—প্রতীকী ছবি।
তেরো বছরের ছেলেই ডেকে তুলেছিল মাকে। খুলে বলেছিল, ন’বছরের বোনের সঙ্গে কী করেছে সে। ঘুমচোখে উঠে মা দেখেন, মেয়ে নেতিয়ে পড়েছে, তবে শ্বাস চলছে তখনও। ছেলেটাও দেখেছিল। তখন মায়ের সামনেই সে আবার গলা টিপে ধরে বোনের, যত ক্ষণ না তার শেষ স্পন্দনটা থেমে যায়।
একটু আগে এই ভাবেই বোনের গলা টিপে ধরেছিল ছেলেটা। তার পরে মাকে ডেকেছিল। জানিয়েছিল, খানিক আগে মোবাইলে পর্নোগ্রাফি দেখার পরে পাশে ঘুমোনো ছোট্ট বোনকে ও ধর্ষণ করেছে। বোন দাদাকে বলেছিল, বাবাকে সব বলে দেবে। তখনই তাকে গলা টিপে মেরে ফেলতে চেয়েছে ও। তারপর সত্যিই যখন বোন পুরোপুরি মারা যাচ্ছে কিশোর দাদার হাতে, মা চুপ করে দেখেছেন সব।
মধ্যপ্রদেশের রেওয়া জেলার জাভা থানা এলাকায় এমনই এক ঘটনা ঘটেছিল গত ২৪ এপ্রিল। রেওয়ার এসপি বিবেক সিংহ সংবাদমাধ্যমকে এত দিনে সবটা জানিয়েছেন। আরও বলেছেন যে, সে দিন দাদার হাতে বোন ধর্ষিতা ও খুন হওয়ার পরে পুরো ঘটনা ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা করেছিলেন তাদের মা এবং ১৭ ও ১৮ বছরের দুই দিদি। বাড়ির উঠোনেই মেয়েকে নিঃসাড় অবস্থায় পাওয়া গিয়েছিল বলে মা প্রথমে ডাক্তার-পুলিশকে জানিয়েছিলেন। কিন্তু আসলে সে দিন খুনটা হওয়ার পরেই দুই দিদি নিজেদের বিছানা ছেড়ে উঠে এসে অন্য জায়গায় শুয়ে পড়েছিল। যাতে পুলিশি তদন্ত শুরু হলে কে কার পাশে ঘুমোচ্ছিল, এই পুরো ব্যাপারটাই গুলিয়ে যায়। শেষ পর্যন্ত অবশ্য পুলিশের টানা জেরাতেই ভেঙে পড়ে এই স্বীকারোক্তি দেন মা ও দিদিরা। অভিযুক্ত কিশোর-সহ তাঁরা সবাই এখন পুলিশের জিম্মায়। দায়ের হয়েছে মামলা।
পুলিশ জানাচ্ছে, সে দিন মেয়েটিকে প্রথমে এক চিকিৎসকের কাছে নিয়ে গিয়ে বাড়ির লোকজন বলেছিলেন, তাকে বিষাক্ত পোকা কামড়েছে। প্রাইভেট প্র্যাক্টিস করা সেই চিকিৎসক দায়িত্ব নিতে চাননি। তখন নিথর শরীরটা নিয়ে যাওয়া হয় এক সরকারি ডাক্তারের কাছে। তিনি পরীক্ষা করে জানিয়ে দেন, ধর্ষণের পরে খুন করা হয়েছে মেয়েটিকে। তদন্তে নেমে পুলিশও এমন কোনও চিহ্ন পায়নি যাতে মনে হয়, সেই রাতে বাইরের কেউ ওই বাড়িটায় ঢুকেছিল। পরিবারটিও প্রথম থেকে বলে আসছিল, তারা কোনও অস্বাভাবিক শব্দ শোনেনি। এসপি বলেন, “ঘটনাস্থল থেকে প্রমাণ সংগ্রহ করে আর প্রায় ৫০ জনকে জিজ্ঞাসাবাদ করার পরে পুলিশ দেখে, মেয়েটির পরিবারের লোক বারবার বয়ান বদলাচ্ছেন। তখন তাঁদের টানা জিজ্ঞাসাবাদ করা শুরু হয়। এক সময়ে তাঁরা অপরাধ স্বীকার করেন।”
আম নাগরিকেরা অনেকেই শিউরে উঠেছেন রেওয়ার ঘটনার কথা শুনে। এঁরা অনেকেই খবরটা জেনেছেন স্মার্টফোনে— সংবাদমাধ্যমের অ্যাপ, ইউটিউব চ্যানেল বা সমাজমাধ্যমে। রেওয়ার ছেলেটির হাতেও তো মোবাইল ছিল! অতিমারির সময়ে স্কুল-কলেজের পড়াশোনার ভরসা ছিল মোবাইল। সরকারি টাকায় তাই আজও স্কুলপড়ুয়াদের ট্যাব কিনে দেয় পশ্চিমবঙ্গের মতো রাজ্যের সরকার। কিন্তু যে স্মার্টফোনে অনলাইন ক্লাস হয়, কখনও তা বেয়েই অন্তর্জাল থেকে নামতে থাকে রাশি রাশি নীল ছবি। কে করবে ২৪ ঘণ্টার নজরদারি?
মনোসমাজকর্মী মোহিত রণদীপ বলছেন, “জন্মের বছরখানেকের মধ্যেই আজকাল বাচ্চার হাতে স্মার্টফোন দিয়ে দেওয়া হচ্ছে। এই সমাজে এ ধরনের ঘটনা ঘটতেই পারে।” তাঁর মতে, ছোটরা যারা স্মার্টফোনে প্রাপ্তবয়স্কদের জন্য তৈরি জিনিস খুব সহজেই পেয়ে যায়, তারা নানা ভাবে সেগুলি পরখ করারও চেষ্টা করে। বয়ঃসন্ধিতে এই প্রবণতা খুবই স্বাভাবিক। আগে ১৩-১৪ বছর বয়সে ছেলেমেয়েরা যা জানত, এখন মোটামুটি ৮-৯ বছর বয়সেই তারা সে সব জেনে যাচ্ছে মোবাইল হাতে নিয়ে।
রেওয়ার ঘটনা সমাজকেই তাই হয়তো দাঁড় করাচ্ছে আয়নার সামনে।