ছবি: এপি।
সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ ছিল শুক্রবার বিকেল পাঁচটার মধ্যেই বিধানসভায় আস্থাভোট নিতে হবে তাঁর সরকারকে। কিন্তু তার কয়েক ঘণ্টা আগেই সাংবাদিক বৈঠক ডেকে ইস্তফা দিলেন মুখ্যমন্ত্রী কমল নাথ। নির্বাচনে জিতে আসার ১৫ মাসের মধ্যেই পতন ঘটল মধ্যপ্রদেশের কংগ্রেস সরকারের। এ জন্য বিজেপির পাশাপাশি ‘ক্ষমতালোভী মহারাজার চক্রান্ত’ বলে এত দিনের সহকর্মী জ্যোতিরাদিত্য সিন্ধিয়াকেও বিঁধলেন কমল নাথ। দাবি করলেন, সিন্ধিয়ার অনুগামী যে ২২ জন বিধায়কের ‘বিশ্বাসঘাতকতায়’ সরকার পড়ে গেল, মানুষ তাঁদের ক্ষমা করবেন না।
জ্যোতিরাদিত্য সিন্ধিয়া বিজেপিতে যোগ দেওয়ার পরে তাঁর অনুগামী কংগ্রেসের ২২ জন বিধায়ককে বিজেপি তুলে নিয়ে গিয়ে বেঙ্গালুরুর একটি রিসর্টে রেখে দেয়। সেখান থেকে তাঁরা ইস্তফা দেওয়ার ঘোষণা করায় বিপন্ন হয়ে পড়ে কমল নাথ সরকার। স্পিকার বিধানসভায় হাজির হয়ে তাঁদের ইস্তফা দেওয়ার নির্দেশ দিলে অচলাবস্থা শুরু হয়। করোনাভাইরাস সংক্রমণের কারণ দেখিয়ে আস্থাভোট অনির্দিষ্ট কাল পিছিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করে কংগ্রেস। বিদ্রোহী বিধায়কেরা ইস্তফা দেওয়ার ঘোষণা করার পরেই সরকার সংখ্যালঘু হয়ে গিয়েছে দাবি করে অবিলম্বে বিধানসভায় আস্থাভোট চায় বিজেপি। বল গড়ায় সুপ্রিম কোর্টে।
সর্বোচ্চ আদালতের নির্দেশে শুক্রবার বিকেল পাঁচটার মধ্যেই মধ্যপ্রদেশ বিধানসভায় শক্তিপরীক্ষা নেওয়ার কথা ছিল। তার আগে সাংবাদিকদের ডেকে মুখ্যমন্ত্রী কমল নাথ বলেন, ‘‘১৫ মাস আগে আমি শপথ নেওয়ার পর থেকেই বিজেপি সরকার ফেলে দেওয়ার ষড়যন্ত্র শুরু করেছিল। গত এক পক্ষ কালে গণতান্ত্রিক মুল্যবোধের এক নতুন অবমূল্যায়ন দেখা গেল। শেষ পর্যন্ত গণতন্ত্রকে হত্যাই করল বিজেপি। মানুষ প্রত্যাখ্যান করেছেন, এমন এক জন ক্ষমতালোভী মহারাজা এবং তাঁর অনুগামী ২২ জন লোভী বিধায়কও তাদের এই কাজে পাশে দাঁড়াল।’’ নাম না-করলেও মহারাজা বলতে কমল যে সিন্ধিয়াকেই বিঁধেছেন, তা স্পষ্ট। গত লোকসভা নির্বাচনে কংগ্রেসের টিকিটে গুনা কেন্দ্র থেকে পরাজিত হয়েছিলেন সিন্ধিয়া। সে বিষয়টিও উল্লেখ করতে ছাড়েননি মুখ্যমন্ত্রী। এ দিন টুইটে সিন্ধিয়া বলেন, ‘রাজনীতি সর্বদা জনসেবার মাধ্যম হওয়া উচিত। কিন্তু এই সরকার তা থেকে বিচ্যুত হয়েছিল।’ কমলের ইস্তফাকে জনতার জয় বলেও বর্ণনা করেন সিন্ধিয়া।
আরও পড়ুন: করোনা-যুদ্ধে কেরলের মন্ত্র ‘ব্রেক দ্য চেন’
বস্তুত সিন্ধিয়া ও কমল নাথের বিবাদ বার বার ১০ জনপথ পর্যন্ত গড়িয়েছে। সিন্ধিয়া বিজেপিতে যোগ দেওয়ার পরে মধ্যপ্রদেশে সরকার খোয়াল কংগ্রেস। গোটা ঘটনায় বিষণ্ণ কংগ্রেস শিবির। কেন্দ্রীয় নেতাদের একাংশ মনে করছেন, দলে প্রবীণ-নবীন দ্বন্দ্ব এবং নেতৃত্বের সিদ্ধান্তহীনতার মাসুলই এই ভাবে দিতে হল। অথচ যে তিন রাজ্যে নির্বাচনী সাফল্যকে পুঁজি করে কংগ্রেস লড়াইয়ে ফেরার চেষ্টা করছিল, মধ্যপ্রদেশ তার একটি। এই রাজ্য হাতছাড়া হওয়ার পরে এখন বাকিগুলিও ধরে রাখা যাবে কিনা, তা নিয়ে সন্দিগ্ধ কংগ্রেস নেতৃত্ব।
বিজেপি অবশ্য সরকার ভাঙার দায় নিচ্ছে না। দলের এক নেতার কথায়, ঘরোয়া কোঁদলেই সরকার পড়েছে কমল নাথের। কিন্তু সংখ্যালঘু হয়েও সরকার চালিয়ে যেতে এবং ঘোড়া কেনাবেচা করে গরিষ্ঠতা অর্জনের লক্ষ্যে কালক্ষেপের কৌশল নিয়েছিলেন কমল নাথ। সুপ্রিম কোর্ট সেই কৌশল ভেস্তে দিয়েছে। এর পরে নিজেকে স্বচ্ছ ভাবমূর্তির নেতা বলে কমল নাথের বড়াই করা সাজে না। এ দিনের সাংবাদিক বৈঠকেই কমল দাবি করেছিলেন, ৪০ বছরের রাজনৈতিক জীবনে কখনও ঘোড়া কেনাবেচার মতো অসৎ কাজে তিনি জড়াননি।
সাংবাদিক বৈঠকের পরে এ দিন রাজভবনে গিয়ে রাজ্যপাল লালজি টন্ডনের কাছে পদত্যাগপত্র জমা দেন কমল নাথ। অন্তর্বর্তী মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে তাঁকে কাজ চালিয়ে যেতে বলেন রাজ্যপাল। নতুন পরিস্থিতিতে এ দিন বিকেলেই বৈঠকে বসেছিল বিজেপির পরিষদীয় দল। সব কিছু ঠিক থাকলে আগের মুখ্যমন্ত্রী শিবরাজ সিংহ চৌহানের নেতৃত্বে বিজেপির নতুন সরকার গঠন শুধু সময়ের অপেক্ষা। কমল নাথ সরকারের মন্ত্রী নির্দল বিধায়ক প্রদীপ জায়সবাল শুক্রবারই জানিয়েছেন, বিজেপির নতুন সরকারকে তিনি সমর্থন করছেন। আরও তিন নির্দল বিধায়কও আনুগত্য বদলাবেন বলে আশাবাদী বিজেপি শিবির। সন্ধ্যায় কমলের বাসভবনে এসে দেখা করেন শিবরাজ।