তামিলনাড়ুর মুখ্যমন্ত্রী এম কে স্ট্যালিন। ফাইল চিত্র।
নরেন্দ্র মোদীর নেতৃত্বে বিজেপি কেন্দ্রে ক্ষমতায় আসার পর থেকেই গোটা দেশে এক ভাষা, এক ভোট, এক ধর্ম চালু করতে সক্রিয় হয়ে উঠেছে বলে অভিযোগ উঠেছে বারবার। শনিবার সেই সূত্র ধরেই বিজেপির বিরুদ্ধে দেশের বৈচিত্রকে ধ্বংস করে নিজেদের মত চাপিয়ে দেওয়ার অভিযোগ তুলে ফের সরব হলেন তামিলনাড়ুর মুখ্যমন্ত্রী এম কে স্ট্যালিন। একই সঙ্গে রাজ্য সরকারের প্রস্তাবিত একাধিক বিল আটকে রাখা নিয়ে রাজ্যপাল আর এন রবিকেও তীব্র আক্রমণ শানালেন তিনি।
শনিবার ইন্ডিয়ান ইউনিয়ন মুসলিম লিগ (আইইউএমএল)এর ৭৫-তম বার্ষিকী উপলক্ষে এক অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখতে গিয়ে ওই সংগঠনের সঙ্গে তাঁর বাবা, প্রয়াত মুখ্যমন্ত্রী এবং ডিএমকে নেতা এম করুণানিধির গভীর সম্পর্ক এবং তাঁর জীবনের ওই সংগঠনের প্রভাব নিয়ে বক্তব্য রাখেন স্ট্যালিন। সেই প্রসঙ্গেই টেনে আনেন সামাজিক ন্যায় বিচারের কথা। তিনি বলেন, সামাজিক ন্যায়, ভ্রাতৃত্ববোধ এবং সাম্য— এই তিনটিরই এক সঙ্গে ভারতকে রক্ষা করার ক্ষমতা রয়েছে।
এর পরেই কেন্দ্রের মোদী সরকারকে বিঁধে তিনি বলেন, ‘‘যারা দেশকে একটাই ধর্মবিশ্বাস, একটাই ভাষা, একটাই সংস্কৃতি, একটাই খাদ্যাভ্যাস, একটাই ভোট এবং একটা পরীক্ষাতেই বদলে দিতে চায়, তারা সামাজিক ন্যায়ের বিরুদ্ধে। তারা ভ্রাতৃত্ববোধ এবং সাম্যেরও বিরোধী।’’ এই প্রসঙ্গেই মোদী সরকারের তিন কৃষি আইন এবং সিএএ নিয়ে নীতিকে আক্রমণ করে তিনি বলেন, এরা কৃষক-বিরোধী, সংখ্যালঘু বিরোধী আইন তড়িঘড়ি পাশ করালেও অনলাইনে জুয়া খেলা ঠেকাতে কোনও আইন করতে বাধা দেয়! দেশ জুড়ে ডাক্তারি পড়ার জন্য নিট পরীক্ষার বিরোধিতায় বহু দিন ধরেই সরব ডিএমকে নেতৃত্ব। এই প্রসঙ্গ টেনে স্ট্যালিন বলেন, ওরা নিটের মতো পরীক্ষা চালু করে দরিদ্র পরিবারের ছেলেমেয়েদের স্বপ্ন ভেঙে দিতে চায়।
সঙ্ঘ পরিবারের হিন্দি-হিন্দু-হিন্দুস্থান নীতি মেনে নরেন্দ্র মোদী-অমিত শাহেরা গোটা দেশে হিন্দি ভাষাকেই মাধ্যম হিসেবে তুলে ধরতে মরিয়া। কিন্তু তামিলনাড়ু, কেরলের মতো দক্ষিণের রাজ্যগুলি বরাবরই এই নীতির বিরোধিতায় সরব। ওই অনুষ্ঠানে স্ট্যালিন দক্ষিণের ভাষা আবেগ উস্কে দিয়ে বলেন, ‘‘ওরা হিন্দি চাপিয়ে দিতে চায়। ওরা অন্য ধর্মের মানুষদের প্রতি ঘৃণা ছড়িয়ে দেয়। কিন্তু আমরা যদি অনলাইন জুয়ার অভিশাপ আটকাতে কোনও আইন চালু করতে চাই, ওরা তাতে বাধা দেয়।’’
অনলাইন জুয়া ঠেকাতে রাজ্য সরকারের আইন পুনর্বিবেচনার জন্য সম্প্রতি ফেরত পাঠিয়েছেন রাজ্যপাল রবি। এ দিন রবিকে নিশানা করে স্ট্যালিন বলেন, ‘‘চার মাস পরে উনি (রাজ্যপাল) বলছেন, রাজ্যের এই আইন আনার অধিকার নেই। উনি কি সেই রাজ্যের রাজ্যপাল, যার এই রকম একটা সাধারণ আইন আনারও ক্ষমতা নেই?’’ পরবর্তী লোকসভা ভোটে এই পরিস্থিতির অবসান ঘটাতে হবে বলেও এ দিনের অনুষ্ঠানে ডাক দেন স্ট্যালিন।