রাজ্যপাল সিভি আনন্দ বোস। —ফাইল চিত্র।
নিজের প্রেস সচিব শেখর বন্দ্যোপাধ্যায়কে সরিয়ে দিলেন রাজ্যপাল সিভি আনন্দ বোস। যে সংবাদ প্রকাশ্যে আসা মাত্রই প্রশ্ন উঠছে, নবান্নের সঙ্গে রাজভবনের দূরত্ব কি আরও বাড়তে চলেছে? সম্প্রতি রাজভবনের তরফে নেওয়া ওই পদক্ষেপের পর এমনই প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে প্রশাসনিক মহলে। একই কায়দায় গত ফেব্রুয়ারি মাসে রাজ্যপাল তাঁর প্রধান সচিবের পদ থেকে নন্দিনী চক্রবর্তীকে সরিয়ে দিয়েছিলেন। সেই ঘটনা নিয়েও টানাপড়েন চলেছিল নবান্ন-রাজভবনের মধ্যে।
স্বভাবতই প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে, প্রেস সচিবকে সরিয়ে দিয়ে আসলে কি নবান্নকে বার্তা পাঠাতে চাইছেন রাজ্যপাল বোস? কারণ, পশ্চিমবঙ্গ সরকারের সঙ্গে সদ্যসমাপ্ত পঞ্চায়েত নির্বাচন নিয়ে রাজ্যপালের দ্বন্দ্ব প্রকাশ্যে এসেছিল বার বার। কখনও রাজভবনে শান্তিকক্ষ তৈরি করা, কখনও আবার প্রাক্তন বিচারপতির নেতৃত্বে শান্তি সম্প্রীতির কমিটি গঠনের মতো সিদ্ধান্ত নিয়ে রাজ্য সরকারের সঙ্গে চরম বিবাদ হয়েছে রাজ্যপালের। তার ওপর পঞ্চায়েত ভোটের সন্ত্রাসকবলিত এলাকা পরিদর্শনে যাওয়া থেকে শুরু করে সাংবাদিক বৈঠক করে রাজ্য সরকারের প্রশাসনিক কাজকর্ম নিয়েও প্রশ্ন তুলেছিলেন বোস। পাল্টা রাজ্য সরকারের মন্ত্রীরাও আক্রমণ শানিয়েছিল রাজ্যপালকে। সেই আবহে রাজ্য সরকারের মনোনীত প্রেস সচিবকে সরিয়ে নবান্নকে কি কড়া বার্তা দিতে চাইছেন বোস? এমন প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছে রাজ্য রাজনীতির অন্দরমহলের একাংশে। রাজ্যপালের প্রেস সচিব পদে শেখরকে পাঠানো হয়েছিল তথ্য সংস্কৃতি দফতর থেকে। তিনি আবারও সেই দায়িত্বেই ফিরে গিয়েছেন বলে প্রশাসন সূত্রে খবর।
পঞ্চায়েত ভোটের পরেই দিল্লিতে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে গিয়েছিলেন রাজ্যপাল বোস। আর তার পরেই প্রেস সচিবকে অব্যাহতি দেওয়া নিয়ে রাজভবনের কি কোনও অভ্যন্তরীণ সমীকরণ কাজ করেছে? তা নিয়ে আলোচনাও শুরু হয়েছে রাজনৈতিক থেকে প্রশাসনিক মহলে। উল্লেখ্য, চলতি বছর জানুয়ারি মাসে নবান্নের পাঠানো তিনটি নামের মধ্যে থেকে শেখরকে নিজের প্রেস সচিব হিসাবে নিজেই বেছে নিয়েছিলেন বোস। তাই হঠাৎ তাঁকে এই দায়িত্ব থেকে সরিয়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। প্রায় এক রকম ভাবে গত ফেব্রুয়ারি মাসে রাজ্যপাল তাঁর প্রধান সচিবের পদ থেকে নন্দিনীকে সরানোর পর তিক্ততা তৈরি হয়েছিল নবান্ন-রাজভবনের মধ্যে। পরে নন্দিনীকে পর্যটন দফতরের সচিব পদে পাঠানোর সিদ্ধান্ত নেয় রাজ্য সরকার। যদিও রাজ্যপালের সচিবের পদ এখনও শূন্য রয়েছে।
এ বার প্রেস সচিবকে সরিয়ে আবারও রাজ্য সরকারের সঙ্গে চলা ‘সঙ্ঘাতের পরিস্থিতি’ জিইয়ে রাখার ইঙ্গিত দিয়েছেন বোস, এমনটাই মত বাংলার রাজনীতির কারবারিদের একাংশের। এর আগে নির্বাচন কমিশন রাজীব সিংহের নিয়োগপত্র নবান্নে ফেরত পাঠিয়েও রাজ্য সরকারের প্রতি নিজের ‘কড়া’ মনোভাবের কথা জাহির করেছিলেন বোস। আর এই সিদ্ধান্তে নবান্নের সঙ্গে সন্ধির পথ এড়িয়ে নিজের পথে ‘অনড়’ থাকার বার্তা দিয়েছেন তিনি, এমনটাই মনে করছেন রাজনৈতিক বৃত্তে থাকা একাংশ। রাজ্যপালের প্রেস সচিবের কাজ মূলত রাজ্যপাল এবং রাজভবনের বিভিন্ন বিষয় নিয়ে সংবাদমাধ্যমের সঙ্গে সমন্বয় রক্ষা করে চলা। সঙ্গে রাজভবনের কথা সাধারণ মানুষের কাছে পৌঁছে দেওয়া। তবে প্রশাসনিক মহলের একাংশের মতে, এ বারের পঞ্চায়েত ভোটে রাজ্যপালকে ঘিরে সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত বিভিন্ন খবরের জন্যই প্রেস সচিবকে সরিয়ে দিয়েছেন রাজ্যপাল। তবে এ প্রসঙ্গে রাজভবন বা নবান্ন কেউই কোনও মন্তব্য করেনি।