পটনায় বিরোধী জোটের বৈঠকে লালুপ্রসাদ যাদব, মল্লিকার্জুন খাড়গে এবং নীতীশ কুমারের সঙ্গে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ফাইল চিত্র।
সোম এবং মঙ্গলবার কর্নাটকের রাজধানী বেঙ্গালুরুতে মহাজোটের দ্বিতীয় বৈঠক। সেই বৈঠকে যোগদান করতে সোমবারই কলকাতা থেকে রওনা হচ্ছেন বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ও তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। দুপুরের বিমানে তাঁরা বেঙ্গালুরুর উদ্দেশে রওনা হবেন। বৈঠকে যোগদান করতে তাঁদের সঙ্গেই যাবেন তৃণমূলের রাজ্যসভার দলনেতা ডেরেক ও’ব্রায়েন। সন্ধ্যায় ২০ দলের বিরোধী জোটের আলোচনায় অংশ নেবেন তাঁরা। তবে রাতে সনিয়া গান্ধীর ডাকা নৈশভোজে মুখ্যমন্ত্রী উপস্থিত থাকবেন না বলেই জানা গিয়েছে। বদলে ওই নৈশভোজে তাঁর প্রতিনিধিকে পাঠানো হবে বলেই তৃণমূল সূত্রে খবর।
এক তৃণমূল সাংসদের কথায়, ‘‘কেন্দ্রীয় স্তরে বিজেপি বিরোধী জোট গঠনে তৃণমূল বরাবরই আন্তরিকতা দেখিয়ে এসেছে। আমাদের নেত্রী বরাবরই যে যেখানে শক্তিশালী সে সেখানে বিজেপির বিরুদ্ধে প্রার্থী দেওয়ার কথা বলে এসেছেন। তাই বেঙ্গালুরুর বৈঠকেও আমাদের অবস্থান স্পষ্ট।’’ মমতার মতামতের গুরুত্ব বোঝাতে গিয়ে ওই সাংসদ বলেছেন, ‘‘মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের মতো রাজনৈতিক অভিজ্ঞতা আর কোনও বিরোধী রাজনৈতিক দলের নেই। পশ্চিমবঙ্গের মতো রাজ্যে পরপর তিন বার মুখ্যমন্ত্রী হয়েছেন। সঙ্গে সাত বার সাংসদ হওয়ার পাশাপাশি, তিন বার কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভায় কাজ করেছেন তিনি। জাতীয় রাজনীতিতে এমন একজন রাজনীতিকের মতামতের যথেষ্ট গুরুত্ব রয়েছে।’’ গত পটনার বৈঠকে অর্ডিন্যান্সের প্রশ্নে দ্বন্দ্ব তৈরি হয়েছিল আপ ও কংগ্রেসের। তাই এই বৈঠকে আপ আদৌ সামিল হবে কি না, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছিল। তবে রবিবার সেই বিষয়টিও স্পষ্ট হয়ে গিয়েছে।
বৈঠকের আগে দিল্লির আমলাদের নিয়ন্ত্রণ সংক্রান্ত অধ্যাদেশ নিয়ে কংগ্রেস নেতৃত্বের অবস্থান স্পষ্ট করার দাবি জানিয়েছিলেন আপ নেতৃত্ব। কংগ্রেস বৈঠকের আগে অবস্থান স্পষ্ট না করলে বেঙ্গালুরুতে মহাজোটের বৈঠক বয়কট করা হবে বলেও জানিয়ে দিয়েছিল আপ। কংগ্রেস ছাড়া বাকি বিজেপি বিরোধী সব রাজনৈতিক দল কেজরীওয়ালকে সমর্থন জানিয়েছিল। আর শনিবারই কংগ্রেসের সংসদীয় রণকৌশল সংক্রান্ত গোষ্ঠীর বৈঠকে এ নিয়ে সিদ্ধান্ত হয়। ঠিক হয়েছিল, অন্যান্য বিরোধী দলের মতোই আপের পাশে থাকবে কংগ্রেসও। রবিবার দলের সাধারণ সম্পাদক কেসি বেণুগোপাল বলেন, ‘‘কংগ্রেস কেন্দ্রের ওই অধ্যাদেশকে সমর্থন করে না। আমরা আশা করছি, সোম ও মঙ্গলবারের বিরোধী বৈঠকে আপ হাজির থাকবে।’’ বেণুগোপাল অবশ্য অধ্যাদেশের বিরোধিতা নিয়ে বলতে গিয়ে একবারও আপের নাম করেননি। সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে আপ সাংসদ রাঘব চড্ডা জানান, দলের সিনিয়র নেতারা সিদ্ধান্ত নিয়েছেন যে, ১৭ এবং ১৮ জুলাই বেঙ্গালুরুতে বিরোধী দলগুলির বৈঠকে আপ হাজির থাকবে। আপের হয়ে আহ্বায়ক অরবিন্দ কেজরীওয়াল, ভগবন্ত মান এবং সঞ্জয় সিংহ বৈঠকে অংশ নেবেন। কিন্তু আপের বিরোধী জোটের বৈঠকে শামিল হওয়ার খবরে স্বস্তি ফিরেছে বিরোধী জোটের নেতাদের মধ্যে।
তবে পটনার বৈঠকে ১৫টি দল সামিল হয়েছিল। রাজধানীর একটি সূত্র জানাচ্ছে, বেঙ্গালুরুর বৈঠকে ২০টি বিজেপি বিরোধী রাজনৈতিক দল শামিল হচ্ছে। রাজনীতির কারবারিদের একাংশের কথায়, গতবার নীতীশ কুমারের উদ্যোগে আয়োজিত বৈঠক হয়েছিল পটনায়। কারণ সেখানে বিজেপি বিরোধী সরকার রয়েছে। আর এ বার কর্নাটকে বিজেপিকে বিরাট হারিয়ে জয় পেয়েছে কংগ্রেস। তাই সিমলার বিকল্প হিসেবে কর্নাটককেই বেছে নিয়েছে কংগ্রেস। যদিও, বিজেপি সভাপতি জেপি নড্ডার রাজ্য হিমাচল প্রদেশেই এই বৈঠকের আয়োজন করতে চেয়েছিল এআইসিসি। কারণ, ওই রাজ্যেও বিজেপিকে হারিয়ে ক্ষমতা দখল করেছে কংগ্রেস। কিন্তু প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের কারণে সিমলা থেকে সেই বৈঠক সরিয়ে নেওয়া হয়েছে।