মুম্বইয়ে বিজেপি সদর কার্যালয়ের সামনে বিজেপি কর্মীদের উচ্ছ্বাস। ছবি: এএফপি
মহারাষ্ট্রে আবারও গেরুয়া হাওয়া। ফের ক্ষমতায় আসছে বিজেপি-শিবসেনা জোট। তবে সেই হাওয়ার দাপট কিছুটা হলেও স্তিমিত। আসন সংখ্যা কমছে। পাশাপাশি জোটে শিবসেনার প্রভাব বাড়তে চলেছে বলেই মত রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের। একটি সূত্রে এমন খবরও মিলছে যে আড়াই বছর করে দু’দলের মুখ্যমন্ত্রী করার প্রস্তাবও দিতে পারে শিবসেনা। ভাল ফল বিরোধী শিবিরের। বাড়ছে কংগ্রেস-এনসিপি-র আসন সংখ্যা।
মহারাষ্ট্রে যে ফের বিজেপি-শিবসেনা জোটই ক্ষমতায় আসছে, গণনার প্রবণতাতেই সেটা স্পষ্ট। কিন্তু সেই সরকারের রাশ কার হাতে থাকবে, বা জোটে কে বেশি শক্তিশালী হবে, তা নিয়ে শুরু হয়েছে চাপ-পাল্টা চাপের খেলা। শিবসেনার একটি খবর, আড়াই বছর তাদের দলের এবং আড়াই বছর বিজেপির মুখ্যমন্ত্রী— এই ছকের প্রস্তাব দিতে পারে। নিজেদের আসন খোয়ানো, বিরোধীদের শক্তিবৃদ্ধি, এই সব সমীকরণ মাথায় রেখে শিবসেনার সেই প্রস্তাব বিজেপি সহজে ফেলতে পাবরে না বলেই মত রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের। এর মধ্যে আবার এমন জল্পনাও ছড়ায় যে, শরদ পওয়ারের এনসিপির সঙ্গে জোটে যেতে পারে শিবসেনা। তবে সেই সম্ভাবনা উড়িয়ে দিয়ে দলের নেতা সঞ্জয় রাউত বলেছেন, ‘‘বিজেপি-শিবসেনা জোটের সরকারই হচ্ছে। এ নিয়ে কোনও দ্বিমত নেই।’’
কেন দর বাড়াতে চাইছে শিবসেনা? গণনার প্রবণতায় দেখা যাচ্ছে, বিজেপি-শিবসেনা জোট পেতে পারে ১৬০টির কাছাকাছি আসন। এর মধ্যে বিজেপির ঝুলিতে যেতে পারে ১০০-র আশেপাশে, বাকিটা শিবসেনার। ২০১৪ সালের নির্বাচনে আলাদা ভাবে লড়েছিল বিজেপি এবং শিবসেনা। ২৬০ আসনে প্রার্থী দিয়ে বিজেপি জিতেছিল ১২২। অন্য দিকে সবকটি আসনে (২৮২) প্রার্থী দিয়ে শিবসেনা জিতেছিল ৬৩ আসন। সেই সূত্রেই এ বার ভোটের আগে কম আসনেও সমঝোতায় রাজি হয় শিবসেনা।
আরও পড়ুন: গেরুয়া শিবির ক্ষমতায় ফিরলেও মহারাষ্ট্রে কমছে আসন, হরিয়ানায় জোর টক্কর কংগ্রেসের
কয়েক মাস আগে লোকসভা ভোটে প্রায় সমান সমান আসনে প্রার্থী দিয়ে লড়েছিল বিজেপি এবং শিবসেনা। বিজেপির জয় এসেছিল ২৩টি আসনে। শিবসেনা পেয়েছিল ১৮টি আসন। আগের বারের বিধানসভা নির্বাচন এবং লোকসভা ভোটের ফলের নিরিখে এ বার বিধানসভা ভোটের আগে ছোট শরিক হিসেবেই কম আসনে প্রার্থী দেওয়ার শর্তে জোটে রাজি হয় উদ্ধব ঠাকরের দল।
কিন্তু এ বারের ফলে দেখা যাচ্ছে আসন কমছে বিজেপির। কিন্তু শিবসেনা কার্যত তাঁদের আসন ধরে রাখতে পেরেছে। আবার বিজেপি দাবিদাওয়া না মানলে কংগ্রেস-শিবসেনা জোটে সামিল হওয়ার জল্পনাও রয়েছে। ফলে এক দিকে নিজেদের গড় ধরে রাখা, বিজেপির শক্তিক্ষয় এবং বিরোধী শিবিরে সামিল হলে বিজেপির ক্ষমতা হারানোর সম্ভাবনা— এই তিন সমীকরণেই বিজেপির সঙ্গে দর কষাকষিতে শক্তি বাড়াচ্ছেন শিবসেনা নেতৃত্ব।
আরও পড়ুন: যে মুখ্যমন্ত্রী করবে, তাকেই সমর্থন, হরিয়ানায় ত্রিশঙ্কুর ইঙ্গিত মিলতেই ঘোষণা দুষ্যন্ত চৌটালার
বিরোধী শিবিরকেও অবশ্য হতাশ করেননি ভোটাররা। আগের বারের তুলনায় উল্লেখযোগ্য ভাবে বাড়ছে এনসিপি-র আসন সংখ্যা। গত বার শরদ পওয়ারের দলের হাতে ছিল ৪১ আসন। এ বার তা বেড়ে হচ্ছে ৫৫-র আশেপাশে। কংগ্রেসও তাদের আসন ধরে রাখছে। দু’-একটি আসন বাড়তেও পারে।
অর্থাৎ নিজেদের গড় অটুট রেখেও বিজেপি-শিবসেনার জোটে ভাঙন ধরাতে পেরেছে বিরোধীরা। পাশপাশি এটাও মাথায় রাখতে হবে, ২০১৪ সালে বিজেপি-শিবসেনা আলাদা লড়েছিল। এ বার সেখানে জোট বেঁধে লড়েছে। তার পরেও আসন বাড়ানো বিরোধী জোটের কাছে ঘুরে দাঁড়ানোর রসদ দিচ্ছে বলেই মনে করছেন রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকরা।