এক ফ্রেমে প্রাক্তন ও বর্তমান। ছবি— পিটিআই।
এ বছরই দুই রাজ্যের ভোট। ২০২৩-এ কংগ্রেস শাসিত দুই রাজ্যে নির্বাচন এবং সর্বোপরি, ২০২৪-এ ‘মোদী হাওয়া’র মোকাবিলা। আগামী দু’বছরে এই পাঁচ ‘চ্যালেঞ্জ’ মাথায় নিয়েই কংগ্রেস সভাপতির পদে বসলেন মল্লিকার্জুন খড়্গে। বুধবার, নয়াদিল্লির ‘অল ইন্ডিয়া কংগ্রেস কমিটি’ (এআইসিসি) সদর দফতরে আনুষ্ঠানিক ভাবে সভাপতির দায়িত্বভার গ্রহণ করেন আশি পেরোনো খড়্গে। অনুষ্ঠানে অন্যান্যদের সঙ্গে হাজির ছিলেন দলের সদ্য প্রাক্তন অন্তর্বর্তী সভানেত্রী সনিয়া গান্ধী, সাংসদ রাহুল গান্ধী এবং কংগ্রেসের সাধারণ সম্পাদক প্রিয়ঙ্কা গান্ধীও।
কংগ্রেসের কেন্দ্রীয় নির্বাচন কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান মধুসূদন মিস্ত্রীর হাত থেকে সভাপতি ভোটে জয়ের শংসাপত্র গ্রহণ করেন খড়্গে। তার আগে রাজঘাটে গিয়ে মহাত্মা গান্ধীর সমাধিস্থলে শ্রদ্ধা জানান। দেখা করেন প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংহের সঙ্গেও।
সভাপতি হিসেবে নিজের প্রথম সম্ভাষণে ‘গ্র্যান্ড ওল্ড পার্টি’র প্রধান খড়্গের মুখে উঠে আসে তারুণ্যের শপথের কথা। পাশাপাশি বলেন, ‘‘এটা আমার জন্য আবেগের ব্যাপার। এক জন শ্রমিকের ছেলে, ব্লক স্তরের সাধারণ কংগ্রেস কর্মী হিসাবে জীবন শুরু করে আজ দলের প্রধানের পদে বসতে পারা আমাকে আবেগাপ্লুত করে তুলেছে। আমাকে এই দুর্লভ সম্মান প্রদর্শনের জন্য আপনাদের সবাইকে নতমস্তকে ধন্যবাদ জানাই।’’
সভাপতি পদে দায়িত্ব নেওয়ার পর এ বার খড়্গের সামনে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ, আগামী দু’বছরের মধ্যে পর পর পাঁচটি মহাগুরুত্বপূর্ণ নির্বাচনের জন্য কংগ্রেসকে প্রস্তুত করা। বস্তুত, ২০২৪-এর লোকসভা ভোটের আগে দেশের অন্তত ১১টি রাজ্যে বিধানসভা ভোট। সেখানে কেমন ফল করছে কংগ্রেস, তার উপরই নির্ভর করছে ’২৪-এর লোকসভায় মোদীর মোকাবিলা। পাশাপাশি তাঁকে লড়তে হবে গান্ধী পরিবারের বটগাছসম ছায়ার সঙ্গেও। প্রসঙ্গত, ১৯৯৮-এ সীতারাম কেশরীর চব্বিশ বছর পর কংগ্রেস সভাপতির পদে বসলেন এমন একজন, যাঁর পদবি গান্ধী নয়। যদিও কংগ্রেসের অন্দরের কানাঘুষো, গান্ধী পরিবারের বরাভয় না থাকলে অশীতিপর খড়্গের পক্ষে এই পদে বসা হত না। তাই কংগ্রেসকে ঢেলে সাজাতে খড়্গেকে সংগঠন মজবুত করার পাশাপাশি লড়তে হবে গান্ধী পরিবারের অদৃশ্য ছায়ার সঙ্গেও।
বুধবার খড়্গের আনুষ্ঠানিক দায়িত্বভার গ্রহণের অনুষ্ঠানে এআইসিসি সদস্যদের পাশাপাশি হাজির ছিলেন সনিয়া, রাহুল, প্রিয়ঙ্কাও। খড়্গেকে শুভেচ্ছা জানিয়ে সনিয়া বলেন, ‘‘কংগ্রেস সভাপতি হওয়া একটি বিরাট দায়িত্ব। সমস্ত দায়িত্ব আমি গুরুত্ব দিয়ে পালনের চেষ্টা করেছি। নতুন সভাপতি মল্লিকার্জুন খড়্গেকে শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানাই। বদলই পৃথিবীর চিরন্তন নিয়ম। কংগ্রেস পার্টি বহু চড়াই-উৎরাই দেখেছে, বস্তুত, এখনও দেখে চলেছে। আমি নিশ্চিত, খড়্গেজির নেতৃত্বে আগামী দিনে আমরা ঘুরে দাঁড়াতে সক্ষম হব।’’
খড়্গে কি পারবেন, আগামী লোকসভার আগে মোদীর মোকাবিলা করা সম্ভব— এ কথা দলের কর্মীদের বোঝাতে? পারবেন কি তারুণ্যের পাশাপাশি অভিজ্ঞদেরও মর্যাদা দিয়ে সংগঠনে প্রাণ ফেরাতে? লড়াই কঠিন, কিন্তু কর্নাটকের সেই ব্লক স্তর থেকে উঠে আসা মানুষটি যে হাল ছাড়তে নারাজ, তা স্পষ্ট করলেন প্রথম দিনই।