গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ
তিন রাজ্যে বিধানসভা ভোটে কিছুটা ইঙ্গিত মিলেছিল। এ বার লোকসভা ভোটেও এনডিএ-র ভোটব্যাঙ্কে ধসের ইঙ্গিত মিলল ‘টাইমস নাও-ভিএমআর’যৌথ সমীক্ষায়। এমনকি, বিপুল সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে ২০১৪ সালে সরকার গঠন করা এনডিএ জোট এবার ম্যাজিক ফিগারেও পৌঁছতে পারবে না বলে ইঙ্গিত সমীক্ষায়। উল্টো দিকে ইউপিএ-র আসন আড়াই গুণ বাড়ার সম্ভাবনা রয়েছে বলে ইঙ্গিত ওই সমীক্ষায়। অর্থাৎএখন ভোট হলে ফল ত্রিশঙ্কু হওয়ার সম্ভাবনা। পশ্চিমবঙ্গে বিজেপির আসন বৃদ্ধি এবং তৃণমূলের কমার সম্ভাবনা রয়েছে বলেও উঠে এসেছে সমীক্ষায়। যদিও এই ধরনের জনমত সমীক্ষার ফলাফল সব সময় ঠিক হয় না। এমন নয়। তবে ভোটারদের মনোভাবের কিছুটা ইঙ্গিত মেলে।
আসন সংখ্যার নিরিখে কেমন দাঁড়াতে পারে লোকসভার ফল? টাইমস নাউ এবং ভিএমআর-এর যৌথ সমীক্ষার হিসেবে এনডিএ পেতে পারে ২৫২টি আসন। ম্যাজিক ফিগারের চেয়ে যা ২০ কম। কংগ্রেসের নেতৃত্বে ইউপিএ জোটের ঝুলিতে যেতে পারে ১৪৬টি আসন। আঞ্চলিক দলগুলি মিলে পেতে পারে ১৪৫টি আসন। সমাজবাদী পার্টি (এসপি) ও বহুজন সমাজ পার্টির (বিএসপি) জোট ৫১টি, তৃণমূল ৩২টি এবং জগনমোহন রেড্ডির ওয়াইএসআর কংগ্রেস পেতে পারে ২৩টি আসন।
প্রধানমন্ত্রী হিসেবে নরেন্দ্র মোদী নাকি রাহুল গাঁধী, কাকে বেশি পছন্দ? টাইমস নাও- ভিএমআর-এর সমীক্ষায় এই প্রশ্নে অবশ্য নরেন্দ্র মোদীর পাশেই দাঁড়িয়েছেন সমীক্ষায় অংশগ্রহণকারী সিংহভাগ মানুষ। মোদীর পক্ষে ভোট পড়েছে ৪৪ শতাংশের কিছু বেশি। রাহুল গাঁধীর পক্ষে ভোট ৩০ শতাংশের কিছু কম। প্রিয়ঙ্কা সক্রিয় রাজনীতিতে আসায় কংগ্রেসের কি সুবিধা হবে? এই প্রশ্নে ৩৯ শতাংশ মানুষ হ্যাঁ বলেছেন। প্রায় সমান সংখ্যক মানুষ বলছেন সুবিধা হবে না। বাকিরা মতামত দেননি।
২০১৪ সালে এনডিএ জোট দখল করেছিল ৩৩৬টি আসন। যেখান থেকে ৮৪টি আসন কমতে পারে। ইউপিএ-র আসন সংখ্যা গত বারের ৬০ থেকে আরও ৮৬টি বেড়ে হতে পারে ১৪৬। কিন্তু এনডিএ বা ইউপিএ কোনও জোটই একার ক্ষমতায় সরকার গঠন করতে পারবে না, স্পষ্ট ইঙ্গিত সমীক্ষায়। তার জন্য নির্ভর করতে হবে এসপি-বিএসপি জোট, তৃণমূল কংগ্রেস, তেলুগু দেশম পার্টি, ওয়াইএসআর কংগ্রেস, ডিএমকে-র মতো আঞ্চলিক দলগুলির উপর।
গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ
রাজনীতিতে প্রচলিত আপ্তবাক্য, ‘উত্তরপ্রদেশ যার, দিল্লি তার’। ২০১৪ সালে মূলত উত্তরপ্রদেশে বিপুল জয়ই বিজেপি তথা এনডিএ-র সামনে দিল্লির দরজা খুলে দিয়েছিল। আগের বার ৮০ আসনের মধ্যে বিজেপি জিতেছিল ৭৩টি আসনে। কিন্তু এবার সেই উত্তরপ্রদেশেই সবচেয়ে বড় ধাক্কা খেতে চলেছে গেরুয়া শিবির, ইঙ্গিত সমীক্ষায়। আসন সংখ্যা ৭৩ থেকে নেমে আসতে পারে ২৭-এ, যা আগের বারের চেয়ে ৪৬টি কম। প্রিয়ঙ্কা গাঁধীর রাজনীতিতে অভিষেকের ঘোষণার পর, নাকি আগে ভোটারদের মতামত নেওয়া হয়েছে, সেই বিষয়টি সমীক্ষায় উল্লেখ করা হয়নি। তবে এই রাজ্যে কংগ্রেসের আসন ধরা হয়েছে মাত্র দু’টি।
আরও পড়ুন: ৪৫ বছরে সর্বোচ্চ, মোদী জমানায় রেকর্ড বেকারত্বের মধ্যে ভারত, বলল সেই ‘গোপন’ রিপোর্ট
পশ্চিমবঙ্গে অবশ্য পদ্ম আরও কিছুটা বিকশিত হতে পারে, উঠে এসেছে সমীক্ষায়। আগের বার লোকসভা ভোটে আসানসোল থেকে বাবুল সুপ্রিয় এবং দার্জিলিং থেকে গোর্খা জনমুক্তির সমর্থন নিয়ে জিতেছিলেন সুরিন্দর সিংহ অহলুওয়ালিয়া। এবার বিজেপির আসন সংখ্যা ২ থেকে আরও ৭টি বেড়ে হতে পারে ৯। তৃণমূল পেতে পারে ৩২টি আসন। একটি আসন অন্যান্যদের ঝুলিতে দেখানো হয়েছে। আগের বার রায়গঞ্জ এবং মুর্শিদাবাদ আসনে জিতলেও এবার বামেরা এ বার খাতাই খুলতে পারবে না বলে ইঙ্গিত সমীক্ষায়।
তবে বিজেপির সবচেয়ে বেশি ভাল ফল হতে পারে ওড়িশায়। মাত্র একটি আসন থেকে বেড়ে হতে বিজেপি পৌঁছে যেতে পারে দুই সংখ্যা, ১৩-তে। উত্তর পূর্বের রাজ্যগুলিতেও বিজেপির ভাল ফলের ইঙ্গিত রয়েছে সমীক্ষায়।
মাস দেড়েক আগেই হিন্দি বলয়ের তিন রাজ্য মধ্যপ্রদেশ, রাজস্থান ও ছত্তীসগঢ়ে বিজিপিকে হারিয়ে ক্ষমতায় এসেছে কংগ্রেস। এই তিন রাজ্যেই কংগ্রেসের ভাল ফল হবে বলে রায় দিয়েছেন সমীক্ষায় অংশগ্রহণকারীরা। রাজস্থানে ২৫টির মধ্যে গত বার সব কটিতেই জিতেছিল বিজেপি। এবার সেটা কমে দাঁড়াতে পারে ১৭-তে। ৮টি আসন পেতে পারে কংগ্রেস। ছত্তীসগড়ে ১১টি আসনের মধ্যে বিজেপি গত বারের ১০ থেকে নামতে পারে ৫-এ। কংগ্রেস পেতে পারে ৬টি আসন। মধ্যপ্রদেশে গত বার বিজেপি জিতেছিল ২৭টি আসনে। সেখান থেকে চারটি কমতে পারে। কংগ্রেস প্রার্থীরা জিততে পারেন ৬টি আসনে।
আরও পড়ুন: পাসওয়ার্ড ছাড়াই সার্ভারে এসবিআই-এর তথ্য! গ্রাহকদের তথ্যভাণ্ডার ফাঁস হওয়ার আশঙ্কা
বিহারে বিজেপির সঙ্গে নীতীশ কুমারের জেডিইউ এবং রামবিলাস পাসোয়ানের এলজেপির জোট হয়েছে। সমীক্ষায় ভোটারদের মতে, ৪০টি আসনের মধ্যে এই জোট পেতে পারে ২৫টি আসন। কংগ্রেসের সঙ্গে লালুপ্রসাদের রাষ্ট্রীয় জনতা দলের ঝুলিতে ১৫টি আসন থাকার সম্ভাবনা। মহারাষ্ট্রে ৪৮ আসনের মধ্যে কংগ্রেস-এনসিপি জোট এবং বিজেপির আসনের অনুপাত হতে পারে ৪৩-৫। মোদীর রাজ্য গুজরাতেও শক্তিক্ষয়ের আশঙ্কা বিজেপির। ২৬ আসনের মধ্যে ফল হতে পারে ২৪-২।
তামিলনাড়ুতে কংগ্রেস-ডিএমকে জোটের বিপুল জয়ের ইঙ্গিত মিলেছে সমীক্ষায়। ৩৯টি আসনের মধ্যে এই জোট দখল পেতে পারে ৩৫টি আসন। অন্ধ্রপ্রদেশের ফল হতে পারে চমকে দেওয়ার মতো। ২৫ আসনের মধ্যে জগনমোহন রেড্ডির ওয়াইএসআর কংগ্রেস একাই পেতে পারে ২৩টি আসন। ক্ষমতায় থাকা টিডিপির ঝুলিতে মাত্র দু’টি আসন দিয়েছে এই সমীক্ষার ফল। তেলঙ্গানায় ১৭টির মধ্যে ১০টি আসন পেতে পারে সদ্য বিপুল ভোটে জিতে দ্বিতীয়বার ক্ষমতায় আসা কে চন্দ্রশেখর রাওয়ের তেলঙ্গানা রাষ্ট্র সমিতি।
২৮ আসনের কর্নাটকের ফল হতে পারে ফিফটি-ফিফটি। অর্থাৎ বিজেপি ১৪ এবং জেডিএস-কংগ্রেস জোট ১৪। কেরলে সিপিএম ক্ষমতায় থাকলেও সেখানে ভাল ফলের ইঙ্গিত কংগ্রেস-ইউডিএফ জোটের। ২০ আসনের মধ্যে এই জোটের আসন হতে পারে ১৬। সবরিমালার হাত ধরে খাতা খুলতে পারে বিজেপির। বামেরা থামতে পারে তিনটি আসনে। ত্রিপুরাতেও বামেদের ভাগ্যে শূন্যই থাকবে বলেও ইঙ্গিত সমীক্ষায়।
সমীক্ষার এই ধরনের জনমত সমীক্ষার ফলাফল সব সময় সঠিক হয় না। এমনকী, অনেক সমীক্ষার সঙ্গে ভোটের ফল একদমই মেলেনি, এমন নজির রয়েছে। আবার সমীক্ষার ইঙ্গিত অনেক সময় মিলে যাওয়ার উদাহরণও রয়েছে। কিন্তু ভোটারদের মন বোঝার ক্ষেত্রে রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের কাছে অন্যতম মাধ্যম এই ভোট পূর্ববর্তী সমীক্ষা। এই ধরনের সমীক্ষার রাজনৈতিক তাৎপর্যও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। সে দিক থেকে দেখলে সমীক্ষার এই ইঙ্গিত মোদী-অমিত শাহের কপালে ভাঁজ ফেলতে পারে, তেমনই হাসি চওড়া হতে পারে কংগ্রেস সভাপতি রাহুল গাঁধীর। তবে শুধুমাত্র এনসিপি, জেডিইউ বা ডিএমকের মতো ইউপিএ জোট শরিকদের নিয়ে যে সরকার গঠন অসম্ভব, তা-ও প্রায় স্পষ্ট সমীক্ষায়। সমীক্ষার ফল মিললে বড় ফ্যাক্টর হয়ে উঠবেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, মায়াবতী, অখিলেশ যাদবরা।