মমতা জনসভা থেকে জানান, মেঘালয়ার তিন ভাষার কোনওটাই তিনি জানেন না। নিজস্ব চিত্র।
অনেক ভাষাই জানেন তিনি। সেই তালিকায় রাশিয়ান এবং ভিয়েতনামি ভাষাও রয়েছে। তবে সেই তালিকায় খাসি, গারো বা পাঁর নেই। মেঘালয় সফরে গিয়ে বুধবার সে রাজ্যের বাসিন্দাদের সামনেই এ কথা জানালেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। মেঘালয়ের মানুষ মূলত ওই তিন ভাষাতেই কথা বলেন। মমতা জনসভা থেকে জানান, ওই তিন ভাষার কোনওটাই তিনি জানেন না। তবে পরের বার মেঘালয় আসার আগে ওই তিনটি ভাষাই তিনি ইউটিউব থেকে শিখতে শুরু করে দেবেন।
ভাষা নিয়ে মমতা বরাবরই আত্মবিশ্বাসী। দেশের যে প্রান্তে যখন গিয়েছেন, তখন সেখানকার স্থানীয় ভাষায় অন্তত কয়েক লাইন বলতে শোনা গিয়েছে মমতাকে। তা ছাড়াও তিনি নিজে কতগুলি ভাষা জানেন, তার খতিয়ানও দিয়েছেন বাংলার মুখ্যমন্ত্রী।
ভাষা শেখার আগ্রহও বরাবরই প্রকাশ করেছেন মমতা। বছর কয়েক আগে বাংলায় বাণিজ্য সম্মেলনে সেই কথা নিজেই জানিয়েছিলেন। পাশাপাশি জানিয়েছিলেন, এত ভাষা জানেন বলে তিনি গর্ব করেন না। বলেছিলেন, ‘‘আমি গুজরাতি ভাষা জানি। ভিয়েতনামি ভাষা জানি। যখন ভিয়েতনামে গিয়েছিলাম, শিখেছিলাম। রাশিয়ান জানি। সেখানে তিন বার গিয়েছিলাম, তখন শিখেছি। আমি নাগামিজ় জানি, মণিপুরী জানি, আসামিজ় জানি, ওড়িয়া জানি, পঞ্জাবি জানি, মরাঠা জানি, বাংলা জানি, হিন্দি জানি, উর্দু জানি, গোর্খা জানি, নেপালি জানি। তা বলে এটা নিয়ে গর্ব করি না। বরং গর্ব করি, যদি তাঁদের কথা একটু বলতে পারি।’’ গর্ব তো বটেই, এত ভাষা জানলেও তা নিয়ে প্রচারও চান না। মমতা বলেছিলেন, ‘‘এর জন্য প্রচার করার দরকার পড়ে না। আমি যে কোনও রাজ্যে গেলে সেই ভাষাতেই কথা বলি।’’
কিন্তু বুধবার তৃণমূলের সর্বময় নেত্রী মেঘালয়ের ভাষায় কথা বলতে পারেননি। তা নিয়ে আক্ষেপও জানিয়েছেন তিনি। বুধবারই নির্বাচন কমিশন ঘোষণা করেছে, আগামী ২৭ ফেব্রুয়ারি সে রাজ্যে বিধানসভা ভোট। মঙ্গলবারই সে রাজ্যে ভোটপ্রচারে গিয়েছেন মমতা এবং অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। বুধবার মেঘালয়ের মেদিপাথরের জনসভায় মমতা বলেন, ‘‘মেঘালয়কে কুর্নিশ জানাতে চাই। পরের বার যখন আসব আপনাদের এলাকায়, আপনাদের ভাষা শিখতে চাই। আমায় প্লিজ শেখান! এর মধ্যে আমি ইউটিউব থেকে শিখতে আরম্ভ করব।’’
মমতা জানিয়েছেন, মেঘালয়ের মানুষের কাছ থেকে তাঁদের ভাষা শিখতে পারলে তিনি খুশি হবেন। তাঁর কথায়, ‘‘আমি খুব খুশি হব, আপনাদের কাছ থেকে শিখলে। খুব খুশি হব, আপনাদের ভাষা শিখলে।’’ পাশাপাশিই মমতা জানান, মেঘালয়ের তৃণমূল নেতা মুকুল সাংমার কাছ থেকে তাঁদের ভাষা অনেকটাই শিখেছেন অভিষেক। ওই ভাষায় তিনি কথাও বলেছেন। এ বার তাঁর নিজের পালা।
ভাষাশিক্ষার পাশাপাশিই মমতা জানিয়েছেন, মেঘালয়ে তৃণমূল সরকার গড়লে তার রাশ থাকবে স্থানীয়দের হাতেই। বহিরাগতদের ঠাঁই হবে না। গোয়ায় সুরেই মেঘালয়ে মমতা বলেন, ‘‘আমি চাইব মেঘালয় সরকার বাই দ্য মেঘালয়, ফর দ্য মেঘালয় হোক। বহিরাগত নয়।’’
তাঁর প্রতিশ্রুতি, তৃণমূল ক্ষমতায় এলে বাংলার মতো সে রাজ্যেও চালু করা হবে ‘লক্ষ্মীর ভান্ডার’ প্রকল্প। সব মহিলাকে মাসে মাসে হাজার টাকা দেবে তৃণমূলের সরকার। মেঘালয়ের কনরাড সাংমা সরকারের থেকেও জবাবদিহি চেয়েছেন তিনি। বিজেপির সমর্থনে মেঘালয়ে সরকার গড়েছে কনরাডের দল ন্যাশনাল পিপল’স পার্টি (এনপিপি)। মমতা বলেন, ‘‘এই সরকারের রিপোর্ট কার্ড কোথায়? আমি চাইছি! গত পাঁচ বছর কী করেছেন? ভোটের সময় পেট্রল ফ্রি। রান্নার গ্যাস ফ্রি। এই করব, ওই করব। বক্তৃতা রেডি রয়েছে, ওটাই বলবে। ওরা টেলিপ্রম্পটার। আমি তা করি না। মন থেকে বলি। কারণ মেঘালয় আমার মনে।’’