খারগনে ২০০ একর জমি নিয়ে তৈরি হয়েছিল আবাসন, যার সঙ্গে রয়েছে গোশালা। ছবি: সংগৃহীত।
কসাইখানা তৈরি হবে! কবরস্থান তৈরি হবে! মুসলিমরা বাস শুরু করবে! মুসলিম সেজে ‘ভয় দেখিয়ে’ জমি জবর দখলের অভিযোগ উঠল এক হিন্দু সংগঠনের বিরুদ্ধে। মধ্যপ্রদেশের খারগনে এ ভাবেই কম দামে প্রায় ২০০ একর জমি কিনে গড়া হয়েছে আবাসন। ঘটনায় নাম জড়িয়েছে বিজেপিরও। যদিও তারা অভিযোগ উড়িয়ে জানিয়েছে, এ সবে তাদের দলের কোনও হাত নেই। পুরোটাই ক্রেতা এবং বিক্রেতার বিষয়। আর সংগঠন জানিয়েছে, ভাল কাজের জন্যই জমি নিয়েছিল তারা।
খারগন শহরের উপকণ্ঠে ২০০০ সাল থেকে নিজেদের জমি বিক্রি করতে শুরু করেন বাসিন্দারা। বেশির ভাগই গরিব কৃষক। তাঁদের বিক্রি করা জমিতে এখন ঝাঁ চকচকে আবাসন। সঙ্গে একটি গোশালাও রয়েছে। সে সব দেখে নিজেদের ‘প্রতারিত’ মনে হচ্ছে বলে দাবি প্রাক্তন বাসিন্দাদের। দ্বারস্থ হয়েছেন পুলিশের। যদিও বাসিন্দাদের অভিযোগ, পুলিশ কোনও সক্রিয় পদক্ষেপ করেনি। প্রশ্ন করা হলে অভিযোগ নিয়ে কোনও মন্তব্য করেনি খারগন পুলিশ।
জানা গিয়েছে, এলাকার বাসিন্দাদের থেকে জমি কিনেছিল ‘তানজিম-এ-জারখেজ’ নামে একটি সংগঠন। যার মাথায় ছিলেন এক বিজেপি নেতা। প্রায় ২০০ একর জমি কেনার পর ২০০৭ সালে সেই সংগঠনের নাম হয়ে যায় ‘অধ্যাপক পিসি মহাজন ফাউন্ডেশন’। সংগঠনের প্রধান রবি মহাজনের সাফ জবাব, ‘‘আমরা ভাল কাজে ওই জমি ব্যবহার করেছি।’’
বিজেপির রাজ্য সম্পাদক রজনীশ আগরওয়ালও গোটা বিষয়টির সঙ্গে দূরত্ব বাড়িয়েছেন। বলেছেন, ‘‘এর সঙ্গে আমাদের দলের কোনও যোগ নেই। গোটা বিষয়টি বিক্রেতা আর ক্রেতাদের মধ্যে হয়েছে। তাঁদের সকলেরই নিজস্ব অর্থনৈতিক স্বার্থ ছিল।’’
জমি নেওয়ার পর নাম বদলে যায় সংগঠনের। নতুন নাম হয় ‘অধ্যাপক পিসি মহাজন ফাউন্ডেশন’। ছবি: সংগৃহীত
কৃষকরা এ সব মানতে চাননি। তাঁদের দাবি, ‘ছলচাতুরি’র মাধ্যমে জমি কেনা হয়েছে। যে এজেন্ট জমি কিনতে এসেছিলেন, তিনি মুসলিম ভেবেই সাত তাড়াতাড়ি জমি বিক্রি করেছিলেন। নন্দকিশোর কুশওয়াহা নামে ওই কৃষকের কথায়, ‘‘জাকির নামে এক জন জমি কিনতে আসেন। বলেন, চার পাশের সব জমি মুসলিমরা কিনে নেবেন। তাই ২০০৪ সালে জমি বিক্রি করে দিই।’’ নন্দকিশোর আরও বলেন, ‘‘ওই এজেন্ট বলেছিলেন এই জমিতে কসাইখানা তৈরি হবে। শীঘ্রই মুসলিমদের জমি বিক্রি করে দেওয়া উচিত, কারণ ওই এলাকায় তার পর থেকে বাস করবেন তাঁরাই।’’ তিনি জানিয়েছেন, ভয়ে ৪০ হাজার টাকার বিনিময়ে পাঁচ একর জমি বিক্রি করে দেন। অন্য কৃষকরা জানিয়েছেন, ওই এলাকায় কবরস্থান, হজ কমিটি হবে বলে ‘ভয়’ দেখানো হয়েছিল তাঁদের।
২০০২ সালে ‘তানজিম-এ-জারখেজ’ নামে সংস্থাটি তৈরি হয়েছিল। তারা জাকির শেখ নামে এক ব্যক্তিকে ম্যানেজার নিয়োগ করে। একটি সংবাদ মাধ্যমকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে জাকির জানিয়েছেন, এসবের কিছুই তিনি জানতেন না। তাঁর কথায়, ‘‘আমি ভেবেছিলাম সামাজিক কারণে কাজ করতে চায় সংগঠনটি। যদিও আমি কাউকে জমি বিক্রি করতে বাধ্য করিনি।’’ ওই সংস্থার মালিকরাই আবার অন্য একটি সংস্থা শুরু করেছিল, যার নাম প্রকাশ স্মৃতি সেবা সংস্থা। ওই সংস্থাও কিছু জমি কিনে নেয়।
মোট ২০০ একর জমিতে তৈরি হয়েছিল আবাসন প্রকল্প। তার মধ্যে ১৫০ একর জমি কেনা হয়েছিল ১১ জন ব্যক্তি বা সংগঠনের থেকে। বাকি জমি কেনা হয়েছিল কৃষকদের থেকে। ট্রাস্টের মাথায় ছিলেন বিজেপি নেতা রঞ্জিত সিংহ ডান্ডির। আগে তিনি বজরং দলের কো-কনভেনার ছিলেন। ম্যানেজার জাকিরের মতো তিনিও জানিয়েছেন সামাজিক কারণেই কাজ করেছে তাঁর সংগঠন। সমস্ত অভিযোগ উড়িয়ে জানিয়েছেন, ‘‘আমি পরিচিত বলে আমার নাম এসবে জড়ানো হয়েছে। আমি সাত বার জেল গিয়েছি। খুনের চার্জও রয়েছে আমার বিরুদ্ধে। কারণ আমি সারা জীবন ধরে হিন্দুদের জন্য কাজ করেছি।’’ সংগঠনের নাম নিয়ে প্রশ্নের মুখে তিনি বলেন, ‘‘নাম যদি ‘তানজিম-এ-জারখেজ’ হয়, তাতে ক্ষতি কী?’’