লোকসভায় রাহুল গাঁধী। ছবি পিটিআই।
গুলাম নবি আজাদরা রাজ্যসভায় হইহল্লার পথ থেকে সরে এসে আলোচনায় রাজি হলেন। কিন্তু রাহুল গাঁধী লোকসভায় আক্রমণাত্মক নীতি নিয়ে কৃষক আন্দোলন নিয়ে পৃথক আলোচনার দাবিতে অনড় রইলেন। ফলে বুধবার রাজ্যসভায় রাষ্ট্রপতির বক্তৃতা নিয়ে আলোচনা শুরু হল। কিন্তু রাহুলের আগ্রাসী নীতির জন্য লোকসভায় অধিবেশন মুলতুবি হয়ে গেল।
রণনীতির এই ভিন্নতার পিছনে কংগ্রেসের অভ্যন্তরীণ গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের ছায়া দেখছেন রাজনীতিকরা। রাজ্যসভায় বিরোধী দলনেতা গুলাম নবি-সহ উপনেতা আনন্দ শর্মা, কপিল সিব্বলরাই এর আগে রাহুলের পিছন থেকে দল চালানো নিয়ে প্রশ্ন তুলে সনিয়া গাঁধীকে চিঠি দিয়েছিলেন। উল্টো দিকে রাহুল-শিবিরের অভিযোগ ছিল, গুলাম নবিরা মোদী সরকারের বিরুদ্ধে তেমন সরব নন। রাজ্যসভায় মেয়াদ ফুরোচ্ছে দেখে এখন তাঁরা দলের বেহাল দশা নিয়ে প্রশ্ন তুলছেন। এর পর থেকেই গুলাম নবি, আনন্দ শর্মাদের সঙ্গে রাহুল ও তাঁর অনুগামী শিবিরের দূরত্ব বেড়েছে।
এদিন সেই ‘দূরত্ব’ই আরও প্রকট হল বলে মনে করছেন রাজনীতির পর্যবেক্ষকরা। বিরোধীরা কৃষক আন্দোলন নিয়ে আলাদা আলোচনা চাইলেও সরকারের যুক্তি ছিল, রাষ্ট্রপতির বক্তৃতা নিয়ে আলোচনার মধ্যেই তা সম্ভব। তার জন্য রাজ্যসভায় আলোচনার জন্য অনেক বেশি সময়, প্রায় ১৫ ঘণ্টা ধার্য করতেও রাজি হয় সরকার। সকালে গুলাম নবি এর জন্য মোদী সরকারকে ধন্যবাদ জানান। ফলে লোকসভাতেও বিকেল থেকে আলোচনা শুরু করে দেওয়া যাবে বলে সরকার ধরে নেয়।
কিন্তু সংসদে সেন্ট্রাল হলের বাইরে রাহুল গাঁধী লোকসভার রণকৌশল নিয়ে দলনেতা অধীর চৌধুরী, গৌরব গগৈ, মণীশ তিওয়ারিদের সঙ্গে আলোচনা করেন। দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে কথাবার্তা সেরে নিয়ে ঠিক করা হয়, লোকসভায় কৃষক আন্দোলন নিয়ে কংগ্রেস আলাদা আলোচনাই চাইবে। অধীর দাবি তোলেন, বাজেট নিয়ে বিতর্কের আগেই কৃষক আন্দোলন নিয়ে আলোচনা করতে হবে। বাজেট নিয়ে আলোচনার পরে আর কৃষক আন্দোলন নিয়ে আলোচনার অর্থ থাকে না। সেই মতো বিকেল চারটে থেকে লোকসভা অধিবেশন শুরু হলে বিরোধীরা স্লোগান দিতে থাকেন।
রাজ্যসভায় গুলাম নবি বলেছিলেন, ‘‘যেহেতু ঐতিহ্যগত ভাবে রাষ্ট্রপতির বক্তৃতা নিয়ে আলোচনা দিয়েই বাজেট অধিবেশন শুরু হয়, তাই তা মেনে নিচ্ছি। আমাদের দাবি ছিল, কৃষি আইন নিয়ে আলোচনা হোক। কিন্তু রাষ্ট্রপতির বক্তৃতা নিয়ে আলোচনার সময় বাড়ানোর জন্য সেখানেই আমাদের বক্তব্য পেশ করা যেতে পারে।’’ কিন্তু লোকসভায় অধীর স্পিকারকে বললেন, ‘‘কৃষকদের পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বিগ্ন। যে ভাবে তাঁদের দমন করা হচ্ছে, তা নিয়ে সর্বাগ্রে আলোচনা চাই।’’
কংগ্রেসের তরফ থেকে বলা হচ্ছে, দু’রকম রণকৌশলের ফলে দু’দিকই রক্ষা হল। এক দিকে কংগ্রেস লোকসভায় আক্রমণাত্মক হল। আবার রাজ্যসভায় কংগ্রেসের বক্তব্যও বলা হয়ে গেল। অন্য দিকে, রাহুল নিজে লোকসভার সদস্য। সেখানে কংগ্রেসকে আক্রমণাত্মক ভূমিকায় রেখে রাজ্যসভায় দলের বিক্ষুব্ধ নেতাদের থেকে তিনি নিজেকে আলাদা করে দেখাতে পারলেন। প্রজাতন্ত্র দিবসে ট্র্যাক্টর মিছিল থেকে হাঙ্গামার সময় নভরীত সিংহ নামে এক তরুণের মৃত্যু হয়েছিল। প্রিয়ঙ্কা গাঁধী বঢরা বৃহস্পতিবার উত্তরপ্রদেশের রামপুরে তাঁর বাড়িতে যাবেন। তার আগে আক্রমণাত্মক হয়ে দলের সুবিধাই হল। আবার, ১৫ ফেব্রুয়ারি গুলাম নবির রাজ্যসভায় মেয়াদ ফুরোচ্ছে। তাঁকে শেষ বার বলার সুযোগও দেওয়া হল।
রাজ্যসভায় গুলাম নবি এ দিন কংগ্রেস সরকারে থাকার সময় কী ভাবে কৃষকদের দাবিদাওয়া নিয়ে আলোচনা হত, মোদী সরকারকে তা স্মরণ করিয়েছেন। তাঁর বক্তব্য, ‘‘লালকেল্লায় যা ঘটেছে, আমরা তার নিন্দা করছি। যারা ওই ঘটনার সঙ্গে যুক্ত তাদের কড়া শাস্তি হোক। কিন্তু যারা নিরাপরাধ, তাদের বিরুদ্ধে যেন মিথ্যা মামলা করা না হয়।’’
তৃণমূলও আজ লোকসভায় বিরোধিতার কৌশলই নিয়েছে। যদিও রাজ্যসভায় কাল রাষ্ট্রপতির বক্তৃতা নিয়ে বলার জন্যও সাংসদেরা প্রস্তুত। দলীয় সূত্রের বক্তব্য, রাজ্যসভায় সমস্ত বিরোধী দল ঐক্যবদ্ধ ভাবে সিদ্ধান্ত নিয়েছে, রাষ্ট্রপতির বক্তৃতা নিয়ে আলোচনার জন্য পাওয়া বাড়তি সময় কাজে লাগানো হবে। কিন্তু লোকসভায় যেহেতু কংগ্রেস-সহ সমস্ত দলই বিরোধিতা বজায় রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে, ফলে সেখানে আলাদা করে অন্য পথে হাঁটেনি তৃণমূলও।