স্ত্রী নেহার সঙ্গে সাগরের জনসভায় মুকেশ পটেল। ছবি: সংগৃহীত।
মঞ্চে হাজির মুখ্যমন্ত্রী। উপস্থিত ছিলেন আরও নেতা-নেত্রীরা। মঞ্চের কয়েক হাত দূরে থিকথিক করছে ভিড়। মুখ্যমন্ত্রী ভাষণ দেওয়া শুরু করলেন। সেই ভাষণের মাঝেই মঞ্চে তাঁর পা থেকে কয়েক হাত দূরে ছিটকে এসে পড়ল এক শিশু! ভিড়ের মধ্যে থেকে মুখ্যমন্ত্রীকে লক্ষ্য করে শিশুটিকে ছুড়ে দিয়েছিল তারই বাবা। মঞ্চে একটি শিশুকে আছড়ে পড়তে দেখে ভাষণ থামিয়ে দিয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী। এমন দৃশ্যে শোরগোল উঠল জনসভায়। কে ছুড়ে দিলেন শিশুটিকে, কার এই শিশু, সবাই যখন এই প্রশ্নের উত্তর খুঁজছেন, বিষণ্ণ চেহারার এক ব্যক্তি ভিড় থেকে এগিয়ে গেলেন মঞ্চের দিকে। বললেন, “ও আমার সন্তান!”
বিচলিত এবং উদ্বিগ্ন মুখের দিকে তখন হাজারো নজর ঠিকরে পড়ছিল। কী সর্বনেশে কাণ্ড! এমনটা কেউ করে নাকি! ভিড়ের মধ্যে এই গুঞ্জন উঠল। শিশুটিকে তখন মঞ্চ থেকে তুলে তার মায়ের কোলে ফিরিয়ে দিয়েছিলেন নিরাপত্তারক্ষীরা। কিন্তু শিশুটিকে কেন ছুড়ে দিয়েছিলেন মঞ্চে? নিরাপত্তারক্ষীরা তাঁকে প্রশ্ন করতেই কেঁদে ফেলেন ওই ব্যক্তি।
শিশুটির বাবার নাম মুকেশ পটেল। পেশায় দিনমজুর। স্ত্রী আর এক বছরের সন্তান নিয়ে তাঁর পরিবার। কিন্তু মুকেশের বড় আক্ষেপ, অনেক ডাক্তার, বদ্যি দেখিয়েও সন্তানকে সুস্থ করে তুলতে পারেননি। কয়েক লক্ষ টাকা খরচ হয়ে গিয়েছে। কিন্তু তাতেও কোনও লাভ হয়নি। মুকেশ জানিয়েছেন, তাঁর সন্তানের যখন তিন মাস বয়স, তখন হৃদ্যন্ত্রে ছিদ্র ধরা পড়ে। নিজেদের যাবতীয় সম্বল বিক্রি এবং ধারদেনা করে সন্তানের চিকিৎসা করিয়েছেন। ৪ লক্ষ টাকা খরচ হয়ে গিয়েছে ইতিমধ্যেই। কিন্তু চিকিৎসক জানিয়েছেন, দ্রুত অস্ত্রোপচার করতে হবে। সাড়ে ৩ লক্ষ টাকার প্রয়োজন। কিন্তু তাঁর মতো এক দিনমজুর এত টাকা কোথা থেকে জোগাড় করবেন ভেবেই দিশাহারা হয়ে পড়েছিলেন মুকেশ। একাধিক বার মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করতে চেয়েছিলেন। কিন্তু তাঁকে সেই সুযোগ দেওয়া হয়নি বলে অভিযোগ। শুধু তাই-ই নয়, পুলিশের কাছে গিয়েও একাধিক বার অনুনয়-বিনয় করেছেন মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করিয়ে দেওয়ার জন্য। কিন্তু তারা কোনও রকম সহযোগিতা করেনি বলেও দাবি মুকেশের।
মুখ্যমন্ত্রী জনসভার কথা শুনেই হাজির হয়েছিলেন। তাঁর দৃষ্টি আকর্ষণের জন্যই ছেলেকে মঞ্চের উপর ছুড়ে ফেলেছিলেন। মুকেশ বলেন, “আমার দুঃখ, আমার সন্তানের পরিস্থিতির কথা কারও কানে পৌঁছচ্ছিল না। আমি চাইছিলাম অন্তত মুখ্যমন্ত্রীর কাছে আমার সন্তানের অবস্থার কথা পৌঁছক। তাই সন্তানকে মঞ্চের উপর ছুড়ে দিয়েছিলাম। এখন সরকারি আধিকারিকেরা মুখ্যমন্ত্রীর কাছে আমার অবস্থার কথা পৌঁছে দিয়েছেন। মুখ্যমন্ত্রী আমাকে দেখা করতে বলেছেন।” খোদ মুখ্যমন্ত্রী জেলাশাসককে নির্দেশ দিয়েছেন বিষয়টি দেখাশোনা করার জন্য। ঘটনাটি মধ্যপ্রদেশের সাগরের। ওই জেলায় মুখ্যমন্ত্রী শিবরাজ সিংহ চৌহান এক জনসভায় গিয়েছিলেন। তখনই এই কাণ্ড ঘটে।