mamata banerjee

মমতা, সৌগত, শরদ পওয়ার, একটি হেলিকপ্টার ও দীনেশ ত্রিবেদীর নিষ্ক্রমণ

তিনি যে তৃণমূলে খুশি নন, পওয়ারকে ফোন করে তা বলেছিলেন দীনেশ। ততদিনে দীনেশ দিল্লি পৌঁছে দল ও সাংসদপদ ছাড়ার প্রস্তুতি নিতে শুরু করেছেন।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ১৩ ফেব্রুয়ারি ২০২১ ১১:০২
Share:

—ফাইল চিত্র।

দীনেশ ত্রিবেদী যে দল ছাড়তে চলেছেন, সে ইঙ্গিত তৃণমূলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাছে পৌঁছেছিল ঘটনা ঘটার ৪৮ ঘণ্টা আগে। সরকারি কর্মসূচি-সহ বিবিধ ব্যস্ততায় সম্ভবত মমতা বিষয়টি বিস্মৃত হয়েছিলেন। অথবা তিনি আগে থেকেই দীনেশের গতিবিধি সম্পর্কে অবহিত ছিলেন। কারণ যা-ই হয়ে থাক, দলীয় স্তরে মমতার সঙ্গে আর ওই বিষয়ে কারও কোনও কথা হয়নি বলেই খবর। তার পরেই আচমকা শুক্রবার রাজ্যসভায় দীনেশের নাটকীয় ঘোষণা। যা তাৎক্ষণিকতায় সকলকেই হতচকিত করে দিয়েছিল। প্রাথমিক অভিঘাত সামলে উঠে অবশ্য তৃণমূলের অনেকে বলছেন, দীনেশের দলত্যাগ সে ভাবে কোনও প্রভাব ফেলতে পারবে না। কারণ, দীনেশ ‘জননেতা’ নন। তাঁর সঙ্গে বিশেষ লোকজন আছে বলেও শোনা বা দেখা যায় না। বরং তাঁরা এখন বলছেন, যে ভাবে মমতা লোকসভায় হেরে যাওয়ার পরেও দীনেশকে রাজ্যসভায় নিয়ে এসেছিলেন, তার প্রতিদান দিতে পারলেন না এই অবাঙালি রাজনীতিক। তিনিও ‘বিশ্বাসঘাতক’-দের দলেই নাম লেখালেন!

Advertisement

তবে পাশাপাশিই তৃণমূলের প্রথমসারির নেতাদের বড় অংশ এটাও মেনে নিচ্ছেন যে, দীনেশ একটি ‘গুগলি’ দিয়েছেন। ভরা রাজ্যসভায় যে ভাবে তিনি দল এবং সাংসদপদ ছাড়ার কথা ঘোষণা করেছেন, তা সাম্প্রতিক অতীতে নজিরবিহীন। যার ফলে বিষয়টি সর্বভারতীয় স্তরেও নজর কেড়েছে। কিন্তু ঘটনা হল, বল যে ঘুরবে, উইকেট দেখে তার আঁচ পাওয়া গিয়েছিল। সেই আন্দাজ পেয়েছিলেন ধুরন্ধর মরাঠা রাজনীতিবিদ শরদ পাওয়ার। যিনি একদা, ঘটনাচক্রে, ভারতীয় ক্রিকেট কন্ট্রোল বোর্ডের সভাপতি ছিলেন।

তিনি যে তৃণমূলে খুশি নন, অন্য কয়েকজন নেতার পাশাপাশি পওয়ারকে ফোন করে সে কথা বলেছিলেন দীনেশ। ততদিনে দীনেশ দিল্লি পৌঁছেছেন এবং দল ও সাংসদপদ ছাড়ার প্রস্তুতি নিতে শুরু করেছেন। বাছাই কিছু জাতীয় রাজনীতিককে দীনেশ তাঁর অসন্তোষের কথা জানিয়েছিলেন। ঠারেঠোরে তাঁদের দল এবং সংসদের সদস্যপদ ছাড়ার ইঙ্গিতও দিয়েছিলেন। পওয়ার সেই সূত্রেই বিষয়টি জানতে পেরেছিলেন। তাঁর মনে হয়েছিল, দীনেশ ‘টলমল’ করছেন। কালক্ষেপ না করে পওয়ার ফোন করেছিলেন তৃণমূলের প্রবীণ সাংসদ সৌগত রায়কে। পাওয়ার অধুনাপ্রয়াত প্রিয়রঞ্জন দাশমুন্সির ঘনিষ্ঠ বন্ধু ছিলেন। সৌগত ছিলেন প্রিয়-ঘনিষ্ঠ। ফলে সেই সমীকরণে পাওয়ার এবং সৌগতরও সম্পর্ক ভাল। দীনেশ যে আস্তিন গোটাচ্ছেন, সেই ইঙ্গিত পাওয়া মাত্রই সৌগতকে তা জানান পওয়ার।

Advertisement

তৃণমূলের সংসদীয় দলের একটি সূত্রের দাবি, পওয়ার স্বয়ং মমতাকেও ফোন করেছিলেন দীনেশ সম্পর্কে তাঁর পর্যবেক্ষণের কথা জানাতে। কিন্তু তাঁদের মধ্যে খুব একটা কথা হতে পারেনি। তবে তৃণমূল সংসদীয় দলের অন্য একটি সূত্র জানাচ্ছে, দীনেশের বিষয়ে পওয়ার-মমতা কোনও কথা হয়নি। পওয়ারের সঙ্গে মমতার কথা হয়েছিল ঠিকই। কিন্তু তা দীনেশ-পর্ব পাকিয়ে ওঠার আগে।

কিন্তু সৌগতর সঙ্গে মমতার কথা হয়েছিল বলেই খবর। সেটা বুধবার। মমতা সেদিন মালদহে। সৌগত সরাসরি মমতাকে ফোন করে বলেছিলেন, দীনেশ দল ছাড়তে পারেন। তাঁর সঙ্গে দলের তরফে একটা আলোচনার দরকার আছে। কিন্তু ঘটনাচক্রে, স্রেফ ঘটনাচক্রেই তখন মমতা হেলিকপ্টারে উঠছেন। যেখানে মোবাইলে কথা বলা নিষিদ্ধ। ফলে তিনি সৌগতকে বলেন, তিনি দীনেশের বিষয়ে পরে কথা বলবেন। কিন্তু বিভিন্ন ঘটনাপ্রবাহে সেই কথা আর হয়ে ওঠেনি। উল্লেখ্য, দীনেশের দলত্যাগ এবং সাংসদপদে ইস্তফার কথা ঘোষণার পর একমাত্র সৌগতই প্রকাশ্যে প্রাথমিক প্রতিক্রিয়ায় বলেছিলেন, ‘‘দীনেশ দল ছাড়ায় আমি দুঃখিত। উনি দলের বিভিন্ন বিষয়ে অখুশি ছিলেন ঠিকই। সে কথা কিছু দিল্লির নেতাকে (পড়তে হবে শরদ পওয়ার) জানিয়েওছিলেন। কিন্তু দলের সঙ্গে ওঁর কোনও আলোচনা হয়নি।’’

রসিকতা করে হলেও সেই আলোচনা না হওয়ার ‘দায়’ দলের সর্বোচ্চ নেত্রীর বাহন হেলিকপ্টারের উপর ন্যস্ত করতে চাইছেন শাসক শিবিরের নেতাদের একাংশ। তৃণমূল সংসদীয় দলের এক সাংসদের কথায়, ‘‘মমতা’দির যদি তখন হেলিকপ্টারে ওঠার তাড়া না থাকত, তা হলে সৌগত’দার সঙ্গে তাঁর দীনেশ’দাকে নিয়ে কথা হতে পারত। হতে পারে, তখন হয়ত দীনেশ’দার সঙ্গে সৌগত’দা মুখোমুখি কথা বলতেন। দু’জনেই তো দিল্লিতে ছিলেন। তখন হয়তো দীনেশ’দা ওই সিদ্ধান্ত নিতেন না।’’ দলের অপর এক সাংসদ অবশ্য বলছেন, ‘‘দীনেশ’দা মনস্থির করেই ফেলেছিলেন বলে মনে হচ্ছে। সে ক্ষেত্রে সৌগত’দা কথা বলেও কিছু করতে পারতেন বলে মনে হয় না। এমনও হতে পারে, মমতা’দিও জানতেন দীনেশ’দা কী করতে চাইছেন। উনি সমস্ত খবরই রাখেন। হতে পারে সেজন্যই মমতা’দিও আর বিষয়টি নিয়ে এগোতে চাননি। কারণ, সৌগত’দা তো শুভেন্দু অধিকারীর সঙ্গেও একাধিক বার কথা বলেছিলেন। কিন্তু মমতা!দি জানতেন, শুভেন্দুর সঙ্গে আলোচনা করে লাভ হবে না। ও ততদিনে মনস্থির করে ফেলেছিল।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement