Mamata Banerjee

স্বর-গরম নয় বিরোধিতায়, নির্দেশ বুক চিতিয়ে লড়ার

রাজনৈতিক মহলের বক্তব্য, একই সঙ্গে বুক চিতিয়ে বিরোধিতা আর ঠান্ডা মেজাজের কথা বলে জাতীয় স্তরে আজ ভারসাম্যের রাজনীতির পথেই চলার বার্তা দিতে চাইলেন মমতা।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ০৮ ডিসেম্বর ২০২২ ০৬:৫২
Share:

মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ফাইল চিত্র।

রাজ্যের উপরে ‘বুলডোজ়ার’ চালানো, একতরফা বিল পাশের মতো বিষয়গুলি নিয়ে চলতি শীতকালীন অধিবেশনে দলীয় সাংসদদের ‘বুক চিতিয়ে’ বিরোধিতা করার নির্দেশ দিলেন তৃণমূল কংগ্রেস নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। কিন্তু একই সঙ্গে জানালেন, সেই বিরোধিতার স্বর গরম করা হবে না। রাখতে হবে ‘ঠান্ডা মেজাজ’।

Advertisement

রাজনৈতিক মহলের বক্তব্য, একই সঙ্গে বুক চিতিয়ে বিরোধিতা আর ঠান্ডা মেজাজের কথা বলে জাতীয় স্তরে আজ ভারসাম্যের রাজনীতির পথেই চলার বার্তা দিতে চাইলেন মমতা। সোমবারই প্রধানমন্ত্রীর ডাকা জি-২০ সংক্রান্ত বৈঠকে গিয়ে নরেন্দ্র মোদী সরকারের সঙ্গে পূর্ণ সহযোগিতার আশ্বাস দিয়েছেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী। কংগ্রেস বা বামেদের মতো কেন্দ্র প্রসঙ্গে কোনও সমালোচনার সুর না তুলে, দেশের সামনে আসা সুযোগকে সমন্বয়ের মাধ্যমে কাজে লাগানোর ডাক দিয়েছেন তিনি। আবার আজই প্রায় দু’বছর পরে কংগ্রেসের সভাপতি তথা রাজ্যসভার বিরোধী দলনেতা মল্লিকার্জুন খড়্গের কক্ষে ডাকা সংসদে বিরোধীদের সমন্বয় সংক্রান্ত বৈঠকে সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়কে পাঠিয়ে এই বার্তাও দিতে চেয়েছেন যে, তাঁর কংগ্রেসকে নিয়ে কোনও ‘অ্যালার্জি’ নেই। তিনি বিজেপি-বিরোধিতায় ঐকান্তিক।

কংগ্রেসের যদিও বক্তব্য, তৃণমূলের বিরুদ্ধে মোদীর সঙ্গে ‘সেটিং’ করার অভিযোগ উঠছে বার বার। গত বার মমতা দিল্লি এসে চার দিন থেকে গিয়েছেন, তার মধ্যে

Advertisement

তিন বার মোদীর সঙ্গে তাঁর দেখা হয়েছে। কিন্তু কোনও বিরোধী নেতার সঙ্গে সাক্ষাৎ পর্যন্ত করেননি তৃণমূল নেত্রী। কংগ্রেস-সহ বিরোধী শিবিরের একাংশ এ-ও মনে করে, ২০২১ সালে প্রধান বিজেপি-বিরোধী মুখ হিসেবে মমতার যে ধার ছিল, রাজ্যে একের পর এক দুর্নীতির অভিযোগে তা এখন অনেকটাই ভোঁতা। সব মিলিয়ে তাঁর বিরোধিতার বিশ্বাসযোগ্যতা কমেছে।

কংগ্রেসের বক্তব্য, এই সব ‘অপবাদ’ এ বার ঝেড়ে ফেলতে চাইছেন মমতা। আজ বিকেলে সাংসদ সৌগত রায়ের বাড়িতে দুই কক্ষের দলীয় সাংসদের সঙ্গে তিনি বৈঠক করে শীতকালীন অধিবেশনের রণনীতি তৈরি করেন। পরে সংবাদমাধ্যমকে বলেন, “আমরা বুক চিতিয়ে কিন্তু ঠান্ডা মেজাজে বিরোধিতা করব। অন্যান্য দল যারা এগিয়ে আসবে, তাদের সঙ্গে সমন্বয় এবং সহযোগিতা করা হবে সংসদীয় অধিবেশনে।” এ বার সরকার যে সব বিল আনতে চলেছে, তার অনেকগুলিতেই রাজ্যের অধিকারে হস্তক্ষেপ করা হচ্ছে বলে মন্তব্য করেছেন তৃণমূল নেত্রী। তাঁর কথায়, “রাজ্যকে, সংবাদমাধ্যমকে ‘বুলডোজ়’ করার চেষ্টা হচ্ছে। গণতন্ত্র, সংবিধান, যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামোকে ধ্বংস করার চেষ্টা চলছে। কিন্তু একটা দল আসবে, আবার চলে যাবে। সংবিধান, সংসদ চিরস্থায়ী।” আলোচনা না করে, সংসদীয় কমিটির প্রস্তাব না মেনে একতরফা ভাবে বিল পাশ করানো হচ্ছে বলেও মন্তব্য করেছেন মমতা।

আজ লোকসভায়, বহু রাজ্য সমবায় সমিতি সংক্রান্ত যে বিল পেশ করা হয়েছে, তাতে রাজ্যের অধিকার খর্ব হয়েছে বলে সরব হয়েছেন সৌগত রায়। একই ভাবে বিদ্যুৎ আইন সংশোধনী বিলটিকেও ‘রাজ্য-বিরোধী’ বলে তুলে ধরেছে তৃণমূল। আজ সকালে খড়্গের ঘরে আটটি বিরোধী দলের বৈঠকে যোগ দিয়ে সুদীপও যুক্তরাষ্ট্রীয় ব্যবস্থা আক্রান্ত হওয়া নিয়ে সরব হয়েছেন। বেকারত্ব, মহিলা সংরক্ষণ আইন, উত্তর-পূর্বাঞ্চলের বিষয়গুলি নিয়ে আলোচনার দাবি তুলেছেন তিনি। জানিয়েছেন, রাজ্যসভা এবং লোকসভা মিলিয়ে দ্বিতীয় বৃহত্তম বিরোধী দল হওয়া সত্ত্বেও কোনও সংসদীয় কমিটির চেয়ারম্যানের পদ দেওয়া হয়নি তৃণমূলকে। কংগ্রেস-সহ বাকি অনেক দলই তখন বলে, বিষয়টি সংসদে তোলা উচিত।

দীর্ঘদিন পরে কংগ্রেসের ডাকা কক্ষ সমন্বয়ের মঞ্চে যেমন যোগ দিয়েছে তৃণমূল, তেমনই প্রকাশ্যে তৃণমূলের পাশে দাঁড়াতে দেখা গিয়েছে কংগ্রেসকেও। আজ কংগ্রেসের লোকসভার নেতা অধীর চৌধুরী অভিযোগের সুরে স্পিকারকে বলেন, “সংসদের স্থায়ী কমিটিতে বিরোধীদের সভাপতিত্ব দেওয়া হয়নি।” এই প্রসঙ্গে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক, তথ্য-প্রযুক্তি মন্ত্রক (দু’টিতেই চেয়ারম্যান ছিলেন কংগ্রেস সাংসদ) ও খাদ্য প্রক্রিয়াকরণ মন্ত্রকের স্থায়ী কমিটির চেয়ারম্যান (ছিলেন সুদীপ) পদ থেকে বিরোধীদের অপসারিত করার উদাহরণ তুলে ধরেন বহরমপুরের সাংসদ। তৃণমূল বেঞ্চে বসা সুদীপের সঙ্গে কথাও বলে নেন তিনি। সেই সময়ে অধীরের পাশে ছিলেন সনিয়া গান্ধী। অধীর বলেন, “শুধু আমাদের নয়, সুদীপবাবুকেও সরিয়ে দেওয়া হয়েছে।” তিনি এই কথা বলায় সনিয়াকে টেবিল চাপড়াতে দেখা যায়।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement