগুলো কাটিয়ে ফেলা সম্ভব হয় বলে জানান বিপ্লব।

একটা সময়ে ফুটবলার হওয়ার স্বপ্ন দেখতেন। দ্বিতীয় ও তৃতীয় ডিভিশনেও খেলেছেন। ২০১৩ সালে প্রিমিয়ার ডিভিশনে খেলার সুযোগ আসে। কিন্তু বাবার দুর্ঘটনাই সমস্ত হিসাবনিকাশ বদলে দেয়। পরিবারের আর্থিক হাল ধরতে সিভিক পুলিশে যোগ দেন। কিছু দিন পরে ট্রেকিং শুরু। অমরনাথ গোয়েচলা, রুপকুণ্ডু ট্রেক করেছেন। এর পরে শুরু করেন সাইক্লিং। ২০২১ সালে সাইকেলে লাদাখ পাড়ি দিয়েছিলেন। পরের বছর ট্র্যায়াথলনে (দৌড়, সাঁতার, সাইক্লিং) অংশ নেন। সেই সুবাদে বাংলাদেশের টেকনাফে গিয়েছিলেন। ওই বছরের শেষে ম্যারাথনে দৌড় শুরু করেন। বেশ কয়েকটা ম্যারাথনে দৌড়ের পরে, লাদাখে অংশ নেওয়া সিদ্ধান্ত নেন। অ্যাডভেঞ্চার স্পোর্টসে আগ্রহে থাকলেও বার বার আর্থিক সমস্যা বাধা হয়ে দাড়িয়েছে। তবে ইচ্ছাশক্তি, অদম্য জেদ প্রতিবন্ধকতা তৈরি করতে পারেনি। কাজের ফাঁকেও অনুশীলন চালিয়ে গিয়েছেন বিরাটির বাসিন্দা বিপ্লব। আগামী মঙ্গলবার, ১৯ তারিখ কলকাতা ফিরছেন। কয়েক দিন কাটিয়ে আবার নেমে পড়বেন নতুন অভিযানে। দেশ-বিদেশের নানা অভিযানে অংশ নেওয়ার স্বপ্ন নিয়েই দৌড় বহাল বছর বত্রিশের এই বঙ্গসন্তানের।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement