উদ্ধব ঠাকরে। ফাইল চিত্র।
রাজ্যপালের ডাক পেয়েও বিজেপি জানিয়ে দিল, সংখ্যা না-থাকায় মহারাষ্ট্রে সরকার গড়বে না তারা। রাতে দ্বিতীয় বৃহত্তম দল শিবসেনার পরিষদীয় নেতা একনাথ শিন্দেকে সরকার গড়তে ডাকলেন রাজ্যপাল ভগৎ সিংহ কোশিয়ারি।
শেষ পর্যন্ত একনাথই কি মুখ্যমন্ত্রী হবেন? প্রশ্ন থাকছে এখানেই। এত দিন শিবসেনা প্রধান উদ্ধব ঠাকরের পুত্র আদিত্যের নাম ঘুরছিল। আজ উদ্ধবকে মুখ্যমন্ত্রী চেয়ে ‘মাতোশ্রী’-র বাইরে পোস্টার পড়েছে। দল ভাঙার আশঙ্কায় ৫৬ বিধায়ককে মালাডের রিসর্টে রেখেছেন উদ্ধব, যেমন কংগ্রেস তাদের ৪৪ বিধায়ককে নিয়ে গিয়েছে রাজস্থানে। আজ রিসর্টে গিয়ে বিধায়কদের সঙ্গে বৈঠকের পরে উদ্ধব বলেছেন, ‘‘অন্যের পাল্কি অনেক বয়েছি। এ বার নিশ্চিত করব, যাতে পাল্কিতে বসেন কোনও শিবসৈনিক।’’
আজ দু’দফায় কোর কমিটির বৈঠকে বসে বিজেপির। তার পরে রাজ্যপালের সঙ্গে সাক্ষাৎ সেরে রাজ্য বিজেপির সভাপতি চন্দ্রকান্ত পাটিল বলেন, ‘‘বিজেপি-শিবসেনা জোট সরকারের জনাদেশ ছিল। আমরা একা সরকার গড়তে পারছি না। শিবসেনা যদি এখন জনাদেশকে অপমান করে এনসিপি-কংগ্রেসের সঙ্গে সরকার গড়তে চায়, তা হলে শুভেচ্ছা রইল।’’
এর পরেই শিবসেনার নেতা সঞ্জয় রাউত জানিয়ে দেন, ‘যে কোনও মূল্যে’ শিবসৈনিক মুখ্যমন্ত্রী চাইছেন উদ্ধব। যদিও শুধু এনসিপি (বিধায়ক সংখ্যা ৫৪) বা শুধু কংগ্রেসের সমর্থনে ম্যাজিক সংখ্যা ১৪৫ পেরোতে পারবে না শিবসেনা। তাদের চাই দুই দলকেই। তাই শিবসেনা আগাম বলে রেখেছে যে, কেউই তাদের শত্রু নয়। গত বিধানসভা ভোটে এনসিপি-কংগ্রেস জোটের নিয়ন্ত্রকের আসন শরদ পওয়ারকেই কার্যত ছেড়ে দিয়েছিলেন সনিয়া গাঁধী। এআইসিসি নেতারা জানেন, পওয়ারকে এড়িয়ে সনিয়া কোনও সিদ্ধান্ত নেবেন না। সেই পওয়ার ইদানীং বারবার বলেছেন, জনাদেশ মেনে বিরোধী আসনে বসবে তাঁর দল। কিন্তু শর্তসাপেক্ষে শিবসেনাকে সমর্থনের বার্তাও দিয়ে রেখেছে এনসিপি। সেই শর্ত হল, শিবসেনাকে পাকাপাকি ভাবে এনডিএ ছাড়তে হবে। কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভা থেকেও পদত্যাগ করতে হবে তাদের মন্ত্রীকে।
সূত্রের বক্তব্য, এখন শিবসেনাও এনসিপি-কে পাল্টা শর্ত দিচ্ছে। তাদের দাবি, এনসিপি প্রকাশ্যে ঘোষণা করুক যে, মুখ্যমন্ত্রী পদটি তারা শিবসেনাকেই ছাড়বে। সূত্রের বক্তব্য, পওয়ার নিজে বিরোধী আসনে বসার কথা বললেও বর্তমান পরিস্থিতিতে এনসিপি মুখ্যমন্ত্রী পদের দিকে নজর দিচ্ছে বলে সন্দেহ করছে শিবসেনা। কারণ রাজ্য কংগ্রেস নেতৃত্ব চাইছেন, সমর্থন দিলে সরকারেও যোগ দিতে। আর কংগ্রেসের পক্ষে তখনই সরকারে যোগ দেওয়া সহজ, যখন এনসিপি-র কেউ মুখ্যমন্ত্রী হবেন। এই পরিস্থিতিতে মুখ্যমন্ত্রী পদে পওয়ারের নামও ভেসে উঠছে। ফলে সতর্ক শিবসেনা।
আরও পড়ুন: ‘মনের কথা’ আর বললেন না গগৈ
তবে বিজেপিকে চটালে কেন্দ্রীয় সংস্থার তদন্তের মুখে পড়ার আশঙ্কার কথাও বলছেন এনসিপি-র কেউ কেউ। উপরন্তু পওয়ারের সঙ্গে নরেন্দ্র মোদীর সম্পর্ক মোটের উপরে ভাল। তাই আপাতত আগ বাড়িয়ে পওয়ার কিছু বলছেন না। বিজেপির তরফেও পওয়ারের আস্থা অর্জনের চেষ্টা চলছে।
কারও কারও আবার মত, বিজেপি চাইছেই শিবসেনার নড়বড়ে সরকার হোক। বিজেপি নেতৃত্ব দাবি করেছেন, শিবসেনা ও বিরোধী শিবিরের বেশ কিছু বিধায়কের সঙ্গে তাঁদের কথাবার্তা চূড়ান্ত হয়ে রয়েছে। কাজেই ভবিষ্যতে কর্নাটক বা উত্তর-পূর্বের কায়দায় দলবদলের পথ খোলা থাকছেই।