বাবার সঙ্গে সুফি।
‘হাজার হাজার নির্দোষকে গ্রেফতার করেও নিজেকে গণতান্ত্রিক বলেন। শিশুদের মনে আতঙ্ক ঢুকিয়েছেন আপনি। এই পোস্ট করার সময় আমার হাত কাঁপছে। এ জন্য আপনাকে অভিনন্দন। যে সব অগণতান্ত্রিক কাজ করার পরেও আপনি নিজেকে গণতান্ত্রিক বলে দাবি করেন, সেই প্রতিটি কাজের জন্য আপনাকে অভিনন্দন। একটা অত্যন্ত সফল বছর কাটালেন তো!’
উত্তরপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথকে এই খোলা চিঠির লেখক এক ১৫ বছরের কিশোর—সুফি। লখনউয়ে ধৃত আন্দোলনকারী দীপক কবীরের পুত্র। সিএএ বিরোধী বিক্ষোভের সময়ে নয়, অধ্যাপিকা সাদাফ জাফর-সহ ধৃতদের খোঁজ থানায় নিতে গিয়ে গ্রেফতার হয়েছেন কবীর। শনিবার চিঠিটি সোশাল মিডিয়ায় প্রচারিত হতেই হইচই পড়ে গিয়েছে। চিঠির শুরুটাই তো বিস্ফোরক— ‘‘মি: যোগী, আপনাকে অভিনন্দন। আশা করি দারুণ একটা বছর কাটালেন, লোকের কণ্ঠরোধ করে, শিশুদের খুনের খবর পেয়ে।’
গণতন্ত্রের পক্ষে, মানবাধিকারের পক্ষে আন্দোলনে লখনউয়ে খুব পরিচিত মুখ কবীর। পুত্র সুফিও ছোটবেলা থেকেই বাবার সঙ্গী। এ বারও কবীর আন্দোলনে সামিল হয়েছেন। জামিন পাননি এখনও। প্রতিবাদ-মিছিলে সামিল হয়েই যে তার বড় হয়ে ওঠা, সে কথা জানিয়ে সুফি চিঠিতে লিখেছে, ‘‘বিজেপি নেতারা যত সংখ্যক পরীক্ষায় পাশ করেছেন, তার চেয়ে অনেক বেশি বিক্ষোভে শামিল হয়েছি আমি। কিন্তু এমন নিপীড়ন আগে দেখিনি। বাবার সঙ্গে থানায় দেখা করতে গিয়ে দেখেছি ধৃত আন্দোলনকারীদের অনেকে হাঁটতে পারছেন না। শরীরে মারধরের চিহ্ন। এত ভয় এর আগে কেউ পায়নি। দাঙ্গাবাজরা ঘুরে বেড়াচ্ছে, নির্দোষেরা জেলে পচছে, আপনার সাম্প্রদায়িক কাজকর্মের জন্য আমার বন্ধুরা ভয়ে সিঁটিয়ে রয়েছে।’’ সুফির মা বীণা রানা বলেন, ‘‘এই চিঠিটা সুফির পরিকল্পনা। আমি বেরিয়েছিলাম, বাড়ি ফিরে দেখি, বিরাট চিঠি লিখেছে।’’ সুফি নিজেও জানিয়েছে, তার বয়সি অনেকে পরিস্থিতির বিষয়ে বিভ্রান্ত থাকতেই পারে, কিন্তু গণতান্ত্রিক অধিকার, সংবিধানের শিক্ষা সম্পর্কে তার স্পষ্ট ধারণা রয়েছে। যোগীকে সে লিখেছে, ‘‘ আমার বাবা যে দিন মুক্তি পাবেন, সে দিন তাঁর সঙ্গে কথা বলে তাঁর আদর্শ বোঝার চেষ্টা করবেন।’’