Womens Premier League 2025

দিদির কাছে দাদার হার! সৌরভের দিল্লিকে ৮ রানে হারিয়ে মহিলাদের আইপিএল চ্যাম্পিয়ন ঝুলনের মুম্বই

তৃতীয় বার ফাইনালে উঠেও মহিলাদের আইপিএল জিততে পারল না দিল্লি ক্যাপিটালস। মুম্বই ইন্ডিয়ান্সের কাছে হারল সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়ের দল। দ্বিতীয় বার চ্যাম্পিয়ন হল ঝুলন গোস্বামীর মুম্বই।

Advertisement

আনন্দবাজার ডট কম ডেস্ক

শেষ আপডেট: ১৫ মার্চ ২০২৫ ২৩:২৯
Share:
cricket

(বাঁ দিকে) ঝুলন গোস্বামী ও সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায় (ডান দিকে)। —ফাইল চিত্র।

লড়াই ছিল দুই বঙ্গসন্তানের। দু’দলের ডাগআউটে বসেছিলেন দু’জন। এক জন সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়। ভারতীয় ক্রিকেটে বাঙালিদের সবচেয়ে বড় নাম। দিল্লি ক্যাপিটালসের ডিরেক্টর অফ ক্রিকেট তিনি। পর পর তিন বছর দলকে ফাইনালে তুলেছেন। প্রথম দু’বার হারতে হয়েছে। তৃতীয় বার আশা ছিল ট্রফির। সৌরভের লড়াই ছিল আর এক বাঙালি ঝুলন গোস্বামীর বিরুদ্ধে। ভারতের মহিলাদের ক্রিকেটে বাংলার সবচেয়ে বড় নাম। মুম্বই ইন্ডিয়ান্সের বোলিং কোচ তিনি। এক বার ট্রফি জেতার স্বাদ ছিল ঝুলনের। তাই অভিজ্ঞতায় এগিয়ে ছিলেন তিনি। শেষ পর্যন্ত সেই অভিজ্ঞতায় বাজিমাত করল মুম্বই। দিদির কাছে হারতে হল দাদাকে। সৌরভের দিল্লিকে হারিয়ে দ্বিতীয় বারের জন্য চ্যাম্পিয়ন হল ঝুলনের মুম্বই। আরও এক বার ব্যর্থ হয়েই ফিরতে হল দিল্লিকে।

Advertisement

খেলার শুরুতে মুখে হাসি ছিল সৌরভের। বল করতে নেমে তখন মুম্বই ইন্ডিয়ান্সকে চাপে রেখেছিল দিল্লি ক্যাপিটালস। কিন্তু খেলা যত গড়াল, তত হাসি কমল দিল্লির ডিরেক্টর অফ ক্রিকেট সৌরভের মুখে। শেষে সেই হাসি উধাও। আরও এক বার হতাশ হলেন সৌরভ।

মহিলাদের আইপিএলের তিন মরসুমেই সরাসরি ফাইনাল খেলেছে দিল্লি। কিন্তু ট্রফি জেতা হল না তাদের। এ বারও ফাইনালে মুম্বইয়ের অভিজ্ঞতা দিল্লিকে হারিয়ে দিল। বোঝা গেল, চ্যাম্পিয়ন হওয়ার স্বাদ থাকলে সেই দল কঠিন পরিস্থিতি থেকেও খেলা জিততে পারে। যেমনটা করল মুম্বই। ব্যাট হাতে দলকে টানলেন অধিনায়ক হরমনপ্রীত কউর। কঠিন পরিস্থিতি থেকে দলকে ১৪৯ রানে নিয়ে যাওয়ার ভিত গড়লেন তিনি। বাকি কাজটা করলেন বোলারেরা। বোলিং কোচ ঝুলন কেন বার বার অভিজ্ঞতার কথা বলেন তা এই ম্যাচে বোঝা গেল। ন্যাট শিভার-ব্রান্ট, শবমন ইসমাইল, হেইলি ম্যাথুজ়, অ্যামেলিয়া কেরদের সামনে মুখ থুবড়ে পড়ল মেগ ল্যানিং, শেফালি বর্মার দিল্লি। আরও এক বার ব্যর্থ হলেন বিশ্বক্রিকেটে মহিলাদের সবচেয়ে সফল অধিনায়ক ল্যানিং। তাঁকে হারালেন ভারত অধিনায়ক হরমনপ্রীত।

Advertisement

টস হেরে ব্যাটিংয়ের শুরুটা ভাল হয়নি মুম্বইয়ের। যে ওপেনিং জুটি গত দুই ম্যাচে দলকে ভাল শুরু দিয়েছিলেন, সেই ম্যাথুজ় ও যস্তিকা ভাটিয়ার ব্যাট চুপ ছিল। তার নেপথ্যে অবশ্য মারিজেন কাপের বোলিং। তাঁর বল দু’দিকেই সুইং করছিল। ফলে ব্যাটে-বলে হচ্ছিল না দুই ওপেনারের। ম্যাথুজ়কে ফাঁদে ফেলেন কাপ। পর পর আউটসুইং করতে করতে একটি বল ভিতরে ঢোকান তিনি। বুঝতে না পেরে ৩ রান করে বোল্ড হন ম্যাথুজ়। নিজের পরের ওভারে ৮ রানের মাথায় যস্তিকাকেও ফেরান কাপ। ১৪ রানে ২ উইকেট পড়ে যায় মুম্বইয়ের। পাওয়ার প্লে-তে ওঠে মাত্র ২০ রান। টানা চার ওভার বল করেন কাপ। ১১ রান দিয়ে ২ উইকেট নেন।

ধুঁকতে থাকা মুম্বইয়ের ইনিংস ধরেন অভিজ্ঞ শিভার-ব্রান্ট ও অধিনায়ক হরমনপ্রীত। শুরুতে কিছুটা ধরে খেলছিলেন তাঁরা। পাওয়ার প্লে-র পরে হাত খোলেন হরমনপ্রীত। বলের গতি ব্যবহার করে একের পর এক বড় শট মারতে শুরু করেন। পাল্টা আক্রমণের পথে যান মুম্বইয়ের অধিনায়ক। তাতে চাপে পড়ে যায় দিল্লি ক্যাপিটালস।

মাত্র ৩৩ বলে নিজের অর্ধশতরান করেন হরমনপ্রীত। তিনি এক দিকে হাত খোলায় নিজের উইকেট ধরে রেখেছিলেন শিভার-ব্রান্ট। চলতি মরসুমে ৫০০-এর বেশি রান করেছেন তিনি। ইংল্যান্ডের ক্রিকেটার জানতেন, এই জুটিকে শেষ পর্যন্ত থাকতে হবে। সে ভাবেই খেলছিলেন তাঁরা। পাওয়ার প্লে-র পরের আট ওভারে ৭২ রান করেন তাঁরা। যেখানে শুরুতে দেখে মনে হচ্ছিল, মুম্বইয়ের ব্যাটিং ভেঙে পড়বে সেই দলই বড় রানের পথে এগোচ্ছিল।

মুম্বইকে বড় ধাক্কা দিলেন নাল্লাপুরেড্ডি চারানি। এই তরুণ স্পিনারের বলে ৩০ রান করে আউট হলেন শিভার-ব্রান্ট। মিড উইকেটে দাঁড়িয়ে দুর্দান্ত ক্যাচ ধরলেন মিন্নু মণি। এই উইকেটের কৃতিত্ব তাঁর। জুটি ভাঙার পর বাকি ব্যাটারেরা সমস্যায় পড়লেন। কের, সজীবন সজনা রান পাননি। চাপ বাড়ছিল হরমনপ্রীতের উপর। বাধ্য হয়ে অ্যানাবেল সাদারল্যান্ডের বলে বড় শট মারতে গিয়ে ৬৬ রানে আউট হন অধিনায়ক। নীচের সারির ব্যাটারেরা কোনও রকমে দলের রান ১৪৯ পর্যন্ত নিয়ে যান।

মুম্বই জানত, এই ম্যাচ জিততে গেলে দিল্লির ওপেনিং জুটি ভাঙতে হবে তাদের। শুরুতেই সেই কারণে শবনম ও শিভার-ব্রান্টের হাতে বল তুলে দেন হরমনপ্রীত। অধিনায়ককে হতাশ করেননি তাঁরা। ১৩ রানের মাথায় শিভার-ব্রান্টের ইনসুইং বুঝতে না পেরে বোল্ড হন ল্যানিং। পাওয়ার প্লে-র মধ্যে ৪ রানের মাথায় আউট হন শেফালিও। সেখানেই শুরু।

মুম্বইয়ের ইনিংসকে হরমনপ্রীত ও শিভার-ব্রান্ট যে ভাবে টেনেছিলেন, দিল্লির কোনও ব্যাটার সেটা করতে পারলেন না। যেই হাত খোলার চেষ্টা করলেন, আউট হলেন। পেসারদের পর তিন স্পিনার ম্যাথুজ়, কের ও বাংলার সাইকা ইশাকও ভাল বল করলেন। জেস জোনাসকে ফেরালেন কের। সাদারল্যান্ডের বড় উইকেট নিলেন সাইকা। এক দিকে ইনিংস গড়ার চেষ্টা করছিলেন জেমাইমা রদ্রিগেজ়। কিন্তু কেরের স্পিনে পরাস্ত হয়ে ৩০ রানের মাথায় আউট হলেন তিনিও।

১৫০ রান তাড়া করে জিততে হলে একটি বড় জুটি দরকার ছিল দিল্লির। কিন্তু শুরুতে তা হয়নি। ল্যানিং, শেফালিরা যে কাজটা করতে পারলেন না সেটাই করলেন কাপ। হিসেব করে ঝুঁকি নিলেন, বল দেখে খেললেন। অহেতুক ঝুঁকি নিলেন না। ১৭তম ওভারে সাইকার বলে ১৭ রান নিলেন তিনি। সেই ওভারের পর দিল্লির জেতার আশা দেখা যায়। মুম্বইকে আবার খেলায় ফেরান সেই শিভার-ব্রান্ট। ৪০ রানের মাথায় কাপকে ফেরান তিনি। পরের বলেই আউট করলেন শিখা পাণ্ডেকে। চলতি মরসুমে মুম্বইয়ের জয়ের নেপথ্যে সবচেয়ে বড় নাম শিভার-ব্রান্ট। ব্যাটে-বলে দাপট দেখিয়ে মুম্বইয়ের কোলে ট্রফি তুলে দিলেন তিনি। শেষ ওভারেও সেই শিভার-ব্রান্টই বল করলেন। ৮ রানে জিতল মুম্বই।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement
Advertisement