বুধবার সংসদে রংবোমা নিয়ে হানা দেওয়ার একটি দৃশ্য (বাঁ দিকে)। স্পিকার ওম বিড়লা। ছবি: সংগৃহীত।
সংসদে হানার তিন দিন পরে লোকসভার সব সাংসদকে চিঠি দিলেন স্পিকার ওম বিড়লা। শনিবার স্পিকার তাঁর লেখা চিঠিতে সাংসদদের জানিয়েছেন যে, লোকসভার ১৩ জন সদস্যকে সাসপেন্ড করার সঙ্গে সংসদে রংবোমা নিয়ে হানার ঘটনার কোনও সম্পর্ক নেই।
স্পিকার তাঁর চিঠিতে লেখেন, “এটা সত্যিই খুব দুর্ভাগ্যজনক যে, কিছু (লোকসভার) সদস্য এবং রাজনৈতিক দল ১৩ ডিসেম্বরের ঘটনা (সংসদে রংবোমা নিয়ে হানা)-র সঙ্গে কিছু সাংসদকে বহিষ্কার করার সিদ্ধান্তকে একসঙ্গে জুড়ে দিচ্ছেন।” তার পরই স্পিকারের সংযোজন, “১৩ ডিসেম্বের ঘটনার সঙ্গে সাংসদদের সাসপেন্ড করার সিদ্ধান্তের কোনও সম্পর্ক নেই। শুধু সংসদের গরিমা বজায় রাখতেই ওই সিদ্ধান্ত নিতে হয়েছিল।”
একই সঙ্গে বুধবারের ঘটনা নিয়ে একটি উচ্চ পর্যায়ের তদন্ত কমিটি গঠনের কথা জানান স্পিকার। চিঠিতে লেখেন যে, সংসদে বহিরাগতদের হানা দেওয়ার ঘটনায় ‘গভীরে গিয়ে তদন্ত করার জন্য’ ইতিমধ্যেই কাজ শুরু করে দিয়েছে ওই কমিটি। শীঘ্রই কমিটির রিপোর্ট সংসদে পেশ করা হবে বলে জানিয়েছেন তিনি। এর পাশাপাশি এই ধরনের ঘটনার পুনরাবৃত্তি রুখতে এবং সংসদ ভবনের নিরাপত্তা সুনিশ্চিত রাখতে কী পদক্ষেপ করা যায়, তা খতিয়ে দেখতে একটি উচ্চক্ষমতাসম্পন্ন কমিটি গঠন করেছেন স্পিকারও। এই বিষয়টি শনিবারের চিঠিতে উল্লেখ করেছেন বিড়লা।
লোকসভায় ঢুকে দুই যুবক ক্যানিস্টার বা রংবোমা দিয়ে ধোঁয়া ওড়ানোর ঘটনায়, নতুন সংসদ ভবনের নিরাপত্তা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন বিরোধী সাংসদেরা। বৃহস্পতিবার সংসদের অধিবেশন শুরু হতেই এই নিয়ে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের বিবৃতি দাবি করে ওয়েলে নেমে বিক্ষোভ দেখাতে শুরু করেন বিরোধী সাংসদেরা।
তার পরই সংসদে অসাংবিধানিক আচরণ এবং সভার কাজে বাধা দেওয়ার জন্য লোকসভার ১৩ জন এবং রাজ্যসভার এক জন (তৃণমূলের ডেরেক ও’ব্রায়েন) সাংসদকে সাসপেন্ড করা হয়। তার পরেও অবশ্য শাহের বিবৃতির দাবিতে শুক্রবার বিক্ষোভ দেখান বিরোধী জোট ‘ইন্ডিয়া’র সাংসদেরা। সোমবারও এই নিয়ে সংসদের শীতকালীন অধিবেশন উত্তপ্ত হতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে। তার আগে সাংসদদের উদ্দেশে লেখা লোকসভার স্পিকারের এই চিঠিকে তাৎপর্যপূর্ণ বলে মনে করছেন কেউ কেউ।
বুধবার দুপুর ১টা নাগাদ বিজেপির মাইসুরু কেন্দ্রের সাংসদ প্রতাপ সিংহের দেওয়া প্রবেশপত্র পকেটে পুরে, জুতোয় রংবোমা লুকিয়ে সংসদ ভবনে ঢুকে পড়েন দুই যুবক। তার পরে অধিবেশন চলাকালীন দুপুর ১টার কিছু পরে লোকসভার দর্শক আসন থেকে নীচে ঝাঁপ মেরে ছুড়তে থাকেন সেই রংবোমা। ঘন হলুদ ধোঁয়ায় ঢেকে যায় লোকসভার মূল অধিবেশন কক্ষের একাংশ। আতঙ্কিত হয়ে পড়েন সাংসদেরা।
লোকসভার অন্দরে রংবোমা-কাণ্ড চলাকালীনই সংসদ ভবনের বাইরে ‘তানাশাহি নেহি চলেগা’ স্লোগান তোলেন দুই বিক্ষোভকারী। তাঁদের মধ্যে এক মহিলাও ছিলেন। দ্রুত তাঁদের আটক করে পুলিশ। যদিও লোকসভা কক্ষে ঝাঁপ মারা দু’জনকে ঠেকাতে মার্শাল বাহিনীকে সক্রিয় হতে দেখা যায়নি। লোকসভারই দুই সাংসদ, উত্তরপ্রদেশের মালুন নাগর (বহুজন সমাজ পার্টি) এবং রাজস্থানের হনুমান বেনীওয়াল (রাষ্ট্রীয় লোকতান্ত্রিক পার্টি) পাকড়াও করেন তাঁদের। এর পরে ওই দুই যুবককে কয়েক জন সাংসদ মিলে শারীরিক নিগ্রহ করেন বলেও অভিযোগ। পরে জানা যায়, সংসদের ভিতরে হামলা চালানো দু’জনের নাম সাগর শর্মা এবং মনোরঞ্জন ডি। সংসদ ভবনের বাইরের নিরাপত্তা বলয়ের মধ্যে ঢুকে ‘তানাশাহি নেহি চলেগা’ স্লোগান তোলা দু’জনের নাম অমোল শিন্ডে এবং নীলম আজাদ।