একনাথ শিন্দে। —ফাইল চিত্র।
মিশন ৪৫ প্লাস।
২০২৪-এর লোকসভা নির্বাচনে মহারাষ্ট্রে লক্ষ্য ৪৮টির মধ্যে অন্তত ৪৫টি আসন। তা পূরণে পর পর দু’বছরে প্রথমে শিবসেনা এবং এ যাত্রায় এনসিপি-তে ভাঙন ধরিয়ে মরাঠাভুমে নিজেদের ঘর অনেকটাই গুছিয়ে নিল পদ্ম শিবির। পরবর্তী ধাপে ওই রাজ্যে আড়াআড়ি ভাঙন ধরার আশঙ্কা করা হচ্ছে কংগ্রেসে। আর তা যদি হয়, তবে মহারাষ্ট্রে বিজেপির ষোলো কলা পূর্ণ হবে।
গত কাল আচমকা পট পরিবর্তনে মহারাষ্ট্রের রাজ্য রাজনীতিতে বদলে দিয়েছে বেশ কয়েকটি সমীকরণ। গত বর্ষায় সরকার পরিবর্তনের পর থেকে ‘ছদ্ম’ মুখ্যমন্ত্রী হয়েই ক্ষমতা ভোগ করছিলেন শিবসেনার নেতা একনাথ শিন্দে। বকলমে রাজ্য সামলাচ্ছিলেন বিজেপি নেতা তথা উপমুখ্যমন্ত্রী দেবেন্দ্র ফডণবীস। এ বার শিন্দে মন্ত্রিসভায় দেবেন্দ্রের সহযোগী হতে চলেছেন অজিত পওয়ার। দেবেন্দ্র তো বটেই, মহারাষ্ট্রের রাজনীতিতে অজিত ধারে ও ভারে শিন্দের থেকে কয়েক মাইল এগিয়ে। মহারাষ্ট্রে শরদ পওয়ারের পরে জননেতা বলতে তাঁর ভাইপো অজিতই। ফলে গত কালের পরে শিন্দের রাজনৈতিক ভবিষ্যৎ নিয়ে প্রশ্ন উঠে গিয়েছে। যে জল্পনা আজ উস্কে দিয়েছেন শিবসেনার বালাসাহেব গোষ্ঠীর নেতা উদ্ধব ঠাকরে। তিনি বলেন, ‘‘অজিত পওয়ারকে মুখ্যমন্ত্রী করতে হবে এমনটাই ডিল হয়েছে বিজেপি ও এনসিপি-র। সরকারে এনসিপি-র যোগদান পর্ব শেষ। এ বার শিন্দেকে সরিয়ে অজিত পওয়ারের মুখ্যমন্ত্রী হওয়া সময়ের অপেক্ষা।’’
অজিতের দাবি মতো ৪০ জন বিধায়ক যদি এনসিপি-র হয়ে সরকারকে সমর্থন করেন, তা হলে অবধারিত ভাবে বিজেপির কাছে গুরুত্ব হারাবেন শিন্দে। তাই আজ সকালে শিন্দে শিবির থেকে বার্তা দেওয়া হয়, অজিত উপমুখ্যমন্ত্রী হওয়ায় শিন্দে খুশি নন। কিন্তু পরে দাবি করা হয়, ওই বার্তা সঠিক নয়। রাজনীতির অনেকের মতে, উদ্ধবের সঙ্গে ঝামেলা করে শিবসেনা ভেঙে বেরিয়ে আসা শিন্দের পক্ষে এখন পিছু হটা রীতিমতো কঠিন। তাই আগামী দিনে বিজেপির কথামতো পদক্ষেপ না করলে, উল্টে রাজনৈতিক ভাবে তাঁর আরও দেউলিয়া হওয়ার আশঙ্কা। মহারাষ্ট্রের বিজেপিকে ক্ষমতায় নিয়ে আসার প্রশ্নে শিন্দের সঙ্গে হাত মেলানো বিক্ষুব্ধ শিবসেনা সাংসদদের অন্তত এক জনকে কেন্দ্রীয় মন্ত্রী করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল বিজেপি। কিন্তু যখন এনসিপি নেতৃত্ব শিন্দের চেয়ে বেশি সংখ্যক বিধায়ক নিয়ে সরকারে যোগ দিচ্ছন, তখন লোকসভায় কোন শরিকের প্রতিনিধিকে পাঠানো হবে তা নিয়ে সংশয় তৈরি হয়েছে। সূত্রের মতে, প্রফুল্ল পটেল নিজে কেন্দ্রীয় মন্ত্রী হতে আগ্রহী। এই পরিস্থিতিতে দু’দলকেই সমান গুরুত্ব দিলে সমস্যা নেই। কিন্তু যদি একটি দল থেকে বেছে নেওয়ার পরিস্থিতি তৈরি হয়, সে ক্ষেত্রে শিন্দে শিবিরের উপরে কোপ পড়ার আশঙ্কা বলে মনে করছেন অনেকে। সে ক্ষেত্রে জোট শরিকের অন্যতম দল হিসাবে আরও দুর্বল হয়ে পড়বেন শিন্দেরা।
এ দিকে মহারাষ্ট্রের ওই ভাঙনের ছায়া পড়েছে বিহারেও। ভাঙন ধরার আশঙ্কা মহাজোটের সূত্রধর নীতীশ কুমারের দল জেডিইউ-তেও। যদিও আজ বিহার বিজেপির অন্যতম শীর্ষ নেতা সুশীল মোদী জানিয়েছেন, দল ভাঙার পরিস্থিতিতে নীতীশ যদি বিজেপির দরজার সামনে নাকখত দেন, তা হলেও তাঁকে এনডিএ-তে শামিল করা হবে না। গত কালের দুপরে আচমকা পওয়ার পরিবার তথা এনসিপি-তে ভাঙনের প্রভাব পড়েছে অন্য রাজ্যেও। জেডিএস নেতা কুমারস্বামী যেমন কর্নাটকের শাসক শিবিরে ভাঙনের আশঙ্কা করছেন। তেমনি অনেকের মতে বিজেপির পরবর্তী লক্ষ্য হল রাজস্থান। মরু রাজ্যে দলের শীর্ষ দুই নেতার কোন্দলকে কেন্দ্র করে কংগ্রেসকে ভাঙতে তৎপর রয়েছেন বিজেপি নেতৃত্ব।