উদ্ধব ঠাকরে এবং একনাথ শিন্ডে। ফাইল চিত্র।
উদ্ধব ঠাকরে শিবিরের দাবি মেনে একনাথ শিন্ডে-সহ ১৬ জন বিদ্রোহী শিবসেনা বিধায়কের পদ খারিজের জন্য প্রক্রিয়া শুরু করলেন মহারাষ্ট্র বিধানসভার ডেপুটি স্পিকার (ভারপ্রাপ্ত স্পিকার) নরহরি সীতারাম জিরওয়াল। মহারাষ্ট্র বিধানসভা সচিবালয় সূত্র জানানো হয়েছে, শনিবার ওই বিধায়কদের একটি নোটিস পাঠিয়েছেন তিনি। সোমবারের মধ্যে ১৬ বিধায়ককে জবাবদিহি করতে বলা হয়েছে।
ভার্চুয়াল বৈঠক করার কথা থাকলেও উদ্ধব শনিবার বিকেলে শিবসেনার জাতীয় কর্মসমিতির বৈঠকে হঠাৎই সশরীরে হাজির হন। তাঁর উপস্থিতিতে বৈঠকে পাশ হয় ছ’দফা প্রস্তাব। ‘বিশ্বাসঘাতক নেতাদের’ বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য উদ্ধবকে একক ভাবে সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষমতা দিয়েছে জাতীয় কর্মসমিতি। অন্য দিকে, শিন্ডে গুয়াহাটির হোটেলে তাঁর অনুগামী বিধায়কদের সঙ্গে বৈঠক করেন।
এরই মধ্যে শনিবার বিকেলে ঠাণের উল্লাসনগরে একনাথের ছেলে তথা শিবসেনা সাংসদ শ্রীকান্ত শিন্ডের দফতরে উদ্ধব অনুগামী শিবসৈনিকেরা ভাঙচুর চালান বলে অভিযোগ। এর আগে দুই বিদ্রোহী বিধায়ক, পুণের তানাজি সাওয়ন্ত এবং ওসমানাবাদের জ্ঞানরাজ চৌগুলের দফতরেও হামলা হয়। বিজেপি ঘনিষ্ঠ নির্দল সাংসদ নবনীত রানা আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির গুরুতর অবনতির অভিযোগ তুলে মহারাষ্ট্রে রাষ্ট্রপতি শাসনের দাবি তুলেছেন।
শিন্ডে-সহ ১৬ বিধায়কের বিরুদ্ধে কোনও কারণ না দেখিয়ে বুধবারের শিবসেনা পরিষদীয় দলের বৈঠকে গরহাজিরাকে ‘দলত্যাগ বিরোধী আচরণ’ বলে চিহ্নিত করেছে উদ্ধব শিবির। যদিও বিদ্রোহী শিবিরের অন্যতম ‘মুখ’ দীপক কেসরকর শনিবার বলেন, ‘‘আমরা দুই-তৃতীয়াংশ বিধায়ক এক সঙ্গে রয়েছি। কিন্তু আমরা শিবসেনা ছাড়িনি। বালাসাহেবের আদর্শও ছাড়িনি। তাই এ ক্ষেত্রে দলত্যাগের অভিযোগই তোলা যায় না।’’
শিবসেনার ৫৫ বিধায়কের মধ্যে অন্তত ৩৮ জন শিন্ডে শিবিরে নাম লিখিয়েছেন। সেই সঙ্গে ৮ নির্দলও। বৃহস্পতিবার উদ্ধবের বৈঠকে হাজির ছিলেন মাত্র আদিত্য-সহ মাত্র ১৪ জন বিধায়ক। ফলে পরিষদীয় পাটিগণিতের হিসাব বলছে, উদ্ধবের পক্ষে গদিরক্ষা কঠিন। এই পরিস্থিতিতে বালাসাহেব পুত্র ‘বহিষ্কারের অঙ্কে’ ভর করতে চাইছেন বলে মনে করা হচ্ছে। উদ্ধব শিবিরের এই পদক্ষেপের পিছনে এনসিপি প্রধান শরদ পওয়ারের ‘মস্তিষ্ক’ রয়েছে বলে মনে করছেন রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের একাংশ। ঘটনাচক্রে, ডেপুটি স্পিকার জিরওয়ালও এনসিপি বিধায়ক।
দলত্যাগ বিরোধী আইনের শর্ত অনুযায়ী, পরিষদীয় দলে ভাঙনের স্বীকৃতির জন্য দলত্যাগ বিরোধী কার্যকলাপে অভিযুক্ত হননি, এমন অন্তত দুই-তৃতীয়াংশ বিধায়কের সমর্থন প্রয়োজন। ধাপে ধাপে দলত্যাগ বিরোধী আইনে অভিযুক্ত করা হলে বিদ্রোহী শিবিরের ‘লক্ষ্যপূরণ’ কঠিন হয়ে পড়বে। প্রসঙ্গত, মঙ্গলবার বিধানসভার দলনেতার পদ থেকে শিন্ডেকে সরিয়ে অজয় চৌধুরীকে নিয়োগের যে সিদ্ধান্ত শিবসেনা নিয়েছিল, শুক্রবার তাকে স্বীকৃতি দিয়েছেন ভারপ্রাপ্ত স্পিকার জিরওয়াল। এর ফলে শিন্ডে শিবির কিছুটা বেকায়দায় পড়েছিল। শনিবারের নোটিসে সেই বিড়ম্বনা আরও বাড়ল বলে মনে করা হচ্ছে।