মাছ বিক্রি করছেন সারদা সিংহ। শিলচরের রাস্তায়। নিজস্ব চিত্র
“কলকাতার বাবুবাজারে বাড়ি হলেও ওটা শুধুই ঠিকানা। বছরের বারো মাস সার্কাস নিয়ে ঘুরে বেড়াতাম,” খদ্দেরের হাতে মাছের প্যাকেট তুলে দিতে দিতে বলছিলেন সারদা সিংহ। অসমে এসে প্রথমে হাইলাকান্দিতে, সেখান থেকে করিমগঞ্জে। পরে আসেন শিলচরের গাঁধীমেলায়। এখানেই ৪৫ দিনের লকডাউন জীবনটাই বদলে দিয়েছে তাঁর। এখন তিনি শিলচরের রাস্তার ধারে বসে মাছ বিক্রি করেন।
চল্লিশ পেরিয়েছে। তবু রশির উপর দিয়ে সাইকেল চালিয়ে বাহবা কুড়োতেন ক’দিন আগেও! সারদা বলেন, “খিদের তাড়নায় ১১ বছর বয়সে সার্কাসে নাম লেখাই। ট্রেনিং, প্র্যাকটিস কোনও বালাই ছিল না।” দেখতে দেখতেই দলে আকর্ষণের কেন্দ্রবিন্দু হয়ে ওঠেন৷ সবে কৈশোর পেরনো রতন সিংহেরও তখন সার্কাসে বেশ কদর। ভালবাসায় জড়িয়ে বিয়ে। এখন দুই মেয়ে তাদের। বড় মেয়ের বিয়ে হওয়ায় এখন সে আর রিংয়ে আসে না৷ ১৫ বছরের পুনম তাঁদের সঙ্গেই ঘুরে বেড়ায়, খেলা দেখায়।
কিন্তু কে জানত, এমন এক ভাইরাস ছড়িয়ে দেশে মাসের পর মাস লকডাউন হবে! প্রথম কোপেই মেলা বন্ধ, সার্কাস ।দলে মোট ১১০ জন মানুষ। কত দিন আর হাতের টাকা ভেঙে খাওয়া যায়। শুরু হয় অর্ধাহার। শেষে শুধু ফ্যান-ভাত। তাদের দুর্দশার কথা জেনে বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা ত্রাণ নিয়ে এগিয়ে যায়। সরকারি তরফে চাল-ডাল মিলেছিল দু’বার। কিন্তু লাইনে দাঁড়িয়ে ওই সব নিতে অস্বস্তি বোধ করেন সারদা। কিন্তু ভিন্ রাজ্যে কী আর করা যায়! রতন অনেক হেঁটেও কোথাও কাজ জোটাতে পারেননি৷ শেষে সারদাই সিদ্ধান্ত নেন, মাছ বেচবেন। কলকাতায় এক সময় তার বাবার মাছের ব্যবসা ছিল।
শিলচরে গাঁধীমেলার মাঠের সামনেই ছোটখাটো মাছের বাজার। পুরনো বিক্রেতারা তার প্রস্তাবে আপত্তি করেননি। বরং কম দামে ভাল মাছ কিনতে সাহায্য করেন তাঁরা। মাছ ব্যবসায়ীদের এই সহযোগিতা সারদাকে শিলচর সম্পর্কে নতুন করে ভাবায়৷ এখন তিনি আর সার্কাসের দলে ফিরতে চান না। ফিরতে চান না কলকাতাতেও।
পুনমের পিঠে হাত রেখে বলেন, “মাছই বেচব। শিলচরে থাকব। মেয়েটাকে একটু পড়ানো যায় কি না দেখব।”