প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী ও মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ফাইল চিত্র।
কেন্দ্রের বিচারে যে সব রাজ্যের করোনা পরিস্থিতি এখনও খারাপ, সেই তালিকায় আছে পশ্চিমবঙ্গ। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর ডাকা মঙ্গলবারের ভার্চুয়াল বৈঠকে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এ নিয়ে আপত্তি জানাতে পারেন। সূত্রের খবর, নবান্ন মনে করে, রাজ্যের করোনা পরিস্থিতির অবনতি হচ্ছে না। বরং ক্রমে অবস্থার উন্নতি হচ্ছে। প্রশাসনিক কর্তাদের যুক্তি, এ রাজ্যে পজ়িটিভ এবং মৃত্যুহার কমছে। তার পরেও কেন পশ্চিমবঙ্গকে খারাপ পরিস্থিতি থাকা রাজ্যের তালিকাভুক্ত করা হবে, তা নিয়ে প্রশ্ন তুলছেন তাঁরা।
কাল, মঙ্গলবার মুখ্যমন্ত্রীদের ভার্চুয়াল বৈঠক ডেকেছেন প্রধানমন্ত্রী। তাঁর ওই বৈঠক হবে দু’টি পর্যায়ে। কোভিড-পরিস্থিতি যে রাজ্যগুলিতে খারাপ, প্রথম পর্যায়ে সেই রাজ্যগুলির মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে (কেন্দ্রের বিচারে যে তালিকায় পশ্চিমবঙ্গ রয়েছে) বৈঠক করবেন প্রধানমন্ত্রী। দ্বিতীয় পর্যায়ে সব রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে প্রধানমন্ত্রীর বৈঠক হবে টিকা মজুত ও বণ্টনের পরিকাঠামো নিয়ে। মমতা বাঁকুড়া থেকেই ওই বৈঠকে যোগ দেবেন।
প্রধানমন্ত্রীর ওই ভার্চুয়াল বৈঠকের কারণে মুখ্যমন্ত্রীর বাঁকুড়ার কর্মসূচিতে কিছুটা রদবদল হয়েছে। প্রথমে ঠিক ছিল, তিনি সোমবার বাঁকুড়া যাবেন। প্রধানমন্ত্রীর বৈঠকের কর্মসূচি থাকায় রবিবারই তিনি বাঁকুড়া চলে গিয়েছেন। ওই দিন মুকুটমণিপুরে থেকে আজ, সোমবার খাতড়ায় সরকারি পরিষেবা প্রদান করবেন মমতা। আগামিকাল, মঙ্গলবার দুপুর আড়াইটের সময় বাঁকুড়ায় প্রশাসনিক বৈঠক রয়েছে মুখ্যমন্ত্রীর। তার আগে সকাল ১০টা থেকে প্রধানমন্ত্রীর বৈঠকে যোগ দেবেন তিনি। বুধবার বাঁকুড়ায় রাজনৈতিক সমাবেশ করে বৃহস্পতিবার শহরে ফেরার কথা তাঁর।
আরও পড়ুন: ফোনালাপে গলল বরফ, দিলীপকে মধ্যাহ্নভোজেও ডাকলেন বৈশাখী
প্রবীণ আমলা-আধিকারিকেরা মনে করছেন, টিকা পাঠানোর প্রক্রিয়া চূড়ান্ত করার আগে রাজ্যগুলির প্রস্তুতি জেনে নিতে চাইবেন প্রধানমন্ত্রী। এই সূত্রে কেন্দ্রের ভাবনাচিন্তার কথাও জানাবেন তিনি। রাজ্যের প্রশাসনিক কর্তারা জানাচ্ছেন, টিকা-ব্যবস্থাপনার দিক থেকে সর্বোচ্চ পর্যায়ের প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। ইতিমধ্যেই ত্রিস্তরীয় একটি কমিটি গঠন করেছে রাজ্য। সর্বোচ্চ পর্যায়ে মুখ্যসচিবের নেতৃত্বাধীন স্টিয়ারিং কমিটি ছাড়াও রাজ্য এবং জেলাস্তরে পৃথক পৃথক কমিটি রয়েছে। বিকেন্দ্রীকৃত ভাবে টিকা-ব্যবস্থাপনার কাজ দেখাশোনা করবে কমিটিগুলি। বিশেষজ্ঞরা জানাচ্ছেন, টিকার জন্য ‘কোল্ড-চেন’ তৈরির প্রস্তুতি ইতিমধ্যেই শেষ হয়েছে। নির্দিষ্ট তাপমাত্রায় টিকা মজুত করার পরিকাঠামো, ড্রাই-স্টোরেজ পদ্ধতি প্রভৃতি বিষয় চূড়ান্ত হয়েছে। ক্লিনিক্যাল টেস্টের পরিকল্পনার পাশাপাশি, কোথা থেকে কী ভাবে টিকা দেওয়ার কাজ হবে, সেই রূপরেখাও তৈরি রয়েছে রাজ্যে।
আরও পড়ুন: গত ২৪ ঘণ্টায় কমেছে মৃত্যুর সংখ্যা, কমলো দৈনিক সংক্রমণও
টিকা-প্রাপকদের তালিকাও প্রস্তুত রাজ্যে। কেন্দ্র আগেই জানিয়েছিল, স্বাস্থ্যকর্মীদের যাঁরা সামনের সারিতে থেকে কোভিড মোকাবিলা করছেন, তাঁদের আগে টিকা দেওয়া হবে। তার পরেই প্রতিটি জেলা থেকে এমন স্বাস্থ্যকর্মীদের তালিকা সংগ্রহ শুরু করে প্রশাসন। সরকারি সূত্রের দাবি, এ পর্যন্ত প্রায় ৫.৩ লক্ষ স্বাস্থ্যকর্মীর তথ্যভাণ্ডার তৈরি করা হয়েছে। কেন্দ্র সবুজ সঙ্কেত দিলেই সেই তালিকা অনুযায়ী কাজ শুরু করবে রাজ্য। প্রশাসনের এক কর্তার কথায়, “টিকা নিয়ে কেন্দ্রের প্রস্তুতি শুরুর সঙ্গে সঙ্গে এ রাজ্যেও পরিকল্পনা তৈরির কাজ শুরু হয়েছিল। এখন রাজ্য পুরোপুরি প্রস্তুত। পরিকাঠামো থেকে প্রাপকদের তালিকা— সব কিছুই রয়েছে রাজ্যের হাতে।”