crime

নৃশংস অত্যাচারের পরে ধর্ষণ করে খুনই ছিল নেশা, কারাগারে আত্মঘাতী হয় এই সাইকো সিরিয়াল কিলার

২০০৯-এ প্রচুর তল্লাশির পরে পুলিশের জালে ধরা পড়ে জয়শঙ্কর। পুলিশের দাবি, জেরায় সে স্বীকার করে, ধর্ষণের আগে শিকারের উপর নৃশংস অত্যাচার তাকে আনন্দ দিত।

Advertisement
নিজস্ব প্রতিবেদন
শেষ আপডেট: ২৪ মার্চ ২০২০ ১২:৫৮
Share:
০১ ২০

ট্রাকচালকের পেশা দিয়ে শুরু অন্নসংস্থান। স্ত্রী আর তিন মেয়েকে নিয়ে ছিল সংসার। সেখান থেকে এম জয়শঙ্কর পরিণত হয়েছিল সিরিয়াল খুনিতে। তামিলনাড়ু, কর্নাটক, অন্ধ্রপ্রদেশ জুড়ে তিন বছরে তার হাতে ধর্ষণের পরে ধারাল অস্ত্রের আঘাতে প্রাণ হারিয়েছিলেন ১৯ জন মহিলা। দীর্ঘ কারাজীবনের শেষদিকে সে মানসিক রোগী হয়ে গিয়েছিল। নাম হয়েছিল ‘সাইকো জয়শঙ্কর’।

০২ ২০

জয়শঙ্করের জন্ম ১৯৭৭ সালে। তামিলনাড়ুর সালেমের কান্নিয়ানপট্টি গ্রামে তাঁর জন্ম। পুলিশের খাতায় প্রথমে তার নাম ওঠে ২০০৯ সালে। তবে তার এক বছর আগেই অপরাধ দুনিয়ায় পা রাখে জয়শঙ্কর।

Advertisement
০৩ ২০

২০০৯ সালে তার নামের পাশে যোগ হয় প্রথম অপরাধের অভিযোগ। ৪৫ বছর বয়সি এক মহিলাকে ধর্ষণের চেষ্টার অভিযোগ ওঠে। পরে অপরাধ প্রমাণিত হয়।

০৪ ২০

সে বছরই তার হাতে ধর্ষিতা হন ৩৯ বছরের এক পুলিশ কনস্টেবল। নিখোঁজ হওয়ার এক মাস পরে উদ্ধার হয় কনস্টেবলের দেহ। তদন্তে জানা যায়, অপহৃতাকে এক মাস ধরে একাধিকবার ধর্ষণের পরে খুন করে জয়শঙ্কর।

০৫ ২০

২০০৯-এ আরও একটি খুনের অভিযোগ ওঠে জয়শঙ্করের নামে। এ বার তার শিকার ৫০ বছরের মধ্যবয়সি। এই ঘটনায় তার সঙ্গী ছিল পি মোহন সেলভম। প্রথম অপরাধ থেকে এক বছরের মধ্যে ধর্ষণ ও খুন মিলিয়ে ১৩ টি অপরাধে অভিযুক্ত হয় জয়শঙ্কর।

০৬ ২০

২০০৯-এ প্রচুর তল্লাশির পরে পুলিশের জালে ধরা পড়ে জয়শঙ্কর। পুলিশের দাবি, জেরায় সে স্বীকার করে, ধর্ষণের আগে শিকারের উপর নৃশংস অত্যাচার তাকে আনন্দ দিত। কিন্তু বেশিদিন তাকে কারাগারের পিছনে ধরে রাখা যায়নি।

০৭ ২০

দু’বছর পরে আদালতে মামলার শুনানি সেরে কোয়ম্বত্তূর কারাগারে ফেরার পথে সালেম বাসস্ট্যান্ড থেকে পালায় জয়শঙ্কর।

০৮ ২০

এরপর কর্নাটকে গিয়ে এক মাসের মধ্যে ছ’জন মহিলাকে ধর্ষণের পরে খুন করে জয়শঙ্কর। বার বার অনুসন্ধানেও পুলিশ এই অপরাধীর খোঁজ পেতে ব্যর্থ হয়।

০৯ ২০

কিন্তু তার অপরাধের ফাঁদে নিজেই ধরা পড়ে জয়শঙ্কর। বেশ কয়েক মাস বিভিন্ন শহরে গা ঢাকা দিয়ে থাকা পরে একটা চোরাই মোটরবাইকে সে পৌঁছয় কর্নাটকের এলাগি গ্রামে।

১০ ২০

সেখানে মাঠে কর্মরত এক কৃষক মহিলার কাছে প্রথমে জল আর খাবার চায়। তারপর তাকে ধর্ষণের চেষ্টা করে। মহিলার চিৎকারে ছুটে আসেন তাঁর স্বামী ও অন্যান্যরা। ধরা পড়ে জয়শঙ্কর। তাকে তুলে দেওয়া হয় পুলিশের হাতে।

১১ ২০

এ বার তার শাস্তি হয় ২৭ বছরের সশ্রম কারাদণ্ড। বেঙ্গালুরুর টুমকুর কারাগারে বন্দিদশায় পাশাপাশি শুরু হয় মানসিক রোগের চিকিৎসা। শারীরিক অসুস্থতার অজুহাতে জয়শঙ্কর ভর্তি হয় জেলের হাসপাতালে। সেখান থেকে আবার পালায় সে। এ বার সেই রোমহর্ষক পর্ব যেন সিনেমার চিত্রনাট্য।

১২ ২০

হাসপাতালের দরজার নকল চাবি জোগাড় করে সে। পালানোর জন্য বেছে নেয় রাত ২টো নাগাদ সময়কে। সে সময় হাসপাতালে রক্ষীবদল হত। প্রথমে ২০ ফুট উঁচু হাসপাতালের প্রাচীর, তারপর ৩০ ফুট উঁচু জেলচত্বরের মূল প্রাচীর বেয়ে ওঠে সে।

১৩ ২০

প্রাচীরের উপরে বিছিয়ে থাকা কাচের টুকরোর হাত থেকে বাঁচার জন্য দু’পায়ে জড়িয়ে নিয়েছিল হাসপাতালের বিছানার চাদর। ভারসাম্য রক্ষার জন্য ছিল লম্বা বাঁশের লাঠি। তারপরেও প্রাচীরের গায়ে পাওয়া গিয়েছিল রক্তের ফোঁটা।

১৪ ২০

তদন্তে জানা যায়, পালানোর সময়ে তার পরনে ছিল পুলিশের পোশাক। তাকে সাহায্য করা এবং কর্তব্যে গাফিলতির দায়ে সাসপেন্ড করা হয় ১১ জন জেলকর্মী, তিন জন ওয়ার্ডেন, দু’জন জেলার এবং ছ’জন নিরাপত্তারক্ষীকে।

১৫ ২০

তার খোঁজে কর্নাটক জুড়ে জারি হয় রেড অ্যালার্ট। পাশাপাশি কর্নাটক, তামিলনাড়ু, অন্ধ্রপ্রদেশ, কেরল ও মহারাষ্ট্রে তার সন্ধান চেয়ে পোস্টার পড়ে হিন্দি, কন্নড়, মরাঠি, তামিল এবং তেলুগুতে।

১৬ ২০

কারাগার থেকে পালাতে গিয়ে জয়শঙ্করের পা ভেঙে যায়। ফলে বেশিদূর পালাতে পারেনি সে। গা ঢাকা দিয়ে থাকার সময় পুলিশের এক চরের হাতে ধরা পড়ে যায় সে। ৭৫ হাজার টাকা খরচ করে তার পায়ে অস্ত্রোপচার করে পুলিশ।

১৭ ২০

এ বার ধরা পড়ার পরে বেঙ্গালুরুর কেন্দ্রীয় কারাগারে নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তায় বন্দি রাখা হয় জয়শঙ্করকে। নির্দেশ দেওয়া হয়, অসু্স্থ হলেও তাকে রাখা হবে কারাগারের সেলেই। সিসিটিভি-সহ অন্যান্য নিরাপত্তা সংক্রান্ত বিষয় কঠোর করা হয়।

১৮ ২০

তারপরেও ২০১৮-র ২৫ সেপ্টেম্বর আরও একবার পালানোর চেষ্টা করে জয়শঙ্কর। কিন্তু এ বার সে ব্যর্থ হয়। তাকে রাখা হয় সলিটারি কনফাইনমেন্টে। অর্থাৎ একটা সেলে শুধুমাত্র জয়শঙ্করকেই রাখা হয়।

১৯ ২০

এর দু’দিন পরে, ২৭ ফেব্রুয়ারি গভীর রাতে তাকে রক্তাক্ত অবস্থায় পাওয়া যায় সেলের ভিতরে। ভিক্টোরিয়া হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলে চিকিৎসকরা মৃত ঘোষণা করেন।

২০ ২০

ময়নাতদন্তে জানা যায়, ব্লেড দিয়ে নিজের গলার শিরা কাটার জেরে মৃত্যু হয়েছে জয়শঙ্করের। খুনের অভিযোগ উড়িয়ে পুলিশ জানায়, আত্মঘাতী হয়েছে এই কুখ্যাত অপরাধী। (ছবি: আর্কাইভ ও সোশ্যাল মিডিয়া)

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
Follow us on:
আরও গ্যালারি
Advertisement