গোয়ায় তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ফাইল চিত্র।
গোয়াকে আর ‘দিল্লির লাড্ডু’ খাওয়ানো চলবে না। ধর্মের নামে বিভাজন নীতিকে রুখতে হবে। রাজ্যে থমকে যাওয়া বিকাশ এবং উন্নয়নের চাকা আবার গড়াবে। তিনি বাংলা থেকে এসেছেন গোয়াবাসীকে এই কাজগুলিতে সাহায্য করতে।
গোয়ার মাটিতে দাঁড়িয়ে শুক্রবার তাঁর প্রথম রাজনৈতিক বক্তৃতায় এমনই বার্তা দিলেন তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। গোয়ায় তৃণমূলের নেতা-কর্মীদের সঙ্গে উদ্বোধনী আলাপে জানালেন, তিনি এখানে মুখ্যমন্ত্রী হতে আসেননি, গোয়াকে একটি পোক্ত রাজ্য বানানোর স্বপ্ন নিয়ে এসেছেন। বিজেপির পাশাপাশি গোয়ার প্রধান বিরোধী দল কংগ্রেসকেও কড়া বার্তা দিয়ে মমতার বক্তব্য, “কংগ্রেসই তো বিজেপির হাতে সরকারকে তুলে দিয়েছিল। কী ভাবে আর তাদের বিশ্বাস করা যাবে? কে বলতে পারে, ওই একই ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঘটবে না?” এর পরেই তাঁর মন্তব্য, “আমি শপথ করে বলতে পারি, তৃণমূল কংগ্রেস কখনও আপস করবে না। আমি মরে যেতে পারি, কিন্তু দেশকে ধর্মের ভিত্তিতে ভাগ হতে দেব না। আমার শেষ রক্তবিন্দু দিয়ে দেশের ঐক্য বজার রাখব। আমি চাই, যুক্তরাষ্ট্রীয় ব্যবস্থায় প্রতিটি রাজ্য শক্তিশালী হোক।”
আজ দিনের শুরুতে গোয়া ইন্টারন্যাশনাল সেন্টারের লনে নেতা, কর্মী এবং সাংবাদিকদের সামনে একটি বক্তৃতা দিয়েছেন মমতা। তার পর গোটা দিনটিই কাটিয়েছেন পথে পথে। তিনটি মন্দিরে গিয়ে পুজো দিয়ে এখানকার ৬২ শতাংশ হিন্দুকে বার্তা দিয়েছেন। আবার মৎস্যজীবীদের জেটিতে গিয়ে তাঁদের অভাব-অভিযোগ শুনেছেন। আশ্বাস দিয়েছেন, তাঁর দলের সরকার এলে মৎস্যজীবী এবং মাছ বিক্রেতাদের অবস্থা ফিরবে। সন্ধ্যায় গোয়ার বিশিষ্ট জনদের সঙ্গে কথা বলেছেন। আর তারই ফাঁকে সাংবাদিক সম্মেলন করে আগামী বছরের ভোটের ঢাকে কাঠি ফেলে বলেছেন, এর পর দফায় দফায় গোয়া এসে, বিভিন্ন সম্প্রদায়ের মানুষের সঙ্গে কথা বলবেন।
এ দিন দুপুরে সাংবাদিক সম্মেলনে গোয়ার সংবাদমাধ্যমের থেকে উঠে এসেছে অনিবার্য একটি প্রশ্ন। রাত পোহালেই যে হেতু এ রাজ্যে কংগ্রেস নেতা রাহুল গাঁধী আসছেন, তাই প্রসঙ্গটি এখানকার রাজনৈতিক বাতাসে ভাসমান। মমতার এই গোয়া অভিযানে কি আদতে হীনবল হবে না বিরোধী ঐক্য? জবাবে কংগ্রেসের নাম না করে মমতা বলেন, “যখনই তৃণমূল কোনও রাজ্যে যায়, তখনই ভোট ভাগ হওয়ার প্রশ্ন তোলা হয় কেন? অন্য কোনও দল এলে তো এই প্রশ্ন ওঠে না। আমরা ভোট ভাগ করতে আসিনি। জুড়তে এসেছি। বরং ওরাই জমিদারি মানসিকতা নিয়ে চলেছে।” সমমনস্ক দলগুলির সঙ্গে জোট করবেন কি না, এই প্রশ্নের জবাবে মমতা বলেন, “এ ব্যাপারে অনেক বার কথা হয়েছে, কিন্তু তার কোনও ফলাফল পাওয়া যায়নি। এটা একা আমাদের সিদ্ধান্ত নয়, সামগ্রিক সিদ্ধান্ত। কেউ যদি আমাদের সঙ্গে কাজ করতে চান, আমাদের আপত্তি নেই।”
‘গোয়াকে গোয়াবাসীরাই চালাবে’— এ কথা আজ বারবার বলেছেন মমতা। পাশাপাশি বাংলার সঙ্গে গোয়ার সংযোগরেখা টানতেও দেখা গিয়েছে তাঁকে। মাছ, ফুটবল এবং স্থানিক শিল্পে দুই রাজ্যেরই অনুরাগের কথা উল্লেখ করেছেন তিনি। বলেছেন, “এর পর এখানে ফুটবল নিয়ে আসব! এখানেও খেলা হবে!”
মমতার গোয়া সফরের আগে গোটা রাজ্যে ছড়ানো তাঁর প্রায় একশোটি পোস্টারে কালি লেপা হয়েছে। গত কাল তিনি বিমানবন্দরে নামার পরেও কালো পতাকা নিয়ে জনা পঁচিশ ব্যক্তিকে প্রতিবাদ করতে দেখা গিয়েছে। গোটা বিষয়টিকে রাজনৈতিক ভাবে কাজে লাগিয়ে বিজেপিকে নিশানা করে তৃণমূল নেত্রী বলেন, “ওরা আজ আমার ছবিতে কালি লাগিয়েছে। এই করতে করতে একদিন গোটা দেশ থেকেই ওদের মুখ মুছে যাবে, ওরা বুঝবেও না। দেশের মানুষ ওদের মুখে কালি লাগিয়ে দেবে!” তাঁকে কালো পতাকা দেখানো ব্যক্তিদের প্রতিনমস্কার করেছেন বলেও জানিয়েছেন বাংলার মুখ্যমন্ত্রী।
আজ গোটা দিনই গোয়াবাসীর কাছে ধর্মনিরপেক্ষতার বার্তা বারবার দিতে দেখা গিয়েছে মমতাকে। বাংলায় কী ভাবে তিনি মন্দির-মসজিদ-গির্জা-গুরুদ্বারে সমান ভাবে যাতায়াত করেন, সে কথা জানিয়েছেন। তাঁর কথায়, “বিজেপি বলে আমি নাকি হিন্দু-বিরোধী। ওরা আমার চরিত্রের শংসাপত্র দেওয়ার কে? আমি এক জন হিন্দু, ব্রাহ্মণ পরিবারের মেয়ে। কিন্তু সে কথা আমি তো কখনও বলি না।”
মমতার সফরকে কটাক্ষ করে বিজেপির নতুন রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদার এ দিন রায়গঞ্জে এক সভায় বলেন, ‘‘মুখ্যমন্ত্রীকে বলব, গোয়ায় কী চালু হতে পারে, সেটা পরের ব্যাপার। পশ্চিমবঙ্গ থেকে কাজ করতে কত লোক বা পরিযায়ী শ্রমিক গোয়ায় যান, সেটা আগে দেখুন। আমাদের রাজ্যে কাজ নেই। গোয়া থেকে কেউ আমাদের রাজ্যে কাজ করতে আসেন না।’’ পাশাপাশি তাঁর কটাক্ষ, ‘‘মুখ্যমন্ত্রীর নিজের রাজ্যে কর্মসংস্থান নেই। গোয়ায় এক দিনে এক জন পরিযায়ী শ্রমিক ৭০০ টাকা মজুরি পান। আসলে মুখ্যমন্ত্রী নিজের ঘর সামলাতে পারেন না, অথচ অন্যের ঘর সামলাতে গিয়েছেন।’’