‘হাওয়া’ বনাম ‘২০০৪’

অসমের শিলচরে প্রচারে গিয়ে এ দিন জনসভায় মোদী বলেন, ‘‘আজ দেশের কিছু অংশে প্রথম দফার ভোটগ্রহণ চলছে।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ১২ এপ্রিল ২০১৯ ০৩:২৫
Share:

সনিয়া গাঁধী ও নরেন্দ্র মোদী। —ফাইল চিত্র।

লোকসভা নির্বাচনের প্রথম পর্বে ভোট পড়ল কার্যত পাঁচ বছর আগের মতোই। তার থেকে বেশি তো নয়ই। কোথাও কিছুটা কমই।

Advertisement

কিন্তু সেই ভোট পড়ার হার দেখিয়েই নরেন্দ্র মোদী আজ, এই প্রথম দাবি করলেন, দেশ জুড়ে তাঁর সরকারের পক্ষে ‘হাওয়া’ বইছে। রায়বরেলীতে মনোনয়ন জমা দিতে গিয়ে সনিয়া গাঁধী পাল্টা তাঁকে মনে করিয়ে দিলেন, ‘‘২০০৪-এ কথা ভুলবেন না। অটলবিহারী বাজপেয়ী নিজেকে অপরাজেয় ভেবেছিলেন। কিন্তু আমরা জিতেছিলাম।’’

অসমের শিলচরে প্রচারে গিয়ে এ দিন জনসভায় মোদী বলেন, ‘‘আজ দেশের কিছু অংশে প্রথম দফার ভোটগ্রহণ চলছে। এখনও পর্যন্ত যা জানতে পারছি, ‘ফির এক বার মোদী সরকার’-এর পক্ষে জবরদস্ত হাওয়া দেখা যাচ্ছে।’’

Advertisement

মোদী যখন এই দাবি করছেন, তখনও দিনের ভোটগ্রহণ শেষ হয়নি। সন্ধ্যায় ভোটগ্রহণ শেষে নির্বাচন কমিশন জানায়, পশ্চিম উত্তরপ্রদেশ, মহারাষ্ট্র, ওড়িশার সন্ধ্যা পর্যন্ত হিসেব বলছে, সর্বত্রই ২০১৪-র তুলনায় সামান্য হলেও কম হারে ভোট পড়েছে। বিহারে প্রথম দফায় ভোটের হার পাঁচ বছর আগের মতোই।

দিল্লি দখলের লড়াই, লোকসভা নির্বাচন ২০১৯

নির্বাচন কমিশনের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, পশ্চিম উত্তরপ্রদেশের ৮টি আসনে ভোট পড়েছে ৬৩.৬৯ শতাংশ। ২০১৪-য় যা ছিল ৬৫ শতাংশ। ওড়িশায় ২০১৪-র ৭৩.৬ শতাংশের তুলনায় এ বার ৬৮ শতাংশ ভোট পড়েছে। মহারাষ্ট্রের ৭টি লোকসভা আসনে ২০১৪-র ৬৩ শতাংশের তুলনায় এ বার ভোটের হার ৫৬ শতাংশ। বিহারের ৪টি আসনে ২০১৪-র মতো এ বারও ৫০ শতাংশ ভোট পড়েছে। অসমে ৬৮ শতাংশ, ত্রিপুরায় ৮১.৮ শতাংশ, অন্ধ্রে ৬৬ শতাংশ ভোট পড়েছে। চূড়ান্ত হিসেব এলে ভোটের হার কিছুটা বাড়তে পারে। উপ-নির্বাচন কমিশনার উমেশ সিনহা বলেন, ‘‘ভোট পড়েছে স্বাভাবিক হারেই। বেশিও নয়, কমও নয়।’’

তা হলে কিসের ভিত্তিতে ‘মোদী হাওয়া’র দাবি?

রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, সরকার পরিবর্তনের তাগিদ থাকলেই সাধারণত বেশি হারে ভোট পড়ে। হয়তো তুলনায় কম হারে ভোট পড়ছে বলেই বিজেপি নেতৃত্ব ধরে নিচ্ছেন, তাঁরাই ফের ক্ষমতায় আসতে চলেছেন। কিন্তু কোন রাজ্যে কোন দল ক্ষমতায় রয়েছে, তার ভিত্তিতেও ভোটের হার পর্যালোচনা করা প্রয়োজন।

এই আবহেই আজ বহু দিন পরে মুখ খুলে সনিয়া গাঁধী মনে করিয়ে দিয়েছেন, কংগ্রেস মোটেই নরেন্দ্র মোদীকে অপরাজেয় ভাবে না। তার সঙ্গে রাহুল গাঁধীর মন্তব্য, ‘‘ভারতের ইতিহাসে অনেকেই নিজেকে অপরাজেয় ভেবেছে। কিন্তু মানুষের থেকে কেউই বড় নন। নরেন্দ্র মোদী গত পাঁচ বছরে মানুষের জন্য কিছু করেননি। তাই তিনি অপরাজেয় কি না, তা ভোটের ফলেই স্পষ্ট হয়ে যাবে।’’ রাহুল আজ ফের মোদীকে রাফাল দুর্নীতি নিয়ে বিতর্কে আসার জন্য চ্যালেঞ্জ জানিয়ে বলেছেন, এ জন্য তিনি প্রধানমন্ত্রীর বাসভবনে যেতেও রাজি। ২ কোটি চাকরি, ব্যাঙ্কে ১৫ লক্ষ টাকা ও ‘অচ্ছে দিন’-এর প্রতিশ্রুতি না রাখার কথা মনে রেখে ভোট দেওয়ার জন্য আহ্বান জানিয়েছেন রাহুল।

২০১৪-র ‘মোদী হাওয়া’ যে এ বারও রয়েছে, তা এত দিন পর্যন্ত কোনও বিজেপি নেতাই দাবি করেননি। বরঞ্চ দেশের নানা অংশে প্রচারে যাওয়া নেতাদের মত ছিল, এ বারের ভোটে মানুষের মধ্যে তেমন তাপ-উত্তাপ নেই। কোথাও একটা তাগিদের অভাব। সেটা যেমন সরকার হঠানোর, তেমন এই সরকারকে ফিরিয়ে আনারও। কিন্তু কেন্দ্রীয় মন্ত্রী নির্মলা সীতারামনের দাবি, বিজেপি কর্মীরা ভোটের হার দেখে খুবই চাঙ্গা। সব কিছুই এনডিএ-র পক্ষে যাচ্ছে বলেই মনে হচ্ছে।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement