রাহুলকে আক্রমণ মোদীর

‘সেই রাতের রহস্য না হয় রহস্যই থাক’

সম্প্রতি অভিযোগ উঠেছে, ইউপিএ আমলে ডুবোজাহাজের বরাত  দেওয়া হয় রাহুল গাঁধীর তৎকালীন অংশীদার, ব্রিটিশ সংস্থা ব্যাকঅপকে।

Advertisement

সংবাদ সংস্থা

নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ০৬ মে ২০১৯ ০৪:২৮
Share:

রাহুল গাঁধীর বিরুদ্ধে নতুন অস্ত্র শানালেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। ফাইল চিত্র।

ব্রিটিশ সংস্থা ‘ব্যাকঅপ’-এর সঙ্গে রাহুল গাঁধীর যোগাযোগের প্রসঙ্গ তুলে কংগ্রেস সভাপতির বিরুদ্ধে নতুন অস্ত্র শানালেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। আজ মধ্যপ্রদেশের সাগরে এক জনসভায় মোদী বলেন, ‘‘এই সংস্থাটির নামের সঙ্গে কংগ্রেস সভাপতির কাজকর্মের বেশ মিল রয়েছে। সংস্থাটির নাম ‘ব্যাকঅপ’ আর কংগ্রেস সভাপতিও সোজা রাস্তায় হাঁটেন না, ‘ব্যাক অফিস অপারেশন’ চালান।’’

Advertisement

এ দিনের জনসভায় ইউপিএ জমানাকে ‘দশ বছর নষ্ট’ বলে উল্লেখ করেন প্রধানমন্ত্রী। বলেন, ‘‘একুশ শতকের গোড়াতেই ভারতকে দশ বছর হারাতে হয়েছিল। রাজপুত্র তখনও প্রস্তুত হননি। তাই পরিবারের অনুগত মনমোহন সিংহকে প্রধানমন্ত্রী করা হয়।’’ সম্প্রতি অভিযোগ উঠেছে, ইউপিএ আমলে ডুবোজাহাজের বরাত দেওয়া হয় রাহুল গাঁধীর তৎকালীন অংশীদার, ব্রিটিশ সংস্থা ব্যাকঅপকে। সেই প্রসঙ্গে মোদীর তোপ, ‘‘এখন জল-স্থল-অন্তরীক্ষ, সব জায়গা থেকেই দুর্নীতির খবর মিলছে।’’

সাগরের জনসভা থেকেই মোদী সন্ত্রাসবাদ ও নকশাল নির্মূল করার ডাক দেন। বলেন, ‘‘এই চৌকিদার শপথ নিয়েছে যে, প্রতিটি রক্ত ফোঁটার বদলা নেবে। আপনারা আশীর্বাদ করুন।’’ সম্প্রতি জইশ-ই-মহম্মদ নেতা মাসুদ আজ়হারকে আন্তর্জাতিক জঙ্গি তালিকাভুক্ত করেছে রাষ্ট্রপুঞ্জ। সেই প্রসঙ্গ তুলে মোদী বলেন, ‘‘পাকিস্তানের প্রিয় জঙ্গি মাসুদকে নিয়ে ভারতের দাবি মেনে নিয়েছে সব দেশ। এটা পাকিস্তানের গালে সপাটে এক থাপ্পড়। তবে এটা সবে শুরু। আমাদের আরও অনেক হিসেব চোকানো বাকি আছে। মাসুদ আজ়হারই হোক বা হাফিজ় সইদ, অথবা অন্য কোনও পাক জঙ্গি, ১৩০ কোটি ভারতীয় সব হিসেব মেটাতে চায়। পাকিস্তানকে এ বার ভাবতে হবে তারা কোন পথে চলতে চায়।’’

Advertisement

বালাকোট অভিযানের প্রসঙ্গ তুলেও আজ বিরোধীদের এক হাত নিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। একটি বেসরকারি টিভি চ্যানেলে সম্প্রচারিত সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, ‘‘যে কারও অভিযানের প্রমাণ চাওয়ার অধিকার রয়েছে। কিন্তু সমস্যা হল, বিরোধীদের প্রমাণ দেওয়া হলেও তারা তা গ্রহণ করে না।’’ তাঁর কথায়, ‘‘এই অভিযানের সব থেকে বড় প্রমাণ পাকিস্তান নিজেই। রাত সাড়ে তিনটের সময়ে অভিযান শেষ হওয়ার খবর এল। শুনলাম, আমাদের বায়ুসেনারা ফিরে এসে ইউনিফর্ম ছেড়ে চায়ে চুমুক দিচ্ছেন। কথা ছিল, সকালে বৈঠকে বসে আমরা পরের পদক্ষেপ নিয়ে আলোচনা করব। কিন্তু আমার ঘুম আসছিল না। জানতে ইচ্ছে করছিল, সারা পৃথিবী এই বড় মাপের অভিযানকে কী চোখে দেখবে। ভোর সওয়া পাঁচটার সময়ে প্রথম খবর পেলাম পাকিস্তানি খবরের চ্যানেলেই। ইসলামাবাদ জানাল, ভারতীয় সেনাবাহিনী তাদের দেশে ঢুকে বোমা ফেলে গিয়েছে।’’ বালাকোট অভিযানের খুঁটিনাটি সম্বন্ধে প্রধানমন্ত্রীর কাছে জানতে চাওয়া হলে মোদী বলেন, ‘‘সে একটা রাত গিয়েছে বটে। যে রাতের মধ্যে অনেক রহস্য লুকোনো ছিল। সেই সব রহস্য রহস্যই থাকতে দিন।’’ একটি মার্কিন সংবাদপত্রের রিপোর্টে দাবি করা হয়, সেই সময়ে পাকিস্তানের দিকে ১২টি ক্ষেপণাস্ত্র তাক করেছিল ভারত। সেই প্রসঙ্গে মোদীর সহাস্য জবাব, ‘‘আমিও এ বিষয়ে অনেক কিছু শুনেছি।’’

আজ উত্তরপ্রদেশের ভদোহীতেও মোদীর একটি সভা ছিল। মুসলিম অধ্যুষিত এই এলাকায় ভোট ১২ মে। সেখানে মোদীর প্রচারের অস্ত্র ছিল তিন তালাক বিল। মোদী বলেন, ‘‘আমরা কারও ধর্মীয় ভাবাবেগে আঘাত দিই না। শুধু ভারতীয় সংবিধান মেনে চলি।’’ মোদীর দাবি, কংগ্রেস এবং তার মহাভেজাল জোটের সঙ্গীরা তিন তালাক বিল আটকাতে প্রাণপণ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। তাঁর কথায়, ‘‘কংগ্রেস ও তার সঙ্গীরা চায়, মুসলিম বোনেরা ভয়ে ভয়ে দিন কাটান। কিন্তু আমি তা হতে দেব না।’’ তিনি আরও বলেন, ‘‘পৃথিবীতে অনেক মুসলিম রাষ্ট্র রয়েছে যেখানে তিন তালাক নেই। সেখানে মেয়েদের তিন তালাকের মতো বিপর্যয়ের সম্মুখীন হতে হয় না। আমরাও এ দেশের মুসলিম বোনেদের সেই অধিকার দিতে চাই।’’

এই জনসভাতেই এসপি-বিএসপি জোটকে বিঁধে মোদী বলেন, ‘‘কয়েক দশক আগে এসপি-বিএসপি নেতাদের কী অবস্থা ছিল? আর এখন দেখুন, তাঁরা কী ধরনের বিলাসবহুল জীবনযাপন করেন!’’ তাঁর দাবি, ‘‘আমি নিজে অনেক দিন মুখ্যমন্ত্রী ছিলাম। কিন্তু কখনও শুনেছেন, আমার বিদেশে বাড়ি আছে, বা এখানে বিশাল বিশাল বাংলো রয়েছে? কখনও শুনেছেন, আমার আত্মীয়স্বজনের জন্য আমি কিছু করেছি? অথচ এই সব এসপি-বিএসপি নেতার দূর সম্পর্কের আত্মীয় এবং বন্ধুস্থানীয় লোকেরাও বড়লোক হয়ে গিয়েছেন।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement