চরকায় হাত: গাঁধী আশ্রমে দলীয় কর্মীর সঙ্গে কংগ্রেস নেত্রী প্রিয়ঙ্কা গাঁধী বঢরা। মঙ্গলবার আমদাবাদে। ছবি: এএফপি।
চোখে রোদ পড়ছে সরাসরি। চেয়ার পিছনে সরাতে চাইছিলেন এক নেতা। প্রিয়ঙ্কা গাঁধী বঢরা বললেন, “থাক! এত লোক এত ক্ষণ ধরে রোদে। আমি কেন ছায়ায় বসব?”
গুজরাতের জনসভায় তখন প্রিয়ঙ্কাকে দেখতে উঁকি দিচ্ছে হাজারো কৌতূহলী চোখ। স্লোগান উঠছে, ‘ইন্দিরা গাঁধী জিন্দাবাদ।’ তার মধ্যেই হঠাৎ ঘোষণা, প্রিয়ঙ্কা বক্তৃতা দেবেন। সনিয়া গাঁধী, মনমোহন সিংহ বললেন না। রাহুল গাঁধীরও তখন বলা বাকি। পূর্ব উত্তরপ্রদেশের দায়িত্বে দলের সাধারণ সম্পাদক হয়ে প্রথম বার কংগ্রেসের ওয়ার্কিং কমিটির বৈঠকে যোগ দিয়েছেন। আর দায়িত্ব পাওয়ার পর প্রথম বার জনসভায় বক্তৃতা। আর প্রথম সভাতেই নিশানা নরেন্দ্র মোদীর দিকে। তাঁরই রাজ্যে।
গাঁধীজির ডান্ডি অভিযানের ৮৯তম বার্ষিকীতে, আজ গুজরাতে ওয়ার্কিং কমিটির বৈঠকে রাহুল গাঁধী দলকে নির্দেশ দিয়েছিলেন, “দেশভক্তি সামনে এনে নরেন্দ্র মোদী ভোটের অভিমুখ ঘোরানোর চেষ্টা করছেন। আমাদের সে ফাঁদে পা দেওয়া উচিত নয়। যুবকদের বেকারত্ব, কৃষকদের দুর্দশা আর প্রধানমন্ত্রীর ব্যক্তিগত দুর্নীতি— এই তিনটি বিষয় নিয়েই আসল প্রশ্ন তুলতে হবে।” সনিয়া গাঁধীও বলেছেন, “প্রধানমন্ত্রী নিজেকে ‘ভিক্টিম’ হিসেবে তুলে ধরার চেষ্টা করছেন। অথচ অত্যাচারিত তো দেশের জনতা।” মনমোহন সিংহেরও মত, মিথ্যা প্রচার করছেন প্রধানমন্ত্রী।
২০১৪ নির্বাচনে পশ্চিমবঙ্গ সম্পর্কে এই তথ্যগুলি কি জানেন?
আর জনসভায় গিয়ে মোদীর তৈরি করা দেশভক্তির হাওয়াকে বদলে ফেলার চেষ্টা করলেন সনিয়া-কন্যাও। বললেন, “এত লোক এসেছেন, আমার মনের কথা বলি। আপনাদের সচেতন হতে হবে। সচেতনতার থেকে বড় দেশভক্তি নেই। আপনাদের সচেতনতাই অস্ত্র, আপনাদের ভোটই অস্ত্র। অথচ এই অস্ত্রে কারও লোকসান হয় না, কারও দুঃখ হয় না। খুব গভীরে গিয়ে ভাবতে হবে, ভবিষ্যতে কী বাছবেন আপনারা? এ বারের লড়াই স্বাধীনতা সংগ্রামের চেয়ে কম নয়।”
দিল্লি দখলের লড়াই, লোকসভা নির্বাচন ২০১৯
বিরোধীদের মতে, পুলওয়ামা ও সার্জিকাল স্ট্রাইকের পর নরেন্দ্র মোদী এবং তাঁর সেনাপতিরা দেশভক্তির আড়ালে ঢাকতে চাইছেন ভোটের অভিমুখ। আর প্রিয়ঙ্কা আজ সঠিক বিষয়ে ভোট দেওয়াকেই ‘আসল দেশভক্তি’ অ্যাখ্যা দিলেন। বললেন, “আসল প্রশ্ন করুন। ভোটে অপ্রাসঙ্গিক বিষয়কে তুলে ধরা হবে। কিন্তু যিনি আপনাদের সামনে বড় বড় প্রতিশ্রুতি দিচ্ছেন, তাঁকে জিজ্ঞাসা করুন, ২ কোটি রোজগার কোথায় গেল? প্রত্যেকের ব্যাঙ্ক খাতে ১৫ লক্ষ টাকা কোথায় গেল? মহিলাদের নিরাপত্তা কোথায় গেল? দেশ বাঁচানোর ভার আপনাদেরই নিতে হবে।”
খাস মোদী-রাজ্যে গিয়ে রাহুল-প্রিয়ঙ্কা জুটি কী করেন, সে দিকে দিল্লি থেকেও বিজেপি নেতারা নজর রেখেছিলেন। পরশুই তাঁর আবার উত্তরপ্রদেশ যাওয়ার কথা। প্রিয়ঙ্কা এ দিন শুরু করলেন “আমার বোনেরা ও ভাইরা” সম্বোধন করে। তার পর বললেন, “প্রথম বার গুজরাত এলাম। ভাবিনি কিছু বলতে হবে। সকালে সাবরমতী আশ্রমে গাছের তলায় বসে ভজন শুনতে শুনতে চোখে জল এসে গিয়েছিল। এ দেশ প্রেম ও সম্প্রীতির ভিত্তিতে চলে। কিন্তু এখন যা হচ্ছে, তা দেখে দুঃখ হয়।” তার পরেই বললেন ‘আসল প্রশ্ন’ তোলার কথা।
যে প্রশ্ন তুললেন রাহুল, “নরেন্দ্র মোদী বলেন, তিনি দেশভক্ত। প্রশংসা করেন বায়ুসেনার। যে যুদ্ধবিমান পাকিস্তানে বোমা ফেলল, সেটি যে সংস্থা তৈরি করেছে, তার হাত থেকে চুক্তি ছিনিয়ে অনিল অম্বানীর পকেটে ৩০ হাজার কোটি টাকা তুলে দিলেন। অনিল অম্বানী জীবনে একটি কাগজের বিমানও তৈরি করতে পারবেন না।”
প্রিয়ঙ্কা রাতে তাঁর এ যাবৎ প্রথম টুইটে লেখেন, ‘‘সাবরমতীর সহজ সম্ভ্রমে জেগে আছে সত্য।’’ আর পরের টুইটে দেন গাঁধীর উদ্ধৃতি, ‘‘হিংসার মাধ্যমে ভাল কিছু সাধিত হচ্ছে বলে প্রথমে মনে হলেও সেই ভাল ক্ষণস্থায়ী। ওই হিংসা যে ক্ষতি করে, তা দীর্ঘস্থায়ী।’’