‘ব্যক্তিগত সফরে’ মার্চ মাসেই ওড়িশা যাচ্ছেন মমতা। ফাইল চিত্র।
চলতি মাসেই ওড়িশা সফরে যেতে পারেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। নবান্ন সূত্রে জানা গিয়েছে, গেলেও এটি হবে তাঁর ‘ব্যক্তিগত সফর’। প্রশাসনিক সূত্রের খবর, ২১ মার্চ ভুবনেশ্বর পৌঁছতে পারেন মমতা। পর দিন, ২২ তারিখ পুরীর জগন্নাথ মন্দিরে পুজো দিতে যেতে পারেন মুখ্যমন্ত্রী। সফর সেই পর্যন্ত ব্যক্তিগতই থাকবে। তবে ২৩ তারিখ ওড়িশার মুখ্যমন্ত্রী নবীন পট্টনায়কের সঙ্গে একটি বৈঠক হতে পারে তাঁর। তৃণমূল সূত্রে ওই সম্ভাব্য বৈঠকের কথা জানা গেলেও এর আনুষ্ঠানিক সমর্থন শুক্রবার পর্যন্ত মেলেনি।
ওড়িশা সফরে গিয়ে প্রায় প্রতি বারই জগন্নাথ দর্শন করেছেন মমতা। ২০২০ সালে ভুবনেশ্বরে আন্তঃরাজ্য পরিষদের বৈঠকে যোগ দেওয়ার সময়েও পুরী ঘুরে গিয়েছিলেন মমতা। তার আগে ২০১৭ সালে মমতাকে পুরীর জগন্নাথ মন্দিরে ঢুকতে বাধা দেওয়ার অভিযোগ উঠেছিল সেবাইতদের একাংশের বিরুদ্ধে। তা নিয়ে রাজনৈতিক বিতর্কও হয়েছিল। তবে পুরীধামের সঙ্গে মমতার দূরত্ব তাতে কমেনি। ওড়িশায় প্রশাসনিক কাজে গিয়েও ঝটিকা সফরে শ্রীক্ষেত্র ঘুরে এসেছেন বাংলার মুখ্যমন্ত্রী। তবে জগন্নাথ দর্শনের সঙ্গে তাঁর সম্ভাব্য নবীনদর্শন নিয়ে কৌতূহল তৈরি হয়েছে জাতীয় রাজনীতিতে।
জাতীয় রাজনীতির সাম্প্রতিক ওঠাপড়ার প্রেক্ষিতে নবীনের সঙ্গে মমতার বৈঠক হলে সেটি বিশেষ তাৎপর্যপূর্ণ হবে বলেই মনে করছেন অনেকে। নবীনের নেতৃত্বাধীন বিজু জনতা দল (বিজেডি) দীর্ঘ দিন ধরে বিজেপি এবং কংগ্রেস— উভয়ের থেকেই সমদূরত্ব বজায় রাখার কৌশল নিয়ে চলছে। অন্য দিকে, বিজেপি বিরোধিতায় শান দিলেও কংগ্রেসের নেতৃত্ব নিয়ে বহু বার প্রকাশ্যেই নিজেদের অসন্তুষ্টির কথা জানিয়েছে তৃণমূল। এই আবহে বিজেপি এবং তৃণমূলনেত্রীর বৈঠক হলে সে দিকে নজর থাকবে সকলেরই।
সম্প্রতি সমমনোভাবাপন্ন দলগুলিকে এক ছাতার তলায় নিয়ে আসতে সক্রিয় হয়েছে তৃণমূল। আম আদমি পার্টি (আপ) কিংবা সমাজবাদী পার্টি (এসপি)-র মতো দলগুলির সঙ্গে যোগাযোগ রেখে চলেছে তারা। শুক্রবারেই দলের জাতীয় কার্যনির্বাহী সমিতির বৈঠকে যোগ দিতে কলকাতায় এসেছেন এসপি প্রধান অখিলেশ সিংহ যাদব। এই সফরেই কালীঘাটে মুখ্যমন্ত্রীর বাসভবনে যাওয়ার কথা তাঁর। শোনা যাচ্ছে এপ্রিল মাসে দিল্লি গিয়ে সমমনস্ক দলগুলির সঙ্গে বৈঠক করতে পারেন মমতা।
কংগ্রেসের থেকে বরাবর নিরাপদ দূরত্ব বজায় রাখা বিজেডি গত কয়েক বছরে বিজেপি বিরোধিতার প্রশ্নে কখনও আগ্রাসী পদক্ষেপ করেনি। বরং বিজেডির প্রকৃত অবস্থান নিয়ে ধন্দ তৈরি হয়েছে বিরোধী দলগুলির মধ্যেও। তবে রাজ্য রাজনীতিতে বিজেডিকে টেক্কা দিতে বিজেপিও তৎপর। সম্প্রতি ওড়িশার একটি উপনির্বাচনের ফলাফল বিজেডির অনুকূলে যায়নি। বলা হচ্ছে, এই সব অঙ্ক মাথায় রেখেই বিজেপি বিরোধিতায় আর ‘নিষ্ক্রিয়’ থাকতে চাইছেন না নবীন। তবে তৃণমূল বা আপের মতোই কংগ্রেসের নেতৃত্ব মেনে নিতে তাঁরও আপত্তি আছে। ২০২৪-এর লোকসভা নির্বাচনের আগে নবীন-মমতা বৈঠক নয়া কোনও রাজনৈতিক অঙ্ক গড়ে তোলে কিনা, সে দিকে নজর থাকবে। প্রসঙ্গত, ২০২৪ সালে লোকসভা নির্বাচনের সঙ্গেই ওড়িশায় বিধানসভা নির্বাচনও হওয়ার কথা।