ঝাড়খণ্ডের মুখ্যমন্ত্রী হিসাবে হেমন্ত সোরেনের শপথগ্রহণের অনুষ্ঠানে হাজির মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, রাহুল গান্ধী, অরবিন্দ কেজরীওয়াল-সহ ‘ইন্ডিয়া’র শরিক নেতারা। বৃহস্পতিবার রাঁচীতে। ছবি: পিটিআই।
বৃহস্পতিবার ঝাড়খণ্ডের মুখ্যমন্ত্রী পদে শপথ নিলেন হেমন্ত সোরেন। সেই মঞ্চে একই সঙ্গে দেখা গেল মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এবং রাহুল গান্ধীকে। এ ছাড়াও ছিলেন তামিলনাড়ুর মুখ্যমন্ত্রী এমকে স্ট্যালিন, বিহারের বিরোধী দলনেতা আরজেডির তেজস্বী যাদব-সহ বিরোধী জোট ‘ইন্ডিয়া’র একাধিক নেতা। সম্প্রতি কিছু ঘটনাপ্রবাহে কংগ্রেসের সঙ্গে ‘ইন্ডিয়া’র অন্যতম শরিক তৃণমূলের দূরত্বের জল্পনা তৈরি হয়েছে। তার মধ্যেই রাঁচীতে এক মঞ্চে মমতা-রাহুলকে দেখা গেল। অনেকে একে বিরোধীদের মধ্যে ‘ঐক্যের বার্তা’ বলে মনে করছেন। তবে অনেকেই বলছেন, কংগ্রেসের সঙ্গে এক মঞ্চে থাকা মমতার সৌজন্য। ‘দূরত্ব’ কমেনি।
মমতারই দেওয়া ‘সময়’ মেনে বৃহস্পতিবার শপথের দিন স্থির করেছিলেন ঝাড়খন্ডের ভাবী মুখ্যমন্ত্রী। সেই মঞ্চে যে কংগ্রেসের সাংসদ রাহুল থাকবেন, তা নিয়ে সে ভাবে আগে আলোচনা হয়নি। তবে একই মঞ্চে থাকলেও মমতা এবং রাহুলকে পাশাপাশি আসনে বসতে দেখা যায়নি। দু’জনের মধ্যে বেশ কয়েকটি আসনের দূরত্ব ছিল। দু’জনকে একান্তে কথা বলতেও দেখা যায়নি।
লোকসভার শীতকালীন অধিবেশন শুরুর পর থেকেই সংসদে কংগ্রেস-তৃণমূলের দূরত্বের ইঙ্গিত পাওয়া গিয়েছে। গত সোমবার অধিবেশন শুরুর দিন বিরোধী নেতৃত্বকে বৈঠকে ডেকেছিল কংগ্রেস। বুধবারও একটি বৈঠক ডাকা হয়েছিল। ‘ইন্ডিয়া’র বাকি দলগুলি সেই বৈঠকে থাকলেও তৃণমূলের কোনও সাংসদ তাতে যোগ দেননি। সংসদে কক্ষ সমন্বয় নিয়েও কংগ্রেস-তৃণমূলের ‘দূরত্ব’ তৈরি হয়েছে। বুধবার তৃণমূলের সংসদীয় দলের বৈঠকে ছিলেন সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। সূত্রের খবর, দলের দুই কক্ষের সাংসদদের ওই বৈঠকে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে, বাংলার সাংসদেরা মূলত রাজ্যের প্রতি কেন্দ্রের বঞ্চনার কথাই তুলে ধরবেন সংসদের অধিবেশনে। তুলে ধরা হবে বিজেপি শাসিত মণিপুরে অশান্তির কথা। ‘ব্যক্তিগত’ সিদ্ধান্তে কেউ মুলতুবি প্রস্তাব আনবেন না বলেও সাংসদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে দলের বৈঠকে।
কারা ‘ব্যক্তিগত’ সিদ্ধান্তে মুলতুবি প্রস্তাব আনতে পারেন, তা প্রকাশ্যে না বললেও তৃণমূলের অনেকে মনে করছেন, ওই বক্তব্যের অন্যতম লক্ষ্য মহুয়া মৈত্র, সৌগত রায়, সাগরিকা ঘোষ বা সাকেত গোখলের মতো সাংসদেরা। যাঁরা গৌতম আদানির বিরুদ্ধে আমেরিকায় ‘ঘুষ’ দেয়ার অভিযোগ নিয়ে প্রথম থেকেই সমাজমাধ্যমে সরব ছিলেন। যদিও ‘দল’ হিসেবে তৃণমূল তেমন কিছু করেনি। বস্তুত, তৃণমূল মনে করছে, যে কোনও একটি বিষয় নিয়ে সংসদ না চলতে দেওয়া অনুচিত। সংসদ অচল হয়ে থাকলে সেখানে সাংসদেরা তাঁদের এলাকার কথা বলতে পারবেন না। দ্বিতীয়ত, তৃণমূলের প্রথম সারির নেতৃত্বের বড় অংশ মনে করেন, আদানিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ মূলত ‘রাহুল গান্ধীর বিষয়’। কারণ, ‘ঘুষ’ দেওয়ার অভিযোগ প্রকাশ্যে আসার পরে রাহুল ‘আক্রমণাত্মক’ ভূমিকা নিয়ে আদানিকে গ্রেফতারের দাবি তুলেছেন। আদানিকে আক্রমণে তিনিই প্রথম থেকে প্রথমে। তৃণমূল ‘ইন্ডিয়া’র অন্দরে অনেক দিন ধরেই কংগ্রেসের ‘দাদাগিরি’ নিয়ে সরব। আদানি-প্রশ্নে তারা রাহুল তথা কংগ্রেসের ‘লেজুড়বৃত্তি’ করতে চায় না। একটি সূত্রের দাবি, তৃণমূলের তরফে কংগ্রেসের নেতৃত্বকে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে যে, দুর্নীতির অভিযোগ ভোটে কোনও ‘ছাপ’ ফেলে না। এ-ও জানিয়ে দেওয়া হয় যে, আদানিকাণ্ড সাধারণ মানুষের দৈনন্দিন জীবনের সঙ্গে সম্পর্কিত কোনও বিষয় নয়, যা ভোটে ‘ছাপ’ ফেলতে পারে।
অক্টোবরে হরিয়ানা এবং মহারাষ্ট্রের সদ্যসমাপ্ত বিধানসভা নির্বাচনে দাগ কাটতে পারেনি কংগ্রেস। অনেকের বক্তব্য, তার পর থেকে তৃণমূল তাদের সঙ্গে ‘দূরত্ব’ আরও বাড়িয়েছে। এই পরিস্থিতিতে বৃহস্পতিবার ‘ইন্ডিয়া’র শরিক জেএমএম নেতা হেমন্তের শপথগ্রহণের অনুষ্ঠানের মঞ্চে মমতা-রাহুলের উপস্থিতি তাই নজর কেড়েছে।
ঝাড়খণ্ডের ১৪তম মুখ্যমন্ত্রী হিসাবে শপথ নিয়েছেন হেমন্ত। রাজ্যপাল সন্তোষকুমার গাঙ্গোয়ার তাঁকে শপথবাক্য পাঠ করান। ঝাড়খণ্ডের বিধানসভা নির্বাচনে ৮১টি আসনের মধ্যে ৫৬টিই জিতেছে শাসকদল ঝাড়খণ্ড মুক্তি মোর্চার (জেএমএম) নেতৃত্বাধীন জোট। বিজেপির নেতৃত্বাধীন এনডিএ পেয়েছে ২৪টি আসন।